শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষিত

৬ বছরেও হয়নি জীবন বীমা গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল

বিবিএনিউজ.নেট   |   বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   943 বার পঠিত

৬ বছরেও হয়নি জীবন বীমা গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল

ছয় বছর আগে প্রবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বহু আলোচনা, সংযোজন-বিয়োজনের পর দু’বছর আগে চূড়ান্ত হয়েছে প্রবিধান। এরপর আরও দুবছর পেরিয়েছে, কিন্তু সেই প্রবিধান লোকচক্ষুর অন্তরালে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের ছয় বছর পরও জীবন বিমা কোম্পানির গ্রাহকের জন্য কোনো নিরাপত্তার তহবিল গড়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে কোনো জীবন বীমা কোম্পানি দেউলিয়া হলে কিংবা অন্য কোনো কারণে পলিসি গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য কোনো ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। ২০১৩ সালের ৭ মার্চ এক অনুষ্ঠানে জীবন বীমা গ্রাহকদের স্বার্থে বিশেষ তহবিল গড়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই বছরের শেষদিকে ‘লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল’ বিষয়ে প্রবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা, খসড়া প্রণয়ন, সংযোজন-বিয়োজন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষপদে পরিবর্তন ও লালফিতার দৌরাত্ম্য শেষে ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রবিধানের গেজেট প্রকাশ হয়।

প্রবিধানের তথ্যমতে, বিদ্যমান বীমা আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে জীবন বিমা গ্রাহকদের স্বার্থে ওই তহবিল গড়ে তোলা হবে। কোনো কারণে জীবন বিমা কোম্পানি দেউলিয়া হলে কিংবা গ্রাহকের আমানত ক্ষতির মুখে পড়লে ওই তহবিল থেকে গ্রাহককে বীমা দাবি বা প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এজন্য বিমা কোম্পানিগুলোর প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ওপর ‘লেভি’ হিসেবে অর্থ নিয়ে ওই তহবিল গড়ে তোলা হবে। কোম্পানিগুলোকে প্রতি বছরের জুনের মধ্যেই ‘লেভি’ পরিশোধ করতে হবে। ওই তহবিলে সন্তোষজনক পরিমাণ অর্থ জমা হওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা চাইলে ‘লেভি’ আদায় বন্ধ কিংবা আবারও পারবে।

রাহকদের স্বার্থরক্ষায় বিশেষ তহবিল গড়ে তোলা হবে। এজন্য এরই মধ্যে প্রবিধান তৈরি করা হয়েছে। প্রবিধান অনুযায়ী জীবন বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি ও বীমা খাতের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গেজেট প্রকাশের পর থেকেই প্রবিধান নিয়ে কারও কোনো আপত্তি আছে কি না জানার জন্য দায়িত্বশীলদের সঙ্গে মিটিংয়ের চেষ্টা করছি। কিন্তু সময়ের অভাবে মিটিং করা হয়নি। খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।’

এদিকে ২০১০ সালের বীমা আইনেও ‘লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল’ নামে একটি তহবিল গঠনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে লেভি হিসেবে আদায় করে সেই অর্থ ওই তহবিলে জমা করা হবে। ওই তহবিলে জমা করা অর্থ গ্রাহকদের আর্থিক নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হবে। তহবিলের অর্থ সর্বোচ্চ আয়ের জন্য বিনিয়োগ করার কথাও বলা হয়েছে।

প্রবিধানের তথ্যানুযায়ী, আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে ছয় সদস্যের ‘লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল’ পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে সরকার মনোনীত একজন কর্মকর্তা ও জীবন বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সদস্য হিসেবে থাকবেন। এছাড়া বীমা কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বিআইএ’র দুজন ও ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট থাকবেন। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আইডিআরএ’র একজন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। কোনো কোম্পানি দেউলিয়া বা অবসায়িত হলে অবসায়কের কাছ থেকে বিমা দাবির অর্থ পাওয়ার পর চুক্তি অনুযায়ী অবশিষ্ট অংশের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই তহবিলের অর্থের জন্য আবেদন করতে পারবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটি পরবর্তী এক বছরের মধ্যেই গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করবে।

জীবন বিমা কোম্পানির গ্রাহকদের জন্য নিরাপত্তা তহবিল গড়ে তোলার কথা। কিন্তু প্রবিধান প্রকাশের দুবছরেও এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। এখনও জীবন বীমা কোম্পানির গ্রাহকদের নিরাপত্তার জন্য কোনো তহবিল গড়ে তোলা হয়নি। কবে নাগাদ ওই তহবিল গড়ে তোলা হবে সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো তথ্যও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে প্রিমিয়ামের ওপর ‘লেভি’ তথা বাড়তি ব্যয় এড়াতে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোও এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তাগিদ দিচ্ছে না। তাই গেজেট প্রকাশের পরও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তব রূপ পাচ্ছে না। একইসঙ্গে জীবন বিমা কোম্পানির গ্রাহকদের স্বার্থও উপেক্ষিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩২টি কোম্পানি জীবন বীমা ব্যবসা করছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১২টি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বাকি কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায়িকভাবে চাপের মুখে রয়েছে। জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে জীবন বীমার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহও বাড়ছে না। তাই গ্রাহকের স্বার্থরক্ষায় বিশেষ তহবিল গড়ার বিষয়টি কয়েক বছর ধরেই আলোচিত হচ্ছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:০৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।