বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
খেলাপি ম্যাগপাই নিটওয়্যারকে বিশেষ সুবিধা

অগ্রণী ব্যাংকের উপর চটেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

  |   বুধবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   1249 বার পঠিত

অগ্রণী ব্যাংকের উপর চটেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ম্যাগপাই নিটওয়্যার লিমিটেডের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩১৫ কোটি টাকা। এ ঋণ পরিশোধে দীর্ঘ মেয়াদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। যদিও এ সুবিধা দিতে আপত্তি তুলেছিলেন অগ্রণী ব্যাংকে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষক। তা সত্ত্বেও বাড়তি সুবিধা দেওয়ায় চটেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ঋণ পরিশোধে অক্ষম প্রতিষ্ঠানটিকে এখন নতুন করে কেন এই সুবিধা দেওয়া হলো, তা খতিয়ে দেখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এজন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সুপারিশে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টকে (এফআইসিএসডি) সংশ্লিষ্ট ঋণ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০২ সালে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত ম্যাগপাই গ্রুপের পোশাক প্রতিষ্ঠান ম্যাগপাই নিটওয়্যার লিমিটেডকে মতিঝিলের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে প্রথম ঋণ মঞ্জুর করে অগ্রণী ব্যাংক। এরপর থেকে ওই গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৩০৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু পরিশোধ সূচি অনুযায়ী গ্রাহক ঋণটি পরিশোধ করতে না পারায় তা পুনর্বিন্যাস করা হয়। তাছাড়া তহবিল খরচ অনুযায়ী, সুদহার নির্ধারণ এবং ঋণের সুদ ব্লকড হিসেবে স্থানান্তরের সুবিধা দেওয়া হলেও ২০১৭ সালে পর্যন্ত ঋণের অর্থ নিয়মিত পরিশোধ করতে পারেনি ম্যাগপাই নিটওয়্যার। তখন সুদাসল বেড়ে ঋণের পরিমাণ ৩১৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের ৫৯১তম সভায় ম্যাগপাই নিটওয়্যারের ঋণটি আবারও পুনর্বিন্যাস করার প্রস্তাব করা হয়। ওই সভায় পর্ষদে উপস্থাপিত স্মারকে বলা হয়, ম্যাগপাই নিটওয়্যার ২০১৭ সালে ১৫৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা রফতানি থেকে আয় করেছে। বিষয়টি নজরে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষকের। পরে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের নজরেও আসে। তাদের কাছে বিষয়টি এমনভাবে প্রতীয়মান হয় যে, গ্রাহক ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণের অর্থ পরিশোধ করছে না। অথবা গ্রাহকের রফতানি আয়ের তথ্য-উপাত্ত প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সক্ষমতার প্রকৃত চিত্র প্রমাণ করে না। অর্থাৎ এখানে ভুয়া নথিপত্র উপস্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সক্ষমতা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে।

এত কিছুর পরও গত বছরের সেপ্টেম্বরে অগ্রণী ব্যাংক পর্ষদ সভায় ম্যাগপাই নিটওয়্যারের চারটি মেয়াদি ঋণের প্রিন্সিপাল অ্যামাউন্ট বা আসল তিন মাসের কিস্তিতে বছরে মোট ২১ কোটি টাকা করে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত পরিশোধ করার সুযোগ দেয়। অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধের জন্য ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়ে ঋণটি পুনর্বিন্যাসের অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ঋণে আসলের পরিমাণ ১৬৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

এছাড়া সুদ বাবদ প্রায় ১৪৭ কোটি টাকা ব্লকড হিসাবে রেখে সাত শতাংশ সুদে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত কেবল সুদের অর্থ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আদায় এবং অবশিষ্ট দায় ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধের জন্য কিস্তি পুনর্বিন্যাস করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম আপত্তি উত্থাপন করেন। কিন্তু ওই আপত্তি আমলে না নিয়ে ঋণটি পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এমনকি পর্ষদের ওই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে এ ধরনের পুনর্বিন্যাসকরণ ও সুদের হার কমানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হলেও পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত ৫৯২তম সভায় ওই শর্তটি রহিত করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের সাম্প্রতিক এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সামগ্রিক বিবেচনায় যথাসময়ে প্রকল্প স্থাপনে ব্যর্থ, উৎপাদনে অক্ষম, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাহীন একটি প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংকে গুরুতর অনিয়ম সংগঠিত হয়েছে; যা ব্যাংক এবং আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী।
বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নজরে আনেন অগ্রণী ব্যাংকে নিযুক্ত পর্যবেক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম। এর পরপরই জরুরি ভিত্তিতে ম্যাগপাই নিটওয়্যারকে ঋণ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এফআইসিএসডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল শেয়ার বিজকে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের ওই পর্যবেক্ষক।

যদিও আলোচ্য পর্ষদ সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক কোনো আপত্তি তোলেননি বলে দাবি করেছেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। তিনি বলেন, ‘পর্ষদে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত না হলে আমরা কোনো প্রস্তাব অনুমোদন করি না। তাছাড়া পর্যবেক্ষকের আপত্তি থাকলে সেটা আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখি। তারপরও যেহেতু এ বিষয়ে কথা উঠেছে, সেহেতু এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো জবাব চাইলে আমরা তা দিতে প্রস্তুত।’

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ডলারের দরের স্থিতিশীলতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ম্যাগপাই নিটওয়্যারকে আমরা এই সুবিধা দিয়েছি।’ বর্তমান পর্ষদের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান পর্ষদে বেশ কয়েকজন দক্ষ মুখ রয়েছে। ব্যাংকের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেবেন না।’

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:১১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।