| শনিবার, ২৫ মে ২০২৪ | প্রিন্ট | 102 বার পঠিত
বীমা খাতের বহু প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও এ শিল্পের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের ভূমিকা প্রশংসনীয়। কিন্তু এ খাতের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বীমা দাবি নিষ্পত্তি ও সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের আপামর জনগনের মাঝে বীমার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা। বিপথগামী কতিপয় সিইও’র অদক্ষতা আইডিআরএ’র অগ্রযাত্রা ব্যাহত এবং বীমা আইন, সার্কুলার-নির্দেশনা অমান্য করছে।
তারা গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করে ববং অনুমোদনহীন বীমা পরিকল্পের মাধ্যমে সংগৃহীত প্রিমিয়ামের টাকা তছরূপ করে এ শিল্পের অগ্রযাত্রা ক্রমাগত পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহজামাল হাওলাদার তাদের অন্যতম। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে পেইডআপ ক্যাপিটালের অর্থ ভাঙা, ম্যানেজমেন্ট কস্ট এর নামে ২১ কোটি টাকা লোপাট, অডিটরের রির্পোট মোতাবেক ক্যাশ ইন হ্যান্ডের টাকা গড়মিল করে ৫ কোটি টাকার তহবিল তছরূপ, সিঙ্গেল প্রিমিয়ামের নামে অনুমোদনহীন বীমা পরিকল্প বিক্রির মাধ্যমে ২৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে মেয়াদী বীমার ধাপে ফেলে পুরো প্রিমিয়ামের টাকা খরচ করে দাবি পরিশোধে চরম ঝুকি সৃস্টিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানিতে চরম তারল্য সংকট চললেও বীমা উন্নয়ন সভার নামের কোম্পানির তহবিল থেকে ৬৭ লাখ টাকা বেহিসেবি খরচ করেছেন। শুধু তাই নয় কর্তৃপক্ষের নিকট অসত্য তথ্য প্রেরণসহ নৈতিক স্খলনজনিত বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে শাহজামাল হাওলাদের বিরুদ্ধে।
আইন পরিপালনে ব্যর্থতা ও লঙ্ঘনজনিত কর্মকান্ডের শাস্তিস্বরূপ বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ১৩০, উপধারা (ক) ও (খ) অনুযায়ী প্রতিটি ব্যর্থতার জন্য অনধিক ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং ওই লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। এছাড়া ধারা ১৩১ মোতাবেক দলিল, বিবরনী, হিসাব, রিটার্ন, ইত্যাদিতে মিথ্যা তথ্য প্রদানের শাস্তি হিসাবে অনধিক ৩ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন অথবা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, শাহজামাল হাওলাদারের এসব অপরাধ আমলে নিয়ে উপরোক্ত আইনে তাকে জরিমানা করা বা শাস্তির আওতায় আনা হলে বীমা খাতে শৃঙ্খলায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও চলতি মাসের ৮ তারিখে সাবেক সিইও শাহজামাল হাওলাদারের ৩ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ৮০ ও বীমা কোম্পানি (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ) প্রবিধানমালা ২০১২ এর বিধি ৪ এর উপবিধি (৫) লঙ্ঘন করে তিনি এখনও কি করে সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারা আরও বলেন, এনআরবি ইসলামিক লাইফের নির্বাহী কর্মকর্তা শাহজামাল হাওলাদারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং নতুন করে অনুমোদন না পাওয়ায় উক্ত পদে তার দায়িত্ব পালনে আর কোনো সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় সার্কুলার মোতাবেক পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে উক্ত শূন্য পদে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্ন পদে নিয়োজিত যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে তার বর্তমান দায়িত্বের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিতে পারবেন, তবে এর মেয়াদ ৩ মাসের অধিক হবে না।
কর্তৃপক্ষের সার্কুলার (নং-জিএডি ১৩/২০১৫) এর নির্দেশনা উপেক্ষা করে পরিচালনা পর্ষদ ভারপ্রাপ্ত সিইও নিয়োগ না করে এখন পর্যন্ত শাহজামাল হাওলাদারকে দায়িত্বে বহাল রেখেছে। এতে বীমা কোম্পানির কার্যক্রম, বীমাগ্রহকদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে। জনস্বার্থে আইডিআরএ এসব লঙ্ঘনের দায়ে বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ৫০ মোতাবেক পর্ষদকে তলব করে ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। ধারা ৫১ মোতাবেক পর্ষদের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হলে আইডিআরএ ধারা ৯৫ মোতাবেক পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ইতিপূর্বে শাহজামাল হাওলাদারের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতিতে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর অভিযোগ তদন্তে আইডিআরএ কর্তৃক কমিটি গঠন করা হয়। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে এমন কী অন্তর্নিহিত স্বার্থ রয়েছে যার কারণে আইন লঙ্ঘন করে শাহজামাল হাওলাদারকে সিইও’র দায়িত্বে বহাল রেখে কোম্পানিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে পরিচালনা পর্ষদ।
এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব সৈয়দ আব্দুল আজিজ ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে জানান, আইন লঙ্ঘন বিষয়টি তিনি শাহজামাল হাওলাদারকে বারংবার অবহিত করেছেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি শাহজামাল হাওলাদার স্যার বিচক্ষণতার সাথে আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি অনুধাবন করবেন’।
Posted ১১:০২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৫ মে ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy