নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১১ জুন ২০২২ | প্রিন্ট | 159 বার পঠিত
পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা বহাল রাখার প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ব্রোকারদের উৎসে কর কমানো, এক ব্যক্তি কোম্পানির কর হার কমানো, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ১০ শতাংশ করা, সিএসইর করপোরেট কর হার কমানোসহ আরও কিছু প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শনিবার (১১ জুন) দুপুরে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে এ অনুরোধ জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিমসহ প্রতিষ্ঠানটির অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিএসই’র কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা রহিত করা হয়েছে। এ সুবিধা আগামী বছর পর্যন্ত বহাল রাখার জন্য আমরা বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। এতে পুঁজিবাজার যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনই সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি অর্থপাচারও কমবে।
তারা আরও বলেন, গত অর্থবছরে বাজেটে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো বাজারবান্ধব ছিল। এ বছর আমাদের চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, বিদ্যমান বিধানসমূহ যেন অপরিবর্তিত থাকে। আমরা আনন্দিত যে, প্রায় সকল বিধান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের লেনদেনের ওপর বিদ্যমান উৎসে কর ০.০১৫ শতাংশ নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছিল, যা বাজেটে বিবেচিত হয়নি। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পরিচালন খরচ বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে ব্রোকারেজ সেবার কমিশন অত্যন্ত কমে আসায় এই কর্তনকৃত অর্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর করদায় হিসেবে অধিক হয়। তাই, উৎসে কর হার হ্রাসে আমাদের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
অর্থনীতির অধিকতর আনুষ্ঠানিকীকরণ এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির প্রতিষ্ঠা উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রত্যাশিত বাজেটে এক ব্যক্তি কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আগত তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে, ১০ শতাংশ বা তার কম শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তরকারী লিস্টেড কোম্পানির কর হার না কমিয়ে পূর্বের হার অর্থাৎ ২২.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে, অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের কর হার হ্রাসের এই ঘোষণাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে, পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা যেতে পারে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান খুবই কম। তাই, ভালো কোম্পানি এই বাজারে আসতে আগ্রহী হয় না। কারণ, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে নানা ধরনের কমপ্লায়েন্স পরিপালন করতে হয়। এতে কোম্পানিগুলোকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফলে, কর হার রেয়াতের প্রকৃত সুবিধা ভোগ করা যায় না।
অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করহার কমিয়ে তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিগুলোর সাথে কর হারের ব্যবধান বাড়ানো হলে কর সুবিধা রেয়াতের জন্য ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হবে। এতে একদিকে পুঁজিবাজার সমৃদ্ধ হবে, অন্যদিকে লেনদেন বাড়লে তা থেকে বাড়তি কর আদায় হবে। তাছাড়া, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও জাবাদিহিতা বাড়ে। নানা সংস্থার তদারকিতে থাকতে হয় বিধায় কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ কমে আসে। তাতে সরকারের কর সংগ্রহ নিশ্চিত হয়।
কৌশলী বিনিয়োগকারী আকর্ষণ করাসহ স্টক এক্সচেঞ্জের কারিগরি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মূলধন পুনঃবিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও দক্ষতা এবং দীর্ঘমেয়াদে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে সিএসই এর আর্থিক সক্ষমতা প্রয়োজন হলেও বর্তমানে এক্সচেঞ্জসমূহের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া, সিএসই বাংলাদেশে প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এটি গঠন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কারিগরি সহায়তা, আইন-কানুন প্রনয়ন, প্রশিক্ষন প্রদান ও গন সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে। এ বিষয়সমূহ বিবেচনা করে, সিএসইর জন্য বর্তমানে বিদ্যমান প্রযোজ্য করপোরেট কর হার ৩০ শতাংশ রয়েছে। যা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত শূন্য হারে নির্ধারণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রির কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হলেও ঘোষিত বাজেটে এর কোনো পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়নি। অর্থায়নের উৎস হিসেবে শেয়ার অফলোড করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এবং এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো কর ছাড় থাকতে পারে।
সাধারণত স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলো প্রাইভেট হিসেবে নিবন্ধিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কাঠামো দুর্বল হওয়ায় তেমন রাজস্ব আদায় হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এসএমই বোর্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিসমূহকে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করছে। আমরা তালিকাভুক্ত এসএমই কোম্পানিসমূহের জন্য প্রথম ৩ বছর শূন্য হারে এবং পরবর্তীতে ১৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছিলাম, যা সুবিবেচিত হয়নি। পুঁজিবাজারে এসএমই বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী তালিকাভুক্ত হলে অধিক সংখ্যক কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড থেকে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ বাবদ আয় থেকে কেটে রাখা করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব করছি । নিয়ম অনুসারে প্রতিটি কোম্পানিকে তার আয় এর ওপর কর দিতে হয়। এর পর নিট মুনাফা নির্ধারিত হয়। এই মুনাফা থেকে কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করলে এবং এই লভ্যাংশ বিতরণের সময় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে আগ্রিম কর কেটে দিতে হয়। পরবর্তী সময় আবার লভ্যাংশ গ্রহীতার ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্নের সময় তার ওপর প্রযোজ্য হারে কর প্রদান করতে হয়। এভাবে কর প্রদান দ্বৈত কর নীতির আওতায় পড়ে। এক্ষেত্রে অগ্রিম করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়কর মুক্ত। এই করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা যেতে পারে। সিএসই মনে করে, মুদ্রাস্ফীতির কারণে করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের এই সীমা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।
মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়কর মুক্ত। এই মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশকে সম্পূর্ণ আয়কর মুক্ত রাখা যেতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে প্রসারিত হতে উৎসাহিত করার জন্য এ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।
Posted ৭:৪৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১১ জুন ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy