| শনিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 960 বার পঠিত
সম্প্রতি বড়পুকুরিয়া কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকায় তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে এক লাখ টন কয়লা আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কয়লা উত্তোলন শুরু হওয়ায় তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজনে প্রতি বছর প্রায় আট লাখ টন কয়লা আমদানি করতে হবে। কয়লা আমদানি করতে হলে মোংলাবন্দর ও রেলওয়ের সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সভায় জানানো হয়, বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ ক্ষমতায় চালু রাখতে হলে দীর্ঘ মেয়াদে প্রতি বছর প্রায় আট লাখ টন কয়লা আমদানি করতে হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার স্বার্থে আমদানি করা কয়লা পরিবহনের জন্য কয়েকটি রুটের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। তবে কয়লা পরিবহনের জন্য রেলপথ ব্যবহার অধিক উপযোগী এবং অর্থ সাশ্রয়ী হবে।
আরও বলা হয়, কয়লা পরিবহনে রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ না নিলে চাহিদা অনুযায়ী কয়লা পরিবহন করা সম্ভব হবে না। তবে রেলওয়ে কয়লা পরিবহনে আগ্রহী। সে জন্য রেলওয়ে ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) সমঝোতা সই প্রয়োজন।
বিউবো চেয়ারম্যান জানান, উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ চাহিদা বিশেষ করে মেঘাভারের চাহিদা পূরণের জন্য বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার বিকল্প নেই। কয়লা স্বল্পতার কারণে বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী কয়লাখনি থেকে কয়লা না পাওয়ায় ভবিষ্যতে দীর্ঘ মেয়াদে কয়লা আমদানির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। রেলপথ ব্যবহারের মাধ্যমে মোংলা-নোয়াপাড়া বড়পুকুরিয়া রুটটি অধিক উপযোগী বলে মনে করেন তিনি।
সভায় পেট্রোবাংলার পরিচালক ও বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আগামী তিন বছর কয়লাখনি থেকে বছরে সর্বোচ্চ সাত থেকে সাত দশমিক দুই টন হারে কয়লা উত্তোলন সম্ভব হবে।
সভায় এনবিআর সদস্য বলেন, কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, পাঁচ শতাংশ আয়কর ও পাঁচ শতাংশ এটিভি পরিশোধ করতে হয়। সরকার চাইলে এনবিআর তা অব্যাহতি দিতে পারে।
মোংলা বন্দরের একজন সদস্য জানান, বর্তমানে মোংলা বন্দরের ড্রাফট আট মিটার থেকে সাড়ে আট মিটার। যেখানে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ আনা সম্ভব। এছাড়া মোংলার আউটারে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৬ মাস বেশি ধারণ ক্ষমতার জাহাজ আনা সম্ভব হলেও অন্য সময় সম্ভব না। তবে মোংলা বন্দরের ড্রেজিং কাজের একটি চুক্তি প্রক্রিয়াধীন; যা আগামী দেড় বছরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। এতে ড্রাফট সাড়ে ১০ থেকে ১১ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, জাতীয় স্বার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদে কয়লা আমদানির বিকল্প নেই। আমদানি করা কয়লা পরিবহনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। ইতিপূর্বে প্রস্তাবিত এক লাখ টন কয়লা আমদানির পরিবর্তে বিউবো দীর্ঘ মেয়াদে (৩ বছর) কয়লা আমদানির দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ করা প্রয়োজন। কয়লা পরিবহনের ক্ষেত্রে রেলপথ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা প্রয়োজন।
সভায় বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর আট লাখ টন হিসেবে আগামী তিন বছর কয়লা আমদানির জন্য দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া এক লাখ টন কয়লা আমদানির কার্যক্রম স্থগিত, মোংলা-নোয়াপাড়া-বড়পুকুরিয়া রুট ব্যবহার করে কয়লা পরিবহনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য রেলওয়ে ও নৌ-পথ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ গ্রহণ, সমঝোতা সই, দীর্ঘ মেয়াদে আমদানি করা কয়লা রেলপথে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরিবহনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিজস্ব কোল ইয়ার্ড প্রস্তুত করা, রেলওয়ে সাইডিং এর ব্যবস্থা নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় হ্যান্ডেলিং ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত হয়।
সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫২৫ মেগাওয়াটের তিনটি ইউনিট রয়েছে। এ জন্য প্রতিদিন কয়লার প্রয়োজন সাড়ে পাঁচ হাজার টন। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের উৎপাদন হচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার টন। এছাড়া খনির যে স্তর থেকে বর্তমানে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে সেখান থেকে প্রতিদিন তিন হাজার টনের বেশি কয়লা পাওয়াও সম্ভব নয়। এতে প্রতিদিন ঘাটতি থাকে আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টন। এর মধ্যে আবার বছরে শিফট পরিবর্তনের জন্য খনির কয়লা উত্তোলন তিন মাস বন্ধ থাকে। সব মিলিয়ে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদার সঙ্গে বাৎসরিক কয়লা উত্তোলনের যে ঘাটতি তা পূরণে আমদানির কোনো বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে উত্তোলন করা কয়লার মধ্যে এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে যায়। এ কারণে গত ১৯ জুলাই বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহম্মদ ও কোম্পানির সচিব (জিএম প্রশাসন) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে প্রত্যাহার করে নেয় খনিটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। একই কারণে মহাব্যবস্থাপক (মাইনিং অ্যান্ড অপারেশন) এটিএম নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টার) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে এ বিষয়ে মামলাও করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
যদিও খনি কর্মকর্তাদের দাবি, ‘এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা গায়েব নয়, সিস্টেম লস।’ তাদের দাবি গত ২০০৭ সাল থেকে খনিটিতে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত খনি থেকে এক কোটি ১০ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা সিস্টেম লস হয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষ কয়লা সরবরাহ করতে না পারায় গত ২২ জুলাই বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ করা হয়। বিদ্যুৎ সংকটে পড়ে দিনাজপুরসহ দেশের উত্তারাঞ্চলের আট জেলা। ৫২ দিন পর ১৪ সেপ্টেম্বর উৎপাদন শুরু হয়।
সূত্র : শেয়ারবিজ।
Posted ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed