শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

আমানতে সুদের হার কমলেও ১০ বিপদ

বিবিএনিউজ.নেট   |   শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০   |   প্রিন্ট   |   956 বার পঠিত

আমানতে সুদের হার কমলেও ১০ বিপদ

দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১ এপ্রিল থেকে ব্যবসায়ীদের সুদের হার কমিয়ে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ সুদহার বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদও আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে আমানতের সুদহার কমে গেলে ব্যাংকের আমানত কমে যাওয়াসহ ১০ ধরনের নতুন বিপদের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এসব আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় শতাংশের বেশি সুদে কোনও ব্যাংক আমানত গ্রহণ করবে না। মেয়াদি স্কিম ছাড়া সব ধরনের আমানতের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। তবে যেসব আমানতের মেয়াদ শেষ হবে, সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত অর্থাৎ ছয় শতাংশ সুদ কার্যকর হবে।

জানা গেছে, যে ব্যাংক চলতি মাসে (জানুয়ারিতে) ১২ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করেছে, সেই ব্যাংকও ছয় শতাংশের বেশি সুদে আমানত গ্রহণ করবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ১১ থেকে ১৩ শতাংশে সুদে আমানত নিচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমানত কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও এই মুহূর্তে আমানতের সুদ কমানোর কোনও বিকল্প নেই। কারণ, আগামী ১ এপ্রিল থেকে ব্যবসায়ীদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হবে। এটি বাস্তবায়ন করতে ব্যাংকগুলোর আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ফেব্রম্নয়ারি থেকে ছয় শতাংশ সুদে আমানত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এদিকে আমানতে সুদহার কমে গেলে এতদিন ব্যাংকে এক লাখ টাকা আমানত রেখে যিনি মাসে এক হাজারের মতো টাকা পেয়েছেন, তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে এক লাখ টাকা আমানত রাখলে পাবেন ৫০০ টাকার মতো।

এরআগে, একাধিকবার ব্যবসায়ীর জন্য সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে ব্যাংকগুলোকে আগাম প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করতে সরকারের পক্ষ থেকেও নির্দেশনা রয়েছে।

এসব বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হলে এখন থেকেই আমানতের সুদ ৭ শতাংশে আনতে হবে। তবে এই মুহূর্তে আমানতের সুদ কমে গেলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাংকের আমানতকারীরা। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে পুরো অর্থনীতিতে।

তিনি আরও বলেন, আমানতের সুদহার কমে গেলে ১০টি বিপদ আসতে পারে। প্রথমত. আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেবেন। এতে এক. ব্যাংক খাতে টাকার সংকট ভয়াবহ রূপ নেবে। দুই. আমানত কমে গেলে ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তাদের ঋণই দিতে পারবে না। তিন. ঋণ দিতে না পারলে সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে। বেসরকারি খাত আরও স্থবির হবে। চার. ব্যাংকের আমানতের সুদহার কমে গেলে কিছু টাকা সঞ্চয়পত্রে যাবে। এতে সরকারের ব্যয় বাড়বে। পাঁচ. আমানতের সুদ কমে গেলে অধিকাংশই চলে যাবে বিভিন্ন হায় হায় কোম্পানি তথা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায়। ছয়. আর ঝুঁকিপূর্ণ কারবারের সঙ্গে যুক্তরা এই টাকা ডলারে রূপান্তর করে হুন্ডিতে বিদেশে পাচার করবে। সাত. এমন পরিস্থিতিতে হুন্ডিতে ডলারের মূল্যও বেড়ে যাবে। আট. ডলারের মূল্য বেড়ে গেলে ব্যাংক ব্যবস্থায় রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে আসবে। কারণ, ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীরা পায় ৮৪ টাকা। অথচ হুন্ডিতে পাঠালে পায় ৮৮ টাকা। ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েও কাজ হবে না। আগামীতে রেমিট্যান্স কমে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, নয় নম্বর বিপদ হলো- খেলাপি ঋণ আদায় না করে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে গিয়ে ব্যাংক খাতে অস্থিরতা আরও বাড়বে। এতে পুরো অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। আর দশ নম্বর বিপদ হলো্ত৯ শতাংশ সুদ বাধ্যতামূলক হলে ব্যাংক এসএমই খাতে হয়তো ঋণ দেওয়াই বন্ধ করে দেবে। এতে এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা ঋণ না পেলে এই খাতেও অস্থিরতা দেখা দেবে।

ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ব্যাংকের এমডিরাও। তারা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, বড় ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর সম্ভব হলেও এসএমই ঋণে তা কার্যকর করা কঠিন হবে। ফলে এসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাবে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:১১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।