আদম মালেক | ০৬ ডিসেম্বর ২০২০ | ২:৩৪ অপরাহ্ণ
লাগামহীনভাবে বাড়ছে ভোজ্যতেলের বাজার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার মিলগেটে খোলা ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও মিল-মালিকরা তা মানছেন না। উপরন্তু নতুন করে তেলের দাম বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিচ্ছে ভোজ্যতেল আমদানিকারক সমিতি। দাম বৃদ্ধিতে মন্ত্রণালয়েরও সবুজ সংকেত রয়েছে। এজন্য আরো উত্তপ্ত হচ্ছে ভোজ্যতেলের বাজার।
সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধির আবেদন সম্পর্কে জানতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, মিল-মালিকরা নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আগেও দিয়েছিল। আমরা সবাইকে নিয়ে বসবো, দেখি কী করা যায়। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি, সরবরাহ ঘাটতিসহ নানা অজুহাতে অস্থির হয়ে উঠেছে ভোজ্যতেলের বাজার। মিলগেট, পাইকারি ও খুচরা বাজারে তেলের দাম বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। করোনা মহামারীর সময়ে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় নিত্যপণ্য ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে ভোক্তাসাধারণ।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজার প্রতিবেদনে বলা হয়, সপ্তাহের ব্যবধানে লিটারপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে খোলা সয়াবিন তেল গতকাল বিক্রি হয় ১০০-১০৫ টাকা। এক মাস আগেও এটি ছিল ৯৫-৯৭ টাকা। আর গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮০-৮৫ টাকা। অর্থাৎ মাস ব্যবধানে ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং বছর ব্যবধানে ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ দাম বেড়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে লিটারপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে গতকাল বোতলজাত সয়াবিন তেল ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়। এক মাস আগেও এটি ১০০-১১০ এবং গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯৫-১১০ টাকা। অর্থাৎ মাস ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং বছর ব্যবধানে ১২ দশমিক ২০ শতাংশ দাম বেড়েছে।
গত অক্টোবর মাসে ভোজ্যতেলের দাম অস্বাভাবিক বাড়তে শুরু করলে পাইকারি ব্যবসায়ী, মিল-মালিক ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বৈঠকে মিল-মালিকরা তেলের দাম দুই টাকা কমিয়ে সয়াবিন ৯০ টাকা ও পাম তেল ৮০ টাকা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে লিটার বা কেজি নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে দুটিতেই বিদ্যমান দাম থেকে দুই টাকা কমানোর কথা জানায় মন্ত্রণালয়। মিল-মালিকরা বলছেন, তারা এই দাম বাস্তবায়ন করেছেন। এরপরও দাম কমেনি, বেড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ নভেম্বর আবার বৈঠক ডাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
আমদানিকারকরা বলছেন, ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে সংকট শুরু হয় মূলত নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের পর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ আইন কার্যকর হলে আমদানিকৃত ভোজ্যতেলের ওপর তিন স্তরের ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়। নতুন আইন অনুযায়ী অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের আমদানি পর্যায়ে বর্তমানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়াও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। উৎপাদন পর্যায়েও মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এ ছাড়া ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ অথবা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করা হয়। এতে লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ৩ টাকা বাড়ে।
সিটি গ্রæপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আমরা বারবার আগের মতো এক স্তরে ভ্যাটের কথা বলে আসছি। প্রতি টনে আমরা ১৫ হাজার টাকা ভ্যাট দিতে চাই। এখন যেভাবে চলছে, তাতে বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে ভ্যাটও বাড়বে। আর ভ্যাট বাড়লে দামে প্রভাব পড়বে। এজন্য আগেই অনুমোদন নেওয়া থাকায় আমরা মিল পর্যায়ে দাম বাড়িয়েছি। আর নতুন করে লিটারপ্রতি ১৩০ টাকা দাম নির্ধারণের জন্য চিঠি দিয়েছি। তবে বিদ্যমান ভ্যাটনীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ভোজ্যতেল আমদানি সমিতির একাংশ। তারা চাইছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর ভ্যাট হার নির্ধারিত থাকুক। এতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আপনা-আপনিই দাম বাড়বে-কমবে। কেবল অতিরিক্ত দাম বাড়লেই সরকারের দ্বারস্থ হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২:৩৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed