বিবিএনিউজ.নেট | রবিবার, ১৪ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট | 702 বার পঠিত
দেশের রফতানি খাতের সবচেয়ে বড় গন্তব্য ইউরোপ। মোট রফতানির ৫০ শতাংশের বেশি হয় মহাদেশটির দেশগুলোয়। তবে এ অঞ্চলে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি থাকলেও তা এখন নিম্নমুখী। বিপরীতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি আসছে সম্ভাবনাময় অপ্রচলিত বাজার চীন ও ভারত থেকে। পাশাপাশি একক দেশ হিসেবে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রেও প্রবৃদ্ধি আরো শক্তিশালী হচ্ছে। রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ইপিবির সর্বশেষ হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবছর ইউরোপের ২৭টি দেশে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ১৩৩ কোটি ৪৫ লাখ ৫ হাজার ৬৯৩ ডলারের পণ্য রফতানি হয়। প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ইউরোপে রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৭৪১ কোটি ৮ লাখ ৭১ হাজার ডলারের পণ্য, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি। যদিও গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১২ শতাংশ। বিপরীতে সম্ভাবনাময় বাজার চীনে চলতি অর্থবছরের নয় মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশ।
বাংলাদেশের রফতানির একক বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে দেশটিতে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ২ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছর রফতানিতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ।
রফতানি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপের বাজার থেকে গত অর্থবছর বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্রয়াদেশ পায়। সবচেয়ে বেশি ক্রয়াদেশ আসে জার্মানি থেকে। অনেক বেশি ক্রয়াদেশ দেয়ায় জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোয় এখনো পণ্যের মজুদ রয়ে গেছে। এ মজুদ শেষ করতেই ক্রয়াদেশের গতিতে লাগাম টেনেছে ইউরোপের দেশগুলো। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি বাড়ার কারণ চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ। চীন ও ভারতের বাজার বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় হলেও দেশ দুটিতে রফতানির পরিমাণ এখনো নগণ্য, যদিও প্রবৃদ্ধির হিসাবে বেশি দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ইউরোপের বাজারে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে বটে, তবে তা এখনো দুশ্চিন্তার কারণ হয়নি। মহাদেশটি থেকে গত অর্থবছরে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ পাওয়া যায়। সে মজুদ এখনো রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির কারণ মূলত চীনের সঙ্গে দেশটির টানাপড়েন। চীন ঘিরে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে মার্কিন ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক বেশি কিনছে। আর চীন ও ভারতে রফতানি প্রবৃদ্ধি নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত হওয়ার অবস্থা এখনো আসেনি। এ বাজারগুলো সম্ভাবনাময় হলেও রফতানির পরিমাণ খুবই কম। চীনের বাজারে প্রবৃদ্ধি মূলত আগের খারাপ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার ফল। আর ভারতের বাজারে টেকসই রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে আমাদের এখনো অনেক দূর যেতে হবে।
রফতানি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপের অর্থনীতির গতি হারানোর পূর্বাভাস রয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে অঞ্চলটিতে বাংলাদেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি কমলেও তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার মতো সময় আসেনি। এছাড়া চীন ও ভারতে রফতানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে অনেক বেশি মনোযোগী হতে হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চীনে আমাদের রফতানি কম। রফতানি ১ টাকা থেকে ২ টাকা হলেই শতভাগ বাড়ছে। এজন্যই চীনে প্রবৃদ্ধি আমলে নেয়ার মতো কিছু নয়। আর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অবস্থা আগের চেয়ে ভালো, ফলে প্রবৃদ্ধিও ভালো। ইউরোপের অর্থনীতিতে শ্লথতা আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সে কারণে আমরা সরকারের কাছে ৫ শতাংশ প্রণোদনার দাবি জানিয়েছি। মূল্য কমানোর চাপের পাশাপাশি শ্লথ অর্থনীতি মোকাবেলা করে শিল্প টিকিয়ে রাখতেই এ দাবি জানিয়েছি আমরা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ইউরোপে রফতানি কমার প্রসঙ্গে বলেন, ইউরোপের বাজারে এখন যে প্রবৃদ্ধির হার তা ইতিবাচক। কারণ গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্রাতিরিক্ত। কাজেই গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হারের সঙ্গে তুলনা করলে তা যথাযথ হবে না। বর্তমানে ইউরোপের শ্লথ অর্থনীতি সত্ত্বেও যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তা ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে হবে।
চীন ও ভারতে রফতানি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আবদুর রাজ্জাক বলেন, চীনের বাজারের রফতানিও আগের খারাপ অবস্থা কাটিয়ে উঠেছে। ভারতে বর্তমানে পোশাক রফতানি ভালো হচ্ছে। এর কারণ হলো দেশটির শুল্ক ব্যবস্থা সম্পর্কে রফতানিকারকদের ধারণা আরো স্বচ্ছ হয়েছে।
রফতানি খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের রফতানি খাতের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক। মোট রফতানিতে পণ্যটির অবদান ৮৪ শতাংশ। সাম্প্রতিক কিছু দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক খাতে গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ধরে রাখতেই হিমশিম খেতে হচ্ছিল ব্যবসায়ীদের। এখন সে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছেন রফতানিকারকরা। তবে ইউরোপের অর্থনীতিতে শ্লথতার কিছু প্রভাব সামনের দিনগুলোয়ও থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে নতুন বাজারে রফতানি বাড়াতে চাইলে পণ্যে বৈচিত্র্যও আনতে হবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, ইউরোপের অর্থনীতি পতনমুখী; ব্রেক্সিট নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এগুলোই রফতানির গতি হারানোর মূল কারণ। আবার চীন-মার্কিন বাণিজ্য উত্তেজনা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এত কিছুর পরও বাংলাদেশের রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ প্রবৃদ্ধির কারণ রফতানিকারকরা অনেক কম মূল্য দিয়ে হলেও রফতানি সচল রেখেছেন। এটা ছাড়া উপায়ও নেই। অন্যান্য খাত কমপ্লায়েন্স সমস্যার কারণে প্রবৃদ্ধি দেখতে পারছে না। শুধু পোশাক খাতের ওপর নির্ভরতাই আমাদের উদ্বেগের প্রধান কারণ।
Posted ৫:১২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৪ এপ্রিল ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed