শুক্রবার ৮ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
মহামারি থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া

ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ২৫ মে ২০২০   |   প্রিন্ট   |   396 বার পঠিত

ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি নেই

বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে প্রতিদিনই মানুষ করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯ ) আক্রান্ত হচ্ছে । হাজার হাজার মানুষ মারাও যাচ্ছে। মানুষ মধ্যে এখন আতঙ্কের এক নাম করোনাভাইরাস। তাই প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ববাসীকে রক্ষায় ঈদের জামাতে বিশেষ দোয়া করা হয়েছে।

সোমবার বায়তুল মোকাররম মসজিদের ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির মহামারি থেকে মুক্তিসহ কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত হয়।

সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে চতুর্থ জামাত শেষে পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম মোনাজাতে বলেন, পুরো বিশ্ব আজ অবরুদ্ধ হয়ে আছে। হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। হে আল্লাহ এই মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের সবাইকে শাহদাতারের মর্যাদা দিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করার পাশাপাশি দেশসহ পুরো বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের রোগ মুক্তি কামনা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়।

এদিকে মসজিদে নামাজে নানা বিধিনিষেধ থাকলেও বায়তুল মোকাররমে ঈদের জামাতে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি উপস্থিত হয়েছিলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই সারিবদ্ধ হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন তারা। তবে আগের মতো কুশল বিনিময় ও কোলাকুলি করতে দেখা যায়নি কাউকে।

এবার করোনা ভাইরাসের কারণে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ হয়নি। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত হয় সকাল ৭টায়। ঈদের প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। ৮টায় দ্বিতীয় জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী।

তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় হয়। এই জামাতের ইমামতি করেন পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। ঈদের দিন সকাল ১০টায় চতুর্থ জামাতে ইমামতি করেন পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ুর রহমান খান।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ পড়তে হয়েছে সবাইকে। সবাই বাসা থেকে ওজু করে মাস্ক পরে মসজিদে গেছেন। এছাড়া নামাজ শেষে কোলাকুলি বা হাত মেলাতে দেখা যায়নি কাউকে।

প্রতিবছর ঈদের নামাজের পর হাসিমুখে কোলাকুলির এই দৃশ্য দেখা গেলেও করোনা ভাইরাসের কারণে এবার তা হচ্ছে না। মানুষকে বজায় রাখতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব
এক মাস রোজা রাখার পর খুশির ঈদ এলেও মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে তা নিরানন্দ হয়ে গেছে। ঈদের খুশির বদলে মানুষের মনে আতঙ্ক আর নানা দুশ্চিন্তা ভর করেছে।

আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তা নিয়ে মসজিদে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। তবে অন্য বার ঈদের নামাজ শেষে একজন আরেকজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেয়ার যে দৃশ্য দেখা যেত এবার তা দেখা যায়নি।

রামপুরা সালামবাগ মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা ইয়ানুর বলেন, ঈদের দিন এমন হবে কোনোদিন ভাবিনি। রোজার শেষে ঈদ এসেছে, কিন্তু ঈদের সেই আমেজ কোথাও নেই। ঈদের নামাজ পড়েছি আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তা নিয়ে।

তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাস আমাদের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। কবে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাব তার কোনো ঠিক নেই।

সিফাত নামের একজন বলেন, অন্যবার ঈদের দিন বন্ধুরা মিলে কত হইহুল্লোড় করে বেড়িয়েছি। এবার আর কোনো কিছু নেই। একবন্ধু আরেক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে যাব তার সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতির ঈদ খুশির বদলে বেদনা দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, জীবনে আর কখনো ইমন ঈদের দিন আসবে কি-না জানিনা। তবে যতদিন বেঁচে থাকব এই ঈদের দিনের কথা মনে থাকবে। এ কথা কখনো ভুলব না।

ষাটোর্ধ্ব মমিনুল ইসলাম বলেন, বয়স আমার কম হয়নি। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ সবই দেখেছি। কিন্তু এমন দৃশ্য কখনো দেখিনি। কোনো যুদ্ধ নেই, হানাহানি নেই তারপরও মানুষের মনে কোনো আনন্দ নেই। এক কঠিন মুহূর্ত।

তিনি বলেন, প্রতিবছরই ঈদের দিন প্রতিবেশীদের সঙ্গে আনন্দ করেছি। বন্ধু, বড় ভাই, পরিচিতজনদের ঈদের নামাজ শেষে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করেছে। এবার কারো সঙ্গে কোলাকুলি করার কোনো সুযোগ হয়নি। দূরে দাঁড়িয়ে একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। কোলাকুলি করতে না পারার বেদনায় বুক ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু কিছু করার নেই। এ পরিস্থিতি আমাদের সবাইকে মেনে নিতে হবে।

সাইফুল ইসলাম নামের একজন বলেন, মনে করেছিলাম রোজার ভিতর করোনার প্রকোপ শেষ হয়ে যাবে। ঈদের দিন নতুন পরিবেশে সবাই আনন্দ করব। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি তত খারাপ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আনন্দ কিভাবে আসবে। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি আমরা যেন দ্রুত এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পারি।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:১৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৫ মে ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।