• ঋণ ঝুঁকি মোকাবেলায় সিআইবির স্বতন্ত্র কাঠামো

    আদম মালেক | ১০ জুন ২০১৯ | ১১:৩২ এএম

    ঋণ ঝুঁকি মোকাবেলায় সিআইবির স্বতন্ত্র কাঠামো
    apps

    খেলাপি ঋণের বোঝা বেড়েই চলছে। অনেক ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করেও একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে খেলাপিরা ঋণ নেয়। কোনোভাবেই তাদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এজন্য ঋণ ঝুঁকি মোকাবেলায় ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) জন্য স্বতন্ত্র কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে এই প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে আলাদা আইনি ও প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, আর্থিক খাতের ঋণ ব্যবস্থাপনায় শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিআইবির জন্য আলাদা আইন ও প্রশাসনিক কাঠামো করা হচ্ছে। তিনি জানান, সিআইবিকে আরো কার্যকর করা গেলে ঋণ ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ হবে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে যাবে।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সব ধরনের ঋণ ব্যবস্থাপনাকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের সব ধরনের ঋণের তথ্য থাকবে সিআইবিতে। সিআইবির আইনি কাঠামো হলে গ্রাহকের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করা সব ধরনের আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক হবে। এতে তথ্য গোপন করে বা ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানকে নতুন ঋণ দেওয়া ঠেকানো সম্ভব হবে। এছাড়া, সিআইবি এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে ঋণঝুঁকি সম্পর্কে আগাম সতর্কবাণী দিতে পারবে। আর্থিক খাত সংস্কারের আওতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে সিআইবি একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত হয়।

    ওই কর্মকর্তা জানান, সিআইবির স্বতন্ত্র কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে আলাদা প্রতিষ্ঠান হবে সিআইবি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এর সদস্য হবে। এছাড়া এনজিও, সমবায় প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হবে সহযোগী সদস্য। সিআইবির সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের সরাসরি বা পরোক্ষ সংযোগ থাকবে। ঋণ সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করা হবে। এ রকম আইনি কাঠামোর মাধ্যমে সিআইবিকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সিআইবি’র সংস্কার কাজের জন্য বিভিন্ন দেশের এ সংক্রান্ত আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।


    এখানে উলে­খ্য, বর্তমানে সিআইবি পরিচালিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি বিভাগ হিসেবে। বিভাগটির প্রধান দায়িত্ব পালন করছেন একজন মহাব্যবস্থাপক। এছাড়া, অন্য সব কর্মকর্তাও আছেন। এ বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময় সার্কুলার ও গাইডলাইন জারির মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।

    সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় দেশের অর্থনীতির আকার বেড়েছে। পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে। সারা দেশে ৫৭টি ব্যাংকের প্রায় ১১ হাজার শাখা রয়েছে। বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ সাড়ে আট লাখ কোটি টাকা। এর বাইরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সমবায় প্রতিষ্ঠান, বিশেষায়িত ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকও ঋণ বিতরণ করে।

    বর্তমানে সিআইবি’র কাছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য থাকলেও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো তথ্য নেই। ফলে, তথ্য থাকা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে বা বেশি মাত্রায় একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিলে তা শনাক্ত করার উপায় নেই। এতে একই ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য দিয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে বা ঋণ খেলাপি হলেও নতুন ঋণ নিতে পারে।

    সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ সকল খাতের ঋণের তথ্য সিআইবিতে থাকলে এসব প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এ জন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে হলে সিআইবি রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। বর্তমানে শুধু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ নিতে গেলে সিআইবি রিপোর্ট বাধ্যতামূলক। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো রিপোর্ট নিতে হয় না। এছাড়া, ওইসব প্রতিষ্ঠান সিআইবির আওতায়ও নেই। এ কারণেই ঋণদানকারী সব প্রতিষ্ঠানকে সিআইবির আওতায় আনতে হবে।

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ১১:৩২ এএম | সোমবার, ১০ জুন ২০১৯

    bankbimaarthonity.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    রডের দাম বাড়ছে

    ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

    November 2023
    S S M T W T F
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    252627282930  
  • ফেসবুকে ব্যাংক বীমা অর্থনীতি