নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 60 বার পঠিত
বেসরকারি খাতের এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ পিএলসি বা এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি মো. নজরুল ইসলাম স্বপন।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির পুনর্গঠিত পর্ষদ সভায় তাকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়। এক্সিম ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২০০৭ সালে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নজরুল ইসলাম মজুমদার। এরপর থেকে তিনি প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংকটির পুরোনো পর্ষদ ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে টানা প্রায় ১৭ বছর চেয়ারম্যান পদে নতুন মুখ পেলো এক্সিম ব্যাংক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বপন এর আগে একই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তৈরি পোশাক খাতে তার দীর্ঘ ৪৪ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। বর্তমানে তিনি টিভোলি অ্যাপারেলস্ লিমিটেড এবং গ্যালাক্সি স্টিচ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০০০ সাল থেকে তিনি একজন সিআইপির সম্মান পেয়ে আসছেন। এছাড়া রিয়েল স্টেট এবং এভিয়েশন সেক্টরে তার ব্যাপক দক্ষতা রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেসরকারি খাতের এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ পিএলসি বা এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে তিনজন শেয়ারহোল্ডার ও দুইজন স্বতন্ত্রসহ মোট ৫ জন পরিচালক নিয়োগ দিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করে দেওয়া হয়।
এক্সিম ব্যাংকের পুরোনো পর্ষদ ভেঙে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশে বলা হয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতের জন্য জনস্বার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ক্ষমতাবলে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ বা এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হলো।
জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের পর্ষদ বাতিল করে তিনজন শেয়ারধারী পরিচালক ও দুজন স্বতন্ত্র পরিচালকের সমন্বয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত এই পর্ষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় শুক্রবার। তাতে আগামী দুই বছরের জন্য শেয়ারধারী পরিচালক নজরুল ইসলাম স্বপনকে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়। নতুন পর্ষদের অন্যরা হলেন শেয়ারধারী পরিচালক মো. নুরুল আমিন ও অঞ্জন কুমার সাহা, স্বতন্ত্র পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এস এম রেজাউল করিম এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট খন্দকার মামুন।
নতুন পর্ষদ গঠনের মাধ্যমে ব্যাংক-উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের হাত থেকে মুক্ত হয় এক্সিম ব্যাংক।
এতদিন নজরুল ইসলাম মজুমদার এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী নাছরিন ইসলাম পরিচালক ছিলেন। এছাড়া আগের পর্ষদে পরিচালক ছিলেন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. নাজমুস সালেহীন ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ কাউছার আলম। তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আগের আট সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের পাঁচজন বাদ পড়েছেন।
এক্সিম ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালে। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন প্রয়াত শাহজাহান কবির। নজরুল ইসলাম মজুমদার ২০০৭ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর টানা প্রায় ১৭ বছর তিনি প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। নজরুল ইসলাম কয়েক দফায় ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে আজীবন পরিচালক থাকার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন বা অন্য কোনো অনৈতিক সুবিধার দরকার হলেই বিএবির চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যাংকগুলোর সিএসআর তহবিলে নিয়ে হাজির হতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। সরকারের পতনের পর থেকে নজরুল ইসলাম মজুমদার গা-ঢাকা দিয়েছেন।
নজরুল ইসলাম মজুমদার ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান হন। এর আগে এ পদে ছিলেন ব্যাংক এশিয়ার তৎকালীন চেয়ারম্যান এম সাইদুজ্জামান। প্রভাব খাটিয়ে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রথমে বিএবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর চেয়ারম্যান হন, এখন পর্যন্ত এ পদে আছেন।
সম্প্রতি নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী নাছরিন ইসলামের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। হিসাব জব্দ করাদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব লেনদেন বন্ধ থাকবে। আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবে না। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার এ সময় বাড়ানো হবে। অ্যাকাউন্ট স্থগিত হওয়ার ফলে এখন থেকে তারা আর কোনো টাকা তুলতে পারবে না।
Posted ৩:০৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy