বুধবার ২৬ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
শেয়ার বিজের আলোচিত মতামত

এজিএম পার্টির অপতৎপরতা থেকে মুক্তি মিলবে কি?

শরিফুল ইসলাম পলাশ   |   সোমবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   1576 বার পঠিত

এজিএম পার্টির অপতৎপরতা থেকে মুক্তি মিলবে কি?

‘এজিএম পার্টি’ পুঁজিবাজারে বহুল পরিচিত শব্দ। অদৃশ্য এ শক্তির হাতে কখনও বিনিয়োগকারী আর কখনও জিম্মি কেম্পানি কর্তৃপক্ষ। বহুল আলোচিত এ চক্রের কারণে তালিকাভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) কথা বলার অধিকার এবং বছর শেষে ন্যায্য ডিভিডেন্ড বঞ্চিত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু কোনোভাবেই এ চক্রকে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং আলোচনায় এলেও রহস্যজনক কারণে সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে এ চক্রের নেপথ্যের নায়করা। এজিএম পার্টির কর্মকাণ্ড আর বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশের পর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হয় বলেও তথ্য মিলেছে। দীর্ঘদিন ধরে এজিএম পার্টির কাছে জিম্মি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এজিএম পার্টির তৎপরতার কারণে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। বাজারের স্বচ্ছতা, বিনিয়োগকারীদের ন্যায্য অধিকার ও কোম্পানিগুলোর স্বার্থেই এ চক্রকে চিহ্নিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। কিন্তু এজিএম পার্টির তৎপরতার বিষয়ে দায়িত্বশীলরা অবগত থাকলেও রহস্যজনক কারণে এ অপশক্তিকে দমন করা যাচ্ছে না। এখনও এজিএম পার্টিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। সম্প্রতি এজিএম পার্টির তৎপরতার কারণে একটি কোম্পানি ঢাকার বাইরে অনেকটা গোপনে এজিএম করেছে। ফলে ওই কোম্পানির এজিএমে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও অংশ নিতে পারেননি। অন্যদিকে একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এজিএমে এজিএম পার্টির ভাড়াটে দুর্বৃত্তদের হাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নাজেহাল হয়েছেন। সংবাদকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছর ধরে লিখছেন। কিন্তু কোনোভাবেই অশুভ শক্তির তৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না। ডিভিডেন্ড মৌসুম ঘিরে সংঘবদ্ধ এ চক্রের তৎপরতার কারণে আবারও আমাদের এ বিষয়ে নজর দিতে হচ্ছে। কিন্তু

আর কত দিন আমাদের বিনিয়োগকারীদের জিম্মি থাকতে হবে?
পুঁজিবাজারে কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের মিলনমেলা হচ্ছে এজিএম। এতে কোম্পানির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীর জন্য পূর্বঘোষিত ডিভিডেন্ড অনুমোদন করা হয়। সেই সঙ্গে কোম্পানির পরবর্তী এক বছরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোম্পানির শেয়ার কেনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অংশীদারিত্ব পাওয়ার কারণে এজিএমে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। ক্ষেত্রবিশেষে কোম্পানিকে এজিএমে বিনিয়োগকারীদের কাছে জবাবদিহিও করতে হয়। আর উন্নত বিশ্বে বাজারের স্বচ্ছতা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এজিএমে বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। নানা কারণে কিছু কিছু কোম্পানি এজিএমে বিনিয়োগকারীদের জবাবদিহি এড়িয়ে নামমাত্র ডিভিডেন্ড দিয়েই নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ-সংক্রান্ত শর্ত পরিপালন করতে চায়। আর কিছু কিছু কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের ঠকানোর এমন মানসিকতা থেকেই ‘এজিএম পার্টি’র সৃষ্টি। বছরে দুবার এজিএমের মৌসুম এলেই এ চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। আর সময়ের ব্যবধানে সেই কোম্পানিগুলোই এখন এজিএম পার্টির হাতে জিম্মি। কখনও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এড়াতে আবার কখনও বাধ্য হয়েই এজিএম পার্টির খপ্পরে পা দিচ্ছে কোম্পানিগুলো।

এজিএম পার্টির দৌরাত্ম্যের শিকার বেশকিছু কোম্পানির দায়িত্বশীলরা বর্তমান পুঁজিবাজারের এজিএম পার্টির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে চমকপ্রদ নানা তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু কোম্পানির স্বার্থে তারা নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। একটা সময় যখন তালিকাভুক্ত কিছু কিছু দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের এড়িয়ে এজিএম সম্পন্ন করার জন্য নিজস্ব কিছু লোকের নামে বিও অ্যাকাউন্ট খুলে সেই অ্যাকাউন্টে কোম্পানির নামমাত্র শেয়ার দিয়ে বিনিয়োগকারী সাজিয়ে তাদের মাধ্যমে এজিএমে এজেন্ডাগুলো পাস করিয়ে নিত। এ প্রবণতার কারণে পুঁজিবাজার ঘিরে বর্তমানে বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র তৈরি হয়েছে। এজিএম মৌসুমে এলেই চিহ্নিত কয়েকটি চক্রই এজিএম নিয়ন্ত্রণ করে। অদৃশ্য শক্তির কারণে কোম্পানিগুলো অনেক সময় কোম্পানিগুলোও এ চক্রের হাতে জিম্মি। অবশ্য কেউ কেউ এজিএম পার্টিকে ব্যবহার করে।

এজিএম পার্টির কাছে জিম্মি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তুলনায় চক্রটি তুলনামূলক শক্তিশালী হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা গণমাধ্যমের সঙ্গে এ বিষয়ে মুখ খুলতে চায় না। এজিএমে বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ জরুরি। কিন্তু বেশ কিছু কারণে বিনিয়োগকারীরা এজিএম বিমুখ। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে, কোম্পানির ভাড়াটে এজিএম পার্টির দৌরাত্ম্য। তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণ বিনিয়োগকারী উপস্থিত হলেও কথা বলার সুযোগ পান না। আর আগে থেকেই বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির বিরুদ্ধে কথা না বলার জন্য শাসিয়ে দেয়। তাই এজিএমে কার্যত নীরব দর্শক হয়ে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। আর এজিএমে হট্টগোল বা বিশৃঙ্খলার যে ঘটনা ঘটে, তার

পেছনে থাকে এই সংঘবদ্ধ চক্র। এগুলো সবাই কমবেশি জানে, অনেকেই আছে যাদের মুখ বিনিয়োগকারীদের কাছে পরিচিত। কিন্তু এজিএম পার্টির সদস্যদের খুঁটির জোরের কারণে কেউ কোনো কিছু বলে না।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এজিএম পার্টির অপতৎপরতা সম্পর্কে অবগত, এমনই ধারণা বিনিয়োগকারী ও গণমাধ্যমকর্মীদের। কারণ এজিএমে বিশৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আগে সরজমিনে এজিএম মনিটরিং করত। কিন্তু এ চক্রের দৌরাত্ম্যের কারণে জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে সরজমিনে মনিটরিং থেকে সরে এসেছে সংস্থাটি। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাজারের খুঁটিনাটি সব বিষয়ই বিএসইসির নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। এছাড়া বর্তমানে এজিএমের ভিডিও ফুটেজ বিএসইসির কাছে পাঠানো হয়। একই ব্যক্তি প্রায় সব এজিএমে একই ধরনের বক্তব্য রাখায় বিষয়গুলো কারও নজর এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। মজার ব্যাপার হলো, এজিএম পার্টির লোকজনকে বিনিয়োগকারীরা চেনে, অংশীজনদের বেশিরভাগই তাদের জানে। ব্যক্তিগত শত্রুতায় পরিণত হতে পারে আশঙ্কায় জানা থাকলেও কারও নাম উল্লেখ করে না কেউ। সবচেয়ে বড় কথা, এজিএম পার্টির সদস্যদের নাম-পরিচয় খুঁজে বের করার দায়িত্ব তো নিয়ন্ত্রক সংস্থার। গণমাধ্যমকর্মীরা শুধু কী ঘটছে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেন। যার ভিত্তিতে তদন্ত করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। যেখানে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ জড়িত, সেখানে উদাসীনতা দেখানো বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, নীতিনির্ধারণী মহল, আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থা, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন ও বিনিয়োগকারীসহ অংশীজনদের নিজ অবস্থান থেকে এজিএম পার্টিকে প্রতিহত করার বিকল্প নেই। আর এ চক্রকে শনাক্ত করারও কিছু নেইÑসবই ওপেন সিক্রেট। তারা প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করছে এবং অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে নিজেদের স্বার্থের জন্য বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। সবাই আন্তরিক হলে এ চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দায়িত্বশীলদের জন্য হয়তো কঠিন, তবে মোটেই অসম্ভব নয়। আশা করি, বিষয়টি সুরাহা হবে। বিনিয়োগকারীরা জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাবেন।

গণমাধ্যমকর্মী

Facebook Comments Box
top-1

Posted ২:৫৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।