শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এনটিসির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১১ আগস্ট ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   79 বার পঠিত

এনটিসির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন

ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের (এনটিসি) দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে কোম্পানির বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শেয়ারহোল্ডাররা। গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে দেউলিয়ার পথে থাকা এনটিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে জুলুমবাজ চেয়ারম্যান কর্তৃক নিয়োগকৃত দুর্নীতিপরায়ণ পরিচালক ও কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানানো হয়। বলা হয়, পতিত স্বৈরাচারী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়ে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে কোম্পানিতে ‘রামরাজত্ব’ কায়েম করেছিলেন। একচ্ছত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার লালসায় শেখ কবির তার নিজের জেলা গোপালগঞ্জের পাঁচজনকে পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এই পরিচালকরা হলেন- মো. মোস্তাফিজুর রহমান; মো. আবুল হোসেন; চৌধুরী নাফিজ সরাফত; এম আতিফ খালেদ ও মিজানুর রহমান খান। এছাড়াও তিনি অবাধে দুর্নীতি ও লুটপাট চালিয়ে যাওয়ার জন্য যোগ্যদের সরিয়ে অযোগ্য ও অনিয়মের দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কোম্পানির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করেছিলেন।

কোম্পানির ক্ষতিগ্রস্ত কর্মকর্ত-কর্মচারীদের দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনতিবিলম্বে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে; হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে: দুর্নীতিপরায়ণ জিএম, অর্থ কেরামত আলীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে।

মানববন্ধনে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের ক্ষতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, আমরা আজকে দাঁড়িয়েছি কোম্পানির বর্তমান অবস্থা এবং আমাদের উপর হওয়া অন্যায় অবিচার সম্পর্কে দেশের বর্তমান প্রশাসন এবং সচেতন ছাত্র ও জনতাকে জানাতে।

তারা বলেন, ন্যাশনাল টি কোম্পানি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় চার দশক এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে টিকে ছিলো। কিন্তু ২০১৯ সালের ২৩ জুন থেকে অপশাসনের কবলে পড়ে আছে। শেখ কবির হোসেনকে চেয়ারম্যান নিয়োগের পর থেকে কোম্পানি এক টাকাও মুনাফা করতে পারেনি। বিগত বছরগুলোতে দেশে প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই অপশাসন চলছিল এবং এনটিসি তার ব্যতিক্রম নয়।

মানববন্ধনে জানানো হয়, শেখ কবির হোসেনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এনটিসির পরিচালকরা স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তার ইচ্ছা অনুযায়ী কোম্পানির ১০ জন মেধাবী চা বাগান ম্যানেজারকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। চাকুরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন। বিতর্কিত কাজের প্রতিবাদ করায় নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে ১০ মাস আগের ঘটনা সাজিয়ে দুই রিটকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এবং আরেক দুর্নীতিবাজ ম্যানেজার রফিকুল ইসলামকে বাদী করে তাদের কারাগারে আটক করান। নিপীড়নে সাহায্য করে তিনি সাথে সাথে প্রমোশন লাভ করেন।

এদিকে এনটিসির দুর্নীতিবাজ ও অর্ধকোটি টাকার রাসায়নিক মালামাল আত্মসাতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ হাসানকে তিনি (শেখ কবির) কোম্পানির এমডি পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। অর্থ বিভাগে ডিজিএম পদের উপরে জিএম পদ সৃষ্টি করে দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটের হোতা কেরামত আলীকে পদোন্নতি দিয়েছেন চেয়ারম্যান। কেরামত আলী এ পদে অবৈধভাবে সুবিধা নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে কোম্পানি অর্ধ কোটি টাকার অপচয়ের কবলে পড়েছে। তার (কেরামত আলী) বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দুইটি অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন যখন তদন্তের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়, সেটিও শেখ কবীর হোসেন প্রভাব খাটিয়ে বন্ধ করে দেন।

বক্তারা বলেন, ন্যাশনাল টি কোম্পানি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সাধারণ শেয়ারহোল্ডার কর্তৃক নিয়োগকৃত আরও ৩ জন নির্ধারিত পরিচালক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসাবে রয়েছেন।

তাছারা বোর্ড কর্তৃক নিয়োগকৃত একজন স্বতন্ত্র পরিচালক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়োগকৃত ৩ জন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ সর্বমোট ১১ জন সদস্য রয়েছেন।
মানববন্ধনে জানানো হয়, পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের নেতৃত্বে সিএফও কেরামত আলী একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে চরম দুর্নীতি ও লুটপাটের রাজত্ব শুরু করেন।

তারা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে চা চুরি, চা বাগানের গাছ চুরি, ভুয়া ভাউচার বানিয়ে আত্মসাৎ, টেন্ডার জালিয়াতি, আয়কর ফাঁকি, ভুয়া কেনাকাটা, চাকরিতে নিয়োগ, বদলী ও পদোন্নতি বাণিজ্য অর্থাৎ এমন কোনো অনিয়ম নেই যা এই সিন্ডিকেটের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। সিন্ডিকেটের দুর্নীতি এবং লুটপাটের পথ সুগম করার জন্য কোম্পানিতে বহু সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তাকে চাকরি হারাতে হয়েছে।
সিন্ডিকেট চক্রটি কোম্পানিতে যোগদান করার পর দুর্নীতির মাধ্যমে কোম্পানির কোটি কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটি অর্থের অভাবে দেওলিয়া প্রায়। গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এই কোম্পানি ৬৮ কোটি টাকা লোকসান করে এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসান করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোম্পানির বর্তমানে কৃষি ব্যাংকের ঋণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। যা কোম্পানির পক্ষে পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব। বেতন ভাতা এবং মজুরি অনিয়মিত। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্রাচুইটির টাকা না পেয়ে অসংখ্য কর্মকর্তা এবং কর্মচারি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শুধু পিএফ এর সাকুল্য পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা হলেও, এই টাকা পরিশোধের কোনো ক্ষমতা নেই কোম্পানির। মাত্র ৭ কোটি টাকা ওই খাতে জমা রয়েছে।

আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন ভাতা পরিশোধের টাকা নেই কোম্পানির তহবিলে। নিম্নমানের চা উৎপাদন করে দেশের অন্যান্য কোম্পানির কাছে কম দামে বিক্রি করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার হওয়া সত্বেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ২৮০ কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করছে। যা পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এছাড়াও পদে পদে অনিয়মের মাধ্যমে চেয়ারম্যান প্রভাব খাটিয়ে দমন-পীড়নের মাধ্যমে সৎ কর্মকর্তাদের বের করে দিয়ে অনুগত চাটুকার বাহিনী তৈরি করেন।
এ কোম্পানির পেইড আপ ক্যাপিটাল ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর পর সেটি হবে ৩০ কোটি টাকা।

যেখানে এই বিগত কয়েক বছর ৬৬ লাখ শেয়ারের ডিভিডেন্ড দিতে পারে নাই, সেখানে ৩০ কোটি টাকার শেয়ার কিভাবে ডিভিডেন্ড প্রদান করবে, তা বোধগম্য নয়। ন্যাশনাল টি কোম্পানি সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন যৌথ প্রতিষ্ঠান এবং এতে শ্রমিক কর্মচারি এবং কর্মকর্তাসহ প্রায় ১০ হাজার ৫০০ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। এনটিসির এই নাজুক পরিস্থিতি এবং চলমান অপশাসন তদন্তের দাবি রাখে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমাদের এখানে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে চাই, কোম্পানির চেয়ারম্যান অত্যন্ত প্রভাবশালী। কোনো প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ১১ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কোম্পানি থেকে বের করে দেওয়া হয়। তাদের জুলুমের শিকার হয়ে বাগান এবং হেড অফিসের ১৬ জন সদ্য নিয়োগ করা কর্মকর্তা রিজাইন দিয়ে চলে গেছেন। আমরা চাকুরি হারিয়ে গ্রাচুইটি এবং পিএফ এর টাকা না পেয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এখন আমরা আমাদের চাকরি ফেরত চাই।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৯:২০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১১ আগস্ট ২০২৪

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।