এস জেড ইসলাম | ১৯ জানুয়ারি ২০২১ | ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ
বাংলা প্রবাদ ‘কচুগাছ কাটতে কাটতে ডাকাত’ কথাটিকে সত্যে পরিণত করলেন ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের সিইও মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ। অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে যেখানে চাকরি যাওয়ার উপক্রম, সেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চিঠি জাল করে বোর্ডমিটিংয়ে উপস্থাপন! কতটা অপরাধপ্রবণ হলে এমনটা করা যায়- বিস্ময় মিশ্রিত প্রশ্ন আইডিআরএর এক কর্মকর্তার।
জানা যায়, মীর নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে বীমা আইন লঙ্ঘন, অনিয়ম ও জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাৎ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারসহ ১০টি অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে আইডিআরএর সার্ভিল্যান্স টিম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনিয়মগুলো হলো- পরিচয় গোপন করে মোটা অঙ্কের বেতনে ছেলেকে নিয়োগ, অবলিখন কর্মকর্তাকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ, ভুয়া ও অনভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ দিয়ে অবৈধভাবে বেতন উত্তোলন, বীমা আইন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় এবং প্রিমিয়াম সংগ্রহ তথ্যে গরমিল হিসাব প্রদান।
এর প্রেক্ষিতে নাজিম উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণসহ প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা ও সিটি সেন্টারের কার্যালয় বন্ধের সুপারিশ করে তদন্তকারী দল। এ সুপারিশ আমলে নিয়ে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় আইডিআরএ। পরবর্তীতে আইডিআরএর কাছে ক্ষমা চায় সিইও মীর নাজিম। এরই মাঝেই ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের বোর্ডমিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়ে নিজেকে স্বচ্ছ প্রমাণ করতে আইডিআরএর সিদ্ধান্ত জাল করে উপস্থাপন করে এ সিইও। পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইডিআরএর কাছে ইসলামী কমার্শিয়ালের পর্ষদ যাচাই করতে গেলে জাল করার বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর শাস্তিস্বরূপ মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গত ৩ জানুয়ারি আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় অ্যাকাউন্টপেয়ি চেকের মাধ্যমে এ জরিমানার টাকা পরিশোধ করে মীর নাজিম উদ্দিন। এদিকে ব্যক্তিগত জরিমানা পরিশোধে বিষয়টি আইডিআরএকে জানাতে অফিসিয়াল প্যাড ব্যবহার করেন তিনি। ফলে জরিমানার টাকা কোম্পানি থেকে প্রদান করা হয়েছে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
ব্যক্তিগত বিষয়ে অফিসিয়াল কাগজপত্র ব্যবহার করা যায় না। অফিসিয়াল প্যাড ও সূত্র উল্লেখ করা হলে তা ব্যক্তিগত থাকে না। বরং অফিস নথিতে তা লিপিবদ্ধ থাকে। আর অফিস সংশ্লিষ্টতা না থাকলে তা অফিসের নথিতে লিপিবদ্ধ করা হয় না। ফলে মীর নাজিম উদ্দিনের ব্যক্তিগত জরিমানা অফিস কর্তৃক প্রদান করা হয়েছে বলেই মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। গ্রাহকের আমানতের টাকা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অপকর্ম ঢাকতে ব্যবহৃত হচ্ছে বলেই ধারণা তাদের।
এ বিষয়ে আইডিআরএর সদস্য দলিল উদ্দিনের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, সিইও মীর নাজিম উদ্দিনের অনিয়মের বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের চিঠিও জাল করেন তিনি। পরবর্তীতে শুধু জাল করায় তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে মীর নাজিম উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি জানান, আইডিআরএ জরিমানা করেছে তাই সে টাকা পরিশোধ করেছি। কিন্তু কী কারণে জরিমানা হয়েছে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
এদিকে সিইওর অপকর্মের বিষয়ে চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, মীর নাজিমের চিঠি জাল করা ও এর দায়ে জরিমানা হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। জরিমানার টাকা অফিস থেকে পরিশোধ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ফোনকল কেটে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy