| বুধবার, ০২ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 2436 বার পঠিত
আইনজীবী, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন পেশার প্রার্থীরা এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী ছিলেন, যারা শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের কাছেও বেশ পরিচিত মুখ। কেউ তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা, কেউবা ব্রোকারেজ হাউজের মালিক। আবার কেউ তালিকাভুক্ত কোম্পানির উপদেষ্টা হিসেবেও বিনিয়োগকারীদের পরিচিত মুখ হয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ ও মহাজোট থেকে যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তাদের প্রায় সবাই জিতেছেন। অন্যদিকে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট থেকে এবার শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট কেউই নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি।
নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত বেসরকারি ফলাফল অনুসারে, টাঙ্গাইল-৬ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে জয়লাভ করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি ব্রোকারেজ হাউজ মোনা ফিন্যান্সিয়াল কনসালট্যান্সি অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তাছাড়া মোনা গ্রুপ অব কোম্পানিজ তাদের পারিবারিক ব্যবসা। তিনটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ও শমরিতা হাসপাতালের মালিকানায় রয়েছেন তিনি।
মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়। তিনি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান। হঠাৎ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ার পর সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিনিয়োগকারীদের নজরে আসেন তিনি।
ঝিনাইদহ-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত তাহজিব আলম সিদ্দিকী শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
যশোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত কাজী নাবিল আহমেদ শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেমিনি সি ফুডের পরিচালক।
খুলনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত প্রার্থী সাবেক ফুটবলার আবদুস সালাম মুর্শেদী তালিকাভুক্ত কোম্পানি এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেডের উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রিমিয়ার ব্যাংকেরও একজন উদ্যোক্তা তিনি।
কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত নাজমুল হাসান পাপন শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রার্থী সালমান এফ রহমান শেয়ারবাজারের কিংবদন্তি হিসেবে সুপরিচিত। তিনি তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো সিনথেটিকস ও শাইনপুকুর সিরামিকসের উদ্যোক্তা। তাছাড়া হলফনামা অনুযায়ী শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানিতে তার ২৫০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ রয়েছে।
ঢাকা-৯ আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান জিএসপি ফিন্যান্সের ভাইস চেয়ারম্যান।
ঢাকা-১২ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাভার রিফ্র্যাক্টরিজের উদ্যোক্তা।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী যমুনা ব্যাংকের পরিচালক। এর বাইরে তার মূল ব্যবসা গাজী গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠান এখনো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি।
গোপালগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত ফারুক খানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার।
সিলেট-১ আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই ড. এ কে আবদুল মোমেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বর্তমান পর্ষদের চেয়ারম্যান। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক এ স্থায়ী প্রতিনিধি দেশে বিদেশী ও প্রবাসীদের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে আসছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রার্থী এবাদুল করিম বুলবুল বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
কুমিল্লা-১০ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল শেয়ারবাজারের কোম্পানি সিএমসি কামালের উদ্যোক্তা। পুঁজিবাজার নিয়ে সৎ সাহসী ও বাস্তবধর্মী মন্তব্য করে অনেক বিনিয়োগকারীর কাছে আলাদাভাবে পরিচিত হয়েছেন তিনি। অবশ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার আগেই তিনি কোম্পানির পুরো মালিকানা ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে আলিফ গ্রুপ সিএমসি কামাল কিনে নেয়। এরপর নতুন পর্ষদ কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করে রাখে আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং।
নোয়াখালী-২ আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোরশেদ আলম শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাস্টিকের উদ্যোক্তা ও চেয়ারম্যান। এছাড়া ন্যাশনাল লাইফ ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকেরও উদ্যোক্তা তিনি।
চট্টগ্রাম-১ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রার্থী গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রামভিত্তিক হোটেল দ্য পেনিনসুলা চিটাগংয়ের উদ্যোক্তা।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে জাসদের প্রার্থী মাঈনুদ্দিন খান বাদল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিভিও পেট্রোকেমিক্যালসের উপদেষ্টা। ব্যবসায় সংকট উত্তরণে কোম্পানিটিকে সহযোগিতা করে অনেক শেয়ারহোল্ডারের কাছে প্রিয় হয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম-১৩ আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পারিবারিক ব্যবসা আরামিট গ্রুপ। এর মধ্যে আরামিট লিমিটেড ও আরামিট সিমেন্ট শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। উদ্যোক্তা পরিবার হিসেবে বর্তমানে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকেরও নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে।
চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ শাশা ডেনিমস লিমিটেডের উদ্যোক্তা। বিদ্যুৎ খাতেও ব্যবসা সম্প্রসারণের চেষ্টা করছেন তারা।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন একসময় আওয়ামীবিরোধী জোটের অন্যতম নেতা মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। তিনি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএফসির মূল উদ্যোক্তা। তার কাছে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ পাওনা অনাদায়ী থাকলেও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নির্বাচনের বৈতরণী পেরোতে সক্ষম হন তিনি।
ঢাকা-৬ আসনে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশিদ ডিএসইর একজন সিনিয়র সদস্য। ব্রোকারেজ হাউজ কাজী ফিরোজ রশিদ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান তিনি।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন, সংসদ ও সংসদের বাইরে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পুঁজিবাজারবান্ধব নীতি প্রণয়ন ও এসবের যথা বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা রাখবেন তারা।
Posted ৯:১৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০২ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed