
নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৮ জুন ২০২০ | প্রিন্ট | 413 বার পঠিত
নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় লকডাউন। এই লকডাউনের প্রথম ৬৬ দিনে (২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে) ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। এ সময় দেশে মোট ৬ কোটি ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। তাতে দেশের জিডিপির ২ লাখ ৯৮ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সভাপতি ড. আবুল বারকাত।
আজ সোমবার (০৮ জুন) ‘করোনার মহাবিপর্যয় থেকে মুক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা’ শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য সদস্যরা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের সবার প্রতি শোক জানানো হয়।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে ড. বারকাত বলেন, লকডাউনে সেবা খাতে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৬ কোটি, শিল্প খাতের ১ লাখ ২ হাজার ৪১ কোটি এবং কৃষি খাতে ২৬ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ সময় প্রত্যাশিত জিডিপির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৫৮ হাজার ২৬ কোটি টাকা। যার অর্জিত হয়েছে ৩৫ শতাংশ। আর লস হয়েছে ৬৫ শতাংশ।
করোনার কারণে সেবা খাতে চাকরি হারিয়েছেন ১ কোটি ৫৩ লাখ, শিল্প খাতের ৯৩ লাখ এবং কৃষি খাতের ১ কোটি ১৪ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। অন্যদিকে উচ্চ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে থেকে ৫ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের আয় কমে দরিদ্র হয়ে গেছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নিন্মআয়ের ৪৭ শতাংশ মানুষের জন্য এককালীন ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দিতে হবে।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে অতীতে যেসব কথাবর্তা হয়েছে, সেসব ভুলে যান। বাংলাদেশে ২৬ মার্চের আগের অবস্থা নেই। লকডাউনের ৬৬ দিনে ঘটনা ঘটেছে মারাত্মক। সামনে এটা আরও বাড়তে থাকবে।
তিনি বলেন, গিনি সহগ (অর্থনীতিশাস্ত্রে আয়ের বৈষম্য পরিমাপের বহুল ব্যবহৃত পরিমাপক) যদি দশমিক ৫-এর বেশি হয় সেটা মারাত্মক। আর একটা সহগ আছে পালমা। পালমা সহগ দেখা হয়- সর্বোচ্চ আয় যে ১০ শতাংশ আছে এবং সর্বনিম্ন আয় যে ৪০ শতাংশের আছে, এই দুইয়ের মধ্যে যে পার্থক্য। এই পার্থক্য যদি ৩ গুণ হয় তাহলে বিপজ্জনক।
লকডাউনের আগে আমাদের গিনি সহগ ছিল দশমিক ৪৮, এটি মে মাসের শেষে দশমিক ৬৩৫ হয়েছে। বিপদ মাপার রেশিও পালমা আমাদের ছিল ২ দশমিক ৯২, এখন ৭ দশমিক ৫৩। অতএব মহাবিপজ্জনক। বাংলাদেশ এখন উচ্চ আয় বৈষ্যমের দেশ এবং বিপজ্জনক আয় বৈষ্যমের দেশে পরিণত হয়েছে, বলেন আবুল বারকাত।
তিনি বলেন, আয় বৈষ্যম ও সম্পদ বৈষ্যম নিরসনের যত পথ পদ্ধতি আছে তার সবগুলো ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট হবে করোনা মোকাবিলার উল্লেখ করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সভাপতি বলেন, গ্রাম পর্যায়সহ দেশের ৮২ ভাগ মানুষের কাছে করোনার সেবা পৌঁছায়নি। দায়সারা কাজ হয়েছে। এই মুহূর্তের জন্য প্রয়োজন ছিল শক্তিশালী স্বাস্থ্য সেবা। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য সেবা অত্যন্ত নাজুক। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্বাস্থ্য খাতের জন্য আগামী বাজেটে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা জানিয়েছি।
ড. বারকাত বলেন, করোনায় বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকাকে ব্যাহত করেছে। কর্মহীনতা ও দারিদ্রতা বেড়েছে। তাই আগামী বছরের বাজেট হবে করোনা থেকে মুক্তির বছর। দেশের আয় ও সম্পদ বৈষম্য দূর করতে হবে।
আইএমএফের মতে করোনায় পৃথিবীর ৫০ ভাগ মানুষ জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের সংকোচনমূলক বাজেট চাই না, চাই সম্প্রসারণমূলক বাজেট।
আগামী ৫ বছরের বাজেটেও সমাজ থেকে আয়, সমাজ, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা বৈষম্য দূর করতে হবে বলেওে মনে করেন তিনি।
Posted ৯:৪৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৮ জুন ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan