| বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট | 257 বার পঠিত
বরেণ্য কৃষিবিদ বর্ষিয়ান জননেতা বদিউজ্জামান বাদশা নবীন প্রবীণ সকল কৃষিবিদদের আপনজন, আত্মার আত্মীয়, সকলের মনের মণিকোঠায় স্থান পাওয়া এক বিশেষ ব্যক্তিত্ব, কৃষিবিদ জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৫৮ সালের ৫ জানুয়ারি শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশার জন্ম। মেধাবী ছাত্র বদিউজ্জামান বাদশা ১৯৭৪ সালে ৫টি লেটারসহ এসএসসি পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ জামালের সহপাঠী ছিলেন। কিন্তু কখনো শেখ জামালের সহপাঠী পরিচয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে বিশেষ সুবিধা নেননি বা নেওয়ার চেষ্টা করেননি এই বিশাল মনের অধিকারী ত্যাগী নেতা। তিনি এইচএসসি পাশ করে সিলেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। মেধাবী ছাত্র বদিউজ্জামান বাদশা মেডিকেল কলেজ ছেড়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও তা প্রত্যাখান করে বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নের ব্রত নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
বদিউজ্জামান বাদশা ৭৫ পরবর্তী কঠিন দিনগুলোতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুজিবীয় আদর্শের অগ্র সৈনিক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সমগ্র বাংলাদেশে তিনি সামরিক শাসন এবং স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র বদিউজ্জামান বাদশা তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, দক্ষ সাংগঠনিক ক্ষমতার বদৌলতে পরবর্তিতে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। নালিতাবাড়ীতে তিনি হাজী নূরুল হক নন্নী-পোড়াগাঁও মৈত্রী কলেজ, নালিতাবাড়ী ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কৃষিবিদদের নেতৃত্ব দিতেন, ভালোবাসার ছাযাতলে আগলে রাখতেন। কৃষিবিদদের বিভিন্ন ন্যায্য দাবি আদায়ে তিনি অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন, বিভিন্ন ফোরামে তাঁর অকুতোভয় স্পষ্ঠ ভাসা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। নবীন প্রবীন সকল কৃষিবিদদের সাথে তাঁর ছিল মধুর সম্পর্ক ও সক্ষতা। কৃষিবিদদের কাছে ডাকতেন, পাশে থাকতেন, সকলের খোঁজ খবর নিতেন, সমস্যা সমাধানের জন্য তৎপর থাকতেন।
২২ নভেম্বর, ২০২১ শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও সাবেক ছাত্রনেতা বরেণ্য কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ চত্তরে তার প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জানাযা বাদ যোহর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ও বাদ মাগরিব নালিতাবাড়ী তারাগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে তার তৃতীয় নামাজে জানাযা শেষে পৌর শহরের সিটপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে জননেতার জানাজায় লোকে লোকারণ্য ছিল উপজেলা সদর এলাকা। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে দলে দলে জানাযায় যোগ দিয়েছিল আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। তারাগঞ্জ হাই স্কুলের বিশাল মাঠে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। স্থানীয় নেতারা, জনপ্রতিনিধিরা ও জনসাধারণ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন। একজন মানুষের মৃত্যু হলে তার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশার মৃত্যুতে দেশের সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
কৃষিবিদদের গর্ব ও অহংকার কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা ভাই আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কৃষিবিদ জগত থেকে হারিয়ে গেলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বদিউজ্জামান বাদশা শুধু একজন ব্যক্তি নন, একটি রাজনৈতিক প্রতিভার নাম। তিনি ছিলেন সকল কৃষিবিদের চোখের মণি। তথ্যে-উপাত্তে সমৃদ্ধ অনর্গল বক্তৃতা দেওয়ায় সক্ষম বাদশা ভাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রাঞ্জল শব্দচয়নে বক্তৃতা দিয়ে দর্শক শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধের মত আকর্ষণ করার মত একজন জননেতা ছিলেন। অত্যন্ত জনবান্ধব, গণমুখী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। আজীবন সংগ্রামী এই নির্লোভ এবং ত্যাগী মানুষটি অনেকটা অবমূল্যায়িত হয়ে অস্ফুটো গোলাপের মত অকালেই ঝরে গেলেন।
প্রতি বছর ১৩ই ফেব্রুয়ারী আসবে, কৃষিবিদ দিবস পালিত হবে, সারা দেশ ব্যাপি কৃষিবিদদের বিভিন্ন মিলন মেলা হবে কিন্তু প্রিয় বাদশা ভাইকে দেখা যাবে না, তাঁর তথ্য-সমৃদ্ধ মনোমুগ্ধকর বক্তৃতা শোনার সৌভাগ্য হবে না।
ব্যক্তি বদিউজ্জামান বাদশা আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁর আদর্শ, মতাদর্শ, ত্যাগ, শিক্ষা আজ আমাদের নিকট দিবালোকের মত সুস্পষ্ট। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হোক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, তাঁর গুনাবলীর চর্চা হোক সর্বস্তরে- দেশ থেকে দেশান্তরে, সৃষ্টি হোক অসংখ্য ত্যাগি বর্ষিয়ান জননেতার আর তাঁদের মাঝেই বেঁচে থাক আমাদের সকলের প্রিয় বদিউজ্জামান বাদশা ভাই। বাদশা ভাই আছেন, থাকবেন আমাদের সকলের অস্তিত্বের মাঝে। তিনি থাকবেন সংগ্রামে, চেতনায়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত অবিচলিত আমৃত্যু পথ চলায়।
ড. মো. শাহ কামাল খান
প্রকল্প পরিচালক, কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা
Posted ১:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারি ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy