বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯ | প্রিন্ট | 1444 বার পঠিত
ক্রেডিট কার্ডে সুদ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্দেশনা থাকলেও মানছে না ব্যাংকগুলো। তবে গ্রাহকের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ডে নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত সুদ নিচ্ছে বেসরকারি খাতের ১৬ ব্যাংক। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক পরিকল্পনা করছে, অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোতে বিশেষ পরিদর্শন করে সুদহার যাচাই করে যেসব ব্যাংক গ্রাহককে ঠকিয়ে অতিরিক্ত সুদ নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।
অতিরিক্ত সুদ নেওয়ার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। এরপরই রয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট, মার্কেন্টাইল, মেঘনা ও ইউসিবিএল।
জানা গেছে, সহজে বহনযোগ্য ও তুলনামূলক নিরাপদ হওয়ায় বাংলাদেশে ‘প্লাস্টিক মানি’ বলে খ্যাত ক্রেডিট কার্ডে আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। ফলে দিন দিন ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকসংখ্যাও বাড়ছে। এ সুযোগে ব্যাংকগুলোও বাগিয়ে নিচ্ছে বাড়তি সুদ। ব্যাংকগুলোর নেওয়া বাড়তি সুদ বিষয়ে গ্রাহকও জানছেন না।
মূলত বিশেষ শ্রেণির ব্যক্তিরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করায় ব্যাংকের বলে দেওয়া মৌখিক তথ্যতেই নির্ভর করছেন তারা। আর লোভনীয় বক্তব্যে ক্রেডিট কার্ড গছিয়ে দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুদ আদায় করছে ব্যাংকগুলো। তবে ক্রেডিট কার্ডে উচ্চ সুদ নিয়ন্ত্রণে ২০১৭ সালের আগস্টে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত ঋণের সুদহারের মধ্যে যে হার সর্বোচ্চ, সেই সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশের বেশি সুদ বা চার্জ ক্রেডিট কার্ডে নিতে পারবে না ব্যাংকগুলো। কিন্তু ব্যাংকগুলো এ পার্থক্য সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত নিচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ডে সুদ নেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে অবস্থান করছে বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। গত মে মাস শেষে ব্যাংকটির ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল সাড়ে ১৩ শতাংশ। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যাংকটি নিচ্ছে ২৭ শতাংশ হারে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহারের সঙ্গে ক্রেডিট কার্ডের সুদহারের পার্থক্য দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৩ শতাংশ।
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে সুদ নেওয়ার কথা সাড়ে ১৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে সাড়ে আট শতাংশ হারে সুদ বেশি নিচ্ছে ব্যাংকটি।
ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত সুদ নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুখপাত্র) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংকের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা হবে। যেসব ব্যাংক নীতিমালা অনুযায়ী সুদহার নির্ধারণ করছে না, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কার্ড ডিভিশনের প্রধান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের এসএমই খাতের দুটি পণ্যতে ঋণ বিতরণে সুদ নেওয়া হয় সর্বোচ্চ ২১ দশমিক পাঁচ শতাংশ। সেই সুদহারের সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদের ক্রেডিট কার্ডে সুদহার ২৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার নির্দেশিত সীমার মধ্যেই আছে।’
অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া গত মে মাস শেষে এমটিবির বিভিন্ন ঋণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংকটি ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে সুদ নিচ্ছে সাড়ে ২৬ শতাংশ। ব্যাংকটির সর্বোচ্চ সুদহার সাড়ে ১৪ শতাংশ হচ্ছে ভোক্তা ঋণের বিপরীতে। এছাড়া বড় ও মাঝারি মানের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ঋণের সুদহার হচ্ছে সাড়ে ১০ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ। ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সাড়ে ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। অন্যান্য ঋণের বেলায় সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করছে।’
জানা গেছে, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সর্বোচ্চ ঋণ সুদহার সাড়ে ১৪ শতাংশ ও ক্রেডিট কার্ডের সুদহার ২৫ শতাংশ। সুদহারের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশে। মেঘনা ব্যাংকের সর্বোচ্চ ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের ঋণের মধ্যে পার্থক্য ১০ শতাংশ। এছাড়া মেঘনা ব্যাংকের পার্থক্য হচ্ছে ১০ শতাংশ ও ইউসিবিএল সাড়ে ৯ শতাংশ।
শীর্ষ পাঁচটি ছাড়াও বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমার বাইরে গিয়ে ক্রেডিট কার্ড থেকে অতিরিক্ত সুদ নিচ্ছে এবি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এসআইবিএল, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক।
জানা গেছে, নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্রেডিট কার্ডে অতিরিক্ত সুদ নেওয়া ব্যাংকগুলোর তথ্য যাচাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য বিশেষ পরিদর্শন বা তথ্য সংগ্রহ করা হবে। যেসব ব্যাংক এ নীতিমালা মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে সুদ আদায়ে তারা বরাবরই উপেক্ষা করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা। সুদহার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এর আগে নেওয়া উদ্যোগের কোনো ফল পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত বছরে একবার ব্যাংকগুলোর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে আসে ৫৭ ব্যাংকের মধ্যে ১৮টি ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে গ্রাহকের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে উচ্চ সুদ নিচ্ছে।
Posted ১২:১৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed