
আদম মালেক | বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 902 বার পঠিত
ব্যাংকগুলোর মহাজনি মনোভাবের কারণে ক্রেডিট কার্ড সাধারণ মানুষের কাছে এক আতঙ্ক। এই কার্ডের গলাকাটা সুদে সঙ্কটে ব্যবহাকারীরা। ভবিষ্যতে কেউ যাতে এই ঋণের জালে আটকে না পড়েন এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন সময় তোড়জোড় দেখালেও এখন তাদের গাছাড়া ভাব। ভাটা পড়েছে তাদের তৎপরতায়। এক সময় কৈফিয়ৎ চেয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দিলেও এখন সেই কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকিংখাতে সার্বিক সুদের হার ৯/৬ কার্যকর করতে পারলেই ক্রেডিট কার্ডে সুদ হার বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত হারে নেমে আসবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ক্রেডিট কার্ডে সুদের লাগাম টেনে ধরতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবিধি ও নীতি বিভাগ। ঐ নীতিমালায় বলা হয় ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ড বাদে অন্য সেবাগুলোর মধ্যে যে সেবায় সর্বোচ্চ সুদ বা চার্জ আরোপ করে তার চেয়ে ৫ শতাংশের বেশি মুনাফ বা চার্জ আদায় করতে পারবে না। যেমন, একটি ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ সুদ আদায় করে ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ ২৩ (১৮+৫) শতাংশের বেশি সুদ বা চার্জ আদায় করা যাবে না। গেল বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ নীতিমালা পরিপালনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ।
গেল বছরের মে মাসে ব্যাংকগুলোর ঋণ বা বিনিয়োগের সুদ বা মুনাফার হার বিবরণী পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক দেখতে পায় ৩২টি ব্যাংকের মধ্যে ১৮টি ব্যাংকই বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনা মানেনি। আবার ২৫ টি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত কোনো তথ্যই দেয়নি। উত্তর না দেয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে, অগ্রণী, বেসিক, বিডিবিএল, রুপালী, বিকেবি, আল আরাফা,ফারমার্স, ফার্স্ট সিকিউরিটি, আইসিবি, এনআরবি গ্লোবাল, পূবালী, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল, সীমান্ত, শাহজালাল, ইউনিয়ন, উত্তরা, আল ফালাহ, সিটি ব্যাংক এনএ,হাবিব, এইচএসবিসি, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, উরি ব্যাংকসহ আর কয়টি ব্যাংক। এদিকে চড়া সুদ আদায়কারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে জনতা,ঢাকা, ইস্টার্ন, এক্সিম, মিডল্যান্ড,মধুমতি,মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল, এনসিসি, এনআরবিসি, প্রাইম, স্ট্যান্ডার্ড, ইউসিবি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলোন।
গেল ২৭ জুন ২৫টি ব্যাংক কেন ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত সুদের তথ্য দেয়নি এজন্য একটি তাগাদাপত্র পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইদিন ১৮টি ব্যাংক কেন ক্রেডিট কার্ডে চড়া সুদ নেয় সেজন্য আরেকটি তাগাদাপত্র ইস্যু করে। কিন্তু সব ব্যাংক এ পত্রের উত্তর না দেয়ায় গেল ১৪ আগস্ট ব্যাংকগুলোকে আরও ২টি চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ২ বার তাগাদাপত্র পাঠানোর পরও এক্সিম ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক সে সময় কোনো উত্তর করেনি। এজন্য এ ব্যাংক দুটোকে পরবর্তীতে আবারও চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে চলতি বছরের মার্চে এক্সিম ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক উত্তর পাঠালেও তাদের আগ্রাসী ব্যাংকিং রোধে আর এগোয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাবি, ব্যাংকিংখাতে সুদহার ৯/৬ নিশ্চিত করতে পারলেই ক্রেডিট কার্ডে সুদহার সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নমনীয়তার সুযোগে এখনও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে চড়া সুদে ঋণ বিতরণ করছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ সুদ আদায় করেছে ওয়ান ব্যাংক। ক্রেডিট কার্ডে এই ব্যাংকের সুদহার সাড়ে ৩১ শতাংশ। অন্য খাতে সর্বোচ্চ সুদ আদায় করা হয় ১৮ শতাংশ। এতে সর্বোচ্চ সুদের সাথে পার্থক্য হয়েছে সাড়ে ১৩ শতাংশ, যা ৫ শতাংশ থাকার কথা ছিল। এনসিসি ব্যাংকের সুদের পার্থক্য ১৬ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ১৫ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ১৩ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১২ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংকের সাড়ে ১১ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের সাড়ে ১০ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংকের সাােন্ডার্ড ব্যাংকের ৯ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংকের সাড়ে ৯ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক প্রজ্ঞাপন জারী করে কিন্তু বাণিজ্যিকগুলো সব সময় সে নির্দেশনা মানে না। এতে সুদের হার বেশী হয়। সেবা সাশ্রয়ী হয় না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে।
Posted ১০:১৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed