• খেলাপির দ্বারপ্রান্তে সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা

    আদম মালেক | ০৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ১২:৩৯ অপরাহ্ণ

    খেলাপির দ্বারপ্রান্তে সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা
    apps

    করোনা সংকটে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থদের খেলাপি তালিকাভুক্তিকরণ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ কমেছে দেড় হাজার কোটি টাকা। কিন্তু খেলাপির দ্বারপ্রান্তে সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আগামী জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে এসব ঋণের কিস্তি আদায় না হলে তা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবে।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণের কিস্তি পর পর ছয় মাস পরিশোধ না হলে সেটি খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। এ খেলাপি ঋণের আগের স্তর হলো এসএমএ অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ছয় মাস অতিক্রম করলেই তা খেলাপি ঋণে পরিণত হবে। খেলাপি ঋণ আবার তিন ধরনের হয়। ঋণের কিস্তি ছয় মাস অতিক্রম হলেই সেটি খেলাপি ঋণের নিম্ন স্তর বা নিম্ন্নমানের খেলাপি ঋণ হয়। ৯ মাস অতিক্রম হলেই ওই ঋণ সন্দেহজনক খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। আর এক বছর পার হলেই তা মন্দ বা কুঋণ হয়। এসব ঋণকে ব্যাংকিং খাতে আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ বলা হয়। এ ধরনের ঋণ আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলোর মামলা করার অনুমোদন রয়েছে।

    Progoti-Insurance-AAA.jpg

    করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব থেকে ব্যবসায়ীদের কিছুটা রেহাই দেয়ার জন্য এক বছরের জন্য ঋণ শ্রেণিকরণ থেকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে জুন মাস পর্যন্ত, এরপর আরো দুই ধাপে তা বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এ সময়ের মধ্যে কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলে তাকে ঋণখেলাপি বলা যাবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা কার্যকরের সময় আগামী ৩১ ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন কোনো নির্দেশনা না দিলে খেলাপি ঋণের আগের নীতিমালাই কার্যকর হবে।

    এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এসএমএতে থাকা ঋণ হিসাবগুলোকে খেলাপি হিসেবে মনে করে। তাদের মতে, এসএমএতে যেসব ঋণ হিসাব স্থানান্তরিত হয় সেগুলো নিয়মিত হয় খুবই কম। কখনো নিয়মিত ঋণে রূপান্তর হলেও পরে আবার খেলাপি হয়ে যায়। এ কারণে তারা এসব ঋণকে খেলাপি হিসেবেই মনে করে।


    এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এসএম মানেই এক ধরনের খেলাপি। আগের নিয়ম তিন মাসেই খেলাপি হতো। এখন সেটি ছয় মাস করায় একটু দেরিতে খেলাপি হবে। তবে করোনার প্রভাবে খেলাপি ঋণ বাড়বে। খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি থামাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও উদ্যোক্তাদের সতর্ক হতে হবে।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিয়মিত ঋণ রয়েছে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। সাড়ে ৯৪ হাজার কোটি টাকা রয়েছে খেলাপি ঋণ, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বাকি সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ বা অনিয়মিত ঋণ, যা বিশেষ হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। সরকারি খাতের প্রায় সব ব্যাংক ও কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে এ ঋণের পরিমাণ বেশি।

    ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আগামী জানুয়ারির পর থেকে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র ব্যাংকের সামনে বের হয়ে আসবে। গত এক বছরের জন্য ছাড় দেয়া হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে এক টাকাও পরিশোধ না করলে জানুয়ারি থেকে তা খেলাপি করা হবে না; কিন্তু আগের বকেয়া তিন মাস বা চার মাস বা পাঁচ মাস হিসাবে নিলে ফেব্রুয়ারি থেকেই ধীরে ধীরে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকবে। খেলাপি ঋণ জাম্প করতে থাকলে ব্যাংকগুলোর বর্ধিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। এ নিয়ে অনেক ব্যাংকই চিন্তিত রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে বিবেচনা করবে বলে কয়েকটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক মনে করেন।

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২০

    bankbimaarthonity.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    Archive Calendar

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০
    ১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
    ১৮১৯২০২১২২২৩২৪
    ২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
  • ফেসবুকে ব্যাংক বীমা অর্থনীতি