মঙ্গলবার ১৭ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x

খেলাপি ঋণের বোঝায় বন্ধের ঝুঁকিতে বেসিক ব্যাংক

  |   রবিবার, ০৪ আগস্ট ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   451 বার পঠিত

খেলাপি ঋণের বোঝায় বন্ধের ঝুঁকিতে বেসিক ব্যাংক

আদম মালেক :

খেলাপি ঋণের বোঝায় চরম সঙ্কটে বেসিক ব্যাংক। এ ঋণ আদায় হচ্ছে না বললেই চলে। ব্যাংকটির  ৮ হাজার ৮০৪ কোটি ১২ লাখ টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা যা মোট খেলাপির শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ মাত্র। এর সঙ্গে লেগেই আছে মুলধন ঘাটতিজনিত সমস্যা। বিভিন্ন সময় মুলধন সরবরাহ করেও সঙ্কটের উত্তরণ মেলেনি। তাই দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে বেসিক ব্যাংক।  এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল। ক্ষুব্ধ সরকার। ব্যাংকটির বন্ধের হুশিয়ারি এসেছে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, দুটি উপায় আছে। ব্যাংক হয় ভালোভাবে চলবে, নইলে বন্ধ হবে। এটি নির্ভর করবে আপনাদের ওপর। একটা সময় পর্যন্ত সমর্থন দেব, কিন্তু তা কোনোভাবে সীমাহীন নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেসিক ব্যাংকের  বিতরণকৃত ঋণ ১৫ হাজার ১১৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ৮শ ৪ কোটি ১২ লাখ  টাকা যা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৫৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। মুনাফা না থাকায় এবং নিজস্ব তহবিলের অভাবে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে পারছে না ব্যাংকটি। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩শ ৯৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবতে বসা বেসিক ব্যাংককে ২০১৪-১৭ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে সরকার। চলতি বছরের গোড়ার দিকেও মূলধন ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকটি সরকারের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা গ্রহণ করে। এতেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটি। মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারের কাছে আরো ৪ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে বেসিক ব্যাংক। সম্প্রতি আগামী ছয় বছরের জন্য ব্যাংকটিকে ৩ হাজার ২৫৩ কোটি ছাড় দিয়েছে সরকার।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বেসিক ব্যাংকে লুটপাটকারী কারও বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অথচ মূলধন ঘাটতির প্রকৃত তথ্য কৌশলে আড়াল করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ লেন, দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বেসিক ব্যাংকে কর্মী অনেক বেড়েছে যা অপ্রয়োজনীয়। সরকার চাইলে খেলাপির ভারে ন্যুজ্ব ব্যাংকটিকে বন্ধ করে দিতে পারে কিন্তু তা না করে একত্রীকরণ হওয়া ভালো। কিন্তু সকল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক সূচক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকটি যাচাই-বাছাই ছাড়া আগ্রাসীভাবে ঋণ দেয় যে এতে গ্রাহককে ঋণ দেয়ার নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত অতিক্রম করে ফেলেছে। এখন পর্যন্ত অতিক্রম করা সীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া নিয়মে বেসিক ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) হওয়ার কথা ছিল ৮৫ শতাংশ। কিন্তু গত মার্চে ব্যাংকটির এডিআর ছিল ১১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করে তা থেকে ৮৫ টাকা ঋণ বিতরণের কথা। কিন্তু বেসিক ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ দিয়েছে ১১৩ টাকা ৩৯ পয়সা, যা আগ্রাসী ব্যাংকিং হিসেবে বিবেচিত।

ব্যাংকটি গত মার্চ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে ১৫ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় অনিশ্চিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের  ৫৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসিক ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সংকট নতুন নয়। খেলাপি ঋণই ব্যাংকটির মূল সমস্যা। যে কারণে মূলধন ঘাটতি ও তারল্য সংকট থেকে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ ঋণ আটকে গেছে তাতে মূলধন সরবরাহ করেও লাভ হবে না। কারণ প্রভিশন ঘাটতি প্রায় তিন হাজার ৪শ কোটি টাকা। এ জন্য সরকারের উচিত বিশেষ ব্যবস্থায় পুরনো সব মন্দ ঋণকে আলাদা করে ব্যাংকটিকে পুনর্গঠন করা।

 

 

 

 

Facebook Comments Box

Posted ১২:৪৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৪ আগস্ট ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11746 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।