আদম মালেক | বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট | 497 বার পঠিত
ব্যাংক খাতে অনিয়ম দুর্নীতি মোকাবিলায় ব্যাংক কমিশন গঠনে একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রায় ৪ বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি ব্যাংক কমিশন। কবে কমিশন গঠন হবে তাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না।
২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাাফা কামালও ২০১৯ সালের বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংক কমিশন গঠনের কথা বলেন।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকখাত নিয়ে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। একটা আতঙ্ক, ভয়ঙ্কও ও ভঙ্গুর পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছি। তাই সংকট মোকাবিলায় ব্যাংক কমিশন গঠনের ঘোষণাকে সাধুবাদ জানাই।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এমন মানুষকে ব্যাংক কমিশনে আনতে হবে, যাদের দক্ষতা, যোগ্যতা, বিচক্ষণতা ও সততা থাকবে। তারা যাতে নির্মোহভাবে কাজ করতে পারেন, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। তাদের রাজনৈতিক সমর্থন দিতে হবে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তারা যে সুপারিশ করবেন, তা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক উদ্যোগ থাকতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নানা জটিলতায় আটকে আছে কমিশন গঠন। এ ছাড়া কমিশনের চেয়ারম্যান কে হবেন? কমিশনের ক্ষমতা কী হবে, কমিশনের সুপারিশ কতটুকু বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের মতভেদ। কারণ কমিশন গঠন করলেই হবে না। একইসঙ্গে কমিশনকে ক্ষমতা দিলেও হবে না, কমিশনের দেয়া সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। বাস্তবায়নের মানসিকতা বা আন্তরিকতা থাকতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে দ্বিধা-সংকোচ এখনো কাটেনি।
তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। তিনি এই কমিশনের চেয়ারম্যান করার জন্য অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ব্যাংক কমিশন করতে অনেকের সঙ্গেই কথাবার্তা বলতে হবে। যারা সময় দিতে পারেন, দেশের স্বার্থে কাজ করতে পারেন, তাদের মধ্য থেকেই কেউ এ কমিশনে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন। শিগগিরই চেয়ারম্যান নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে। কিন্তু এরই মধ্যে করোনা এসে গেলে আর কিছুই হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই ব্যাংকখাত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। সে সময় গঠন করা হয়েছিল ব্যাংক সংস্কার কমিটি। ৬ সদস্যের সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল সাবেক সচিব কাজী ফজলুর রহমানকে। ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ছিলেন ওই কমিটির অন্যতম সদস্য। পরবর্তীতে কাজী ফজলুর রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদকে করা হয় ব্যাংক সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান। ওই কমিটি ৩৭টি সভা করে ১১টি অন্তবর্তীকালীন প্রতিবেদন পেশ করেছিল। যদিও ওই সুপারিশের বেশির ভাগই সরকার পরিপালন করেনি।
জানা গেছে, ব্যাংক কমিশনের কাজের ধরন হতে পারে- খেলাপি ঋণের লাগাম টানাসহ দেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে এ-সংক্রান্ত আইন সংস্কারের বিষয়ে কাজ করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনভাবে কাজ করার নিশ্চয়তা বিধান করা। ইচ্ছাকৃত খেলাপি আর অনিচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ আলাদা করার কাজ করা। টাকা কীভাবে আদায় করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করা। আইনি কাঠামোর সংস্কার করা। খেলাপি ঋণসহ অন্যান্য সমস্যার মূল চিহ্নিত করা। ব্যাংক বোর্ড গঠনের জন্য নীতিমালা তৈরি করা। আইন প্রয়োগে সমস্যার চিহ্নিতকরণ এবং আইনের পরিবর্তনে কাজ করা এবং ব্যাংকিং খাতের দক্ষ, যুগোপযোগী ও সুশাসনভিত্তিক পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দেয়া।
Posted ৩:৪৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed