| শুক্রবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 1100 বার পঠিত
নারীকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি, উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রদান করে আসছে উইমেন এন্ট্রাপ্রিনিওয়ার্স নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ওয়েন্ড)।
নারীকে আর্থিকভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা ও কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে সহায়তার পাশাপাশি উৎসাহ প্রদান করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ৬ নারীকে সম্মাননা প্রদান করেছে ওয়েন্ড।
বৃহস্পতিবার (৮ মার্চ) রাজধানীর আইবিএ অ্যালামনাই ক্লাবে ‘প্রেস ফর প্রোগ্রেস’ অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: সোহেলা আহম্মদ, স্থপতি নুজহাত জেরিন, ফ্যাশন ডিজাইনার সাবিনা পান্নি, আইনজীবী নাহিদ মাহতাব, সরকারী কর্মকর্তা নাহিদা সোবহান, সাংবাদিক সামিয়া রহমান।
অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে অতিথিরা তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্তরা সাফল্যেও চূড়ায় উঠার গল্প তুলে ধরেন।
ফ্যাশন ডিজাইনার সাবিনা পান্নি সম্মাননা প্রদান করায় ওয়েন্ডকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কর্মক্ষেত্রে সফল নারীদের সম্মাননা প্রদানের ওয়েন্ড এর উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। সম্মাননা পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। অনেক নারী উদ্যোক্তা অনেক সমস্যায় রয়েছেন। যদি আগামী বছরের ৮ মার্চ পর্যন্ত আমরা যারা এ সম্মাননা পেলাম যেসব নারী উদ্যোক্তা নানা রকম অসুবিধার কারণে কোন রকম সাফল্য অর্জন করতে পারছেন না তাদেরকে সহযোগিতা করতে পারি তাহলে মনে হয় আজকের এ সম্মাননা স্বার্থক হবে।
আইনজীবী নাহিদ মাহতাব বলেন, আইন পেশাটা মূলত পুরুষতান্ত্রিক। এখানে সারা দিন চেম্বার করার পর রাতের বেলায়ও কাজ করতে হয়। আইন পেশায় নারী আইনজীবীদের গ্রহণযোগ্যতা সেইভাবে নেই। বিচার প্রার্থীরা ভাবে নারী আইনজীবীদের কাছে গেলে তারা বিচার সেইভাবে পাবেন কিনা। সেক্ষেত্রে আমাদের যোগ্যতা, মেধা দিয়ে প্রমাণ করতে হয় আমরাও পারি। এ সফলতার পেছনে আমার পরিবারের ভূমিকা রয়েছে। তবে সফলতার পেছনে সব কিছু সমন্বয় করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ সম্মাননা সামনে এগিয়ে যাবার উৎসাহ দেবে। আইনজীবী হবার ক্ষেত্রে নারীদের এখনো পরিবার থেকে উৎসাহ দেওয়া হয় না। এখন আইন পেশায় প্রায় ৬০% নারী রয়েছেন। এ সম্মাননার মাধ্যমে নারীরা এ পেশায় আসতে উৎসাহ পাবেন।
সরকারী কর্মকর্তা নাহিদা সোবহান সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিত্বশীল নারীদের এ সম্মাননা দেওয়ায় ওয়েন্ড কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ সম্মাননা শুধু ব্যক্তিগতভাবে আমাকে নয় পররাষ্ট্র নীতির সাথে সংযুক্ত বাংলাদেশের যেসব কর্মকর্তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করছেন তাদের প্রতি এ সম্মাননা। এর মাধ্যমে তারা এগিয়ে যাবার প্রেরণা পাবেন।
স্থপতি নুজহাত জেরিন এ সম্মাননা প্রদান করায় ওয়েন্ড কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমার পরিবারের কারণে আজকে আমি সফল। সেজন্য এককভাবে আমি এ সফলতা দাবি করতে পারি না। আজকে নারী দিবসে যদিও আমার কাজ দিয়ে আমাকে সফল হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু আমি মনে করি প্রতিটি নারী-মাকে নারী দিবসে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়েই আসবে আমাদের স্বার্থকতা।
ডা. সোহেলা আহম্মাদ বলেন, প্রোগ্রেসের ক্ষেত্রে শিক্ষা মুখ্য ভূমিকা রাখে। নারীকে সম্মান দেওয়া পরিবার থেকে শেখাতে হবে। নারীকে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে মাইন্ড সেটের পরিবর্তন ও সেলফ কনফিডেন্ট বাড়াতে হবে। নারীদের মূল স্রোতধারায় আনতে হলে মানসিক অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। আমার সফলতার পেছনে আমার বাবা-মা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন। ওয়েন্ড এর সম্মাননার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে প্রেরণা যোগাবে।
সাংবাদিক সামিয়া রহমান বলেন, নারী পুরুষ নয় আমি মানবতা বাদে বিশ্বাসী। যে কোন পুরস্কার মানুষের সমতার জন্য মানুষের অধিকারের জন্য। নারীর অধিকার মানে শুধু অর্থনৈতিক মুক্তি নয় নারীর অধিকার মানে তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা। সেটা যখন শুধু এ সমাজ নয় পুরো বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে তখন নারী-পুরুষ বলে কোন ব্যাপার না, সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে।
ওয়েন্ড এর প্রেসিডেন্ট ড. নাদিয়া বিনতে আমিন বলেন, সাধারণত দেখা যায় যারা সাফল্যের চূড়ায় তাদের সব সময় সম্মাননা দেওয়া হয়। ওয়েন্ড এর পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সফল নারীদের সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। সম্মাননা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ একটা বয়সের ক্যাটাগরি বিবেচনা করেছি। যাদের বয়স ৪৫ থেকে ৫৫ বছর। যারা এ বয়সে অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহে কর্মক্ষেত্রে আছেন, সফল হয়েছেন এবং চাকরিতে থেকে তাদের অবস্থান তুলে ধরছেন যা আমাদের এ বছরের শ্লোগান ‘প্রেস ফর প্রোগ্রেস’ এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তাদের মধ্য থেকে ৬ নারীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এ ৬ নারী নিজেদের কর্মক্ষেত্রে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছেন।
৬ ক্যাটাগরিতে কেন তাদের বেচে নেওয়া হল এ বিষয়ে ওয়েন্ড এর প্রেসিডেন্ট বলেন, ৬ ক্যাটাগরির মধ্যে সকলে নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। এ মধ্য বয়সে এসেই তারা যথেষ্ট সফল। এত দূর আসতে যাদের অনেক বাঁধা পেরিয়ে আসছে হয়েছে তাদের সাধুবাদ জানাতে এ সম্মাননা। তাদের অর্জনের জন্যই তারা যোগ্য পুরস্কার পেয়েছেন। যারা নিরবে কাজ করে যাই, যারা সফল কিন্তু তাদেরকে কেউ সেইভাবে চেনে না তাদেরকে আজকে সম্মাননা দেওয়া হয়। ওয়েন্ড এর উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে ওয়েন্ড এর উপদেষ্টা ও থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্মাননাপ্রাপ্তদের শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানে আইবিএ অ্যালামনাই ক্লাবের নারী সদস্য, ওয়েন্ড এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed