সোমবার ১৭ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

জানুয়ারিতে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ৮ হাজার ১২৮ কোটি টাকা

  |   বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   140 বার পঠিত

জানুয়ারিতে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ৮ হাজার ১২৮ কোটি টাকা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছরের ঘাটতি মেটাতে সরকারের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার কথা রয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা।

এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো থেকে নীট ঋণ না নিয়ে উল্টো ১১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। যার অর্থ ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট থাকায় সরকার ঋণ নিচ্ছে না।
ব্যাংকিং খাতে গত জানুয়ারি মাসে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ কমেছে ৮,১২৮ কোটি টাকা। বর্তমানে কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকটে থাকলেও বেশ কিছু ব্যাংকের এই অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে।

ব্যাংকাররা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাপক ডলার বিক্রি, কম আমানত রেট, ডলারের রেট ব্যাপক বৃদ্ধি ও কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি, গ্রাহকের নগদ অর্থ উত্তোলনে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা; এরপর তা কমতে কমতে জানুয়ারিতে এসে ঠেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকায়।

অক্টোবরের ১.৬৯ লাখ কোটি টাকা থেকে পরের মাসেই তারল্যের পরিমাণ দ্রুত নেমে দাঁড়ায় ১.৫৩ লাখ কোটি টাকায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ২০২২ সাল জুড়েই ব্যাংকগুলো ডলার সংকটে। এই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাপক ডলার কেনায় ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট দেখা দেয়। এছাড়া কিছু ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের তথ্য প্রকাশ হওয়ায় গ্রাহকের নগদ তারল্য ওঠানো ব্যাপক বেড়েছে, যার কারণে উদ্বৃত্ত তারল্য কমেছে।

তারা আরও বলেন, সাধারণত ব্যাংকগুলো সরকারি বিল-বন্ডের রেট বেশি হলে অতিরিক্ত তারল্য দিয়ে বিনিয়োগ করে। আবার বিল-বন্ডের রেট কমে গেলে বিনিয়োগের পরিমাণও কমে যায়। গত ১৫ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন মনিটারি পলিসিতে কনজ্যুমার লোনের সুদ হার রেট ৯% থেকে ১২% করেছে। যার কারণে অনেকের বিল-বন্ডে বিনিয়োগ ম্যাচিউরিটি হওয়ায় নতুন করে বিনিয়োগ করেনি। এ কারণেও অতিরিক্ত তারল্য কমেছে।

সংবিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত (এসএলআর) এবং নগদ রিজার্ভ অনুপাত (সিআরআর) বজায় রাখার পর অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
ক্যাশ আকারে মোট আমানতের ৪% সিআরআর এবং নন-ক্যাশ আকারে ১৩% এসএলআর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রাখা ব্যাংকগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯১-দিনের ট্রেজারি বিলগুলোর জন্য একটি নিলাম ডাকে, যেখানে ইল্ড রেট ছিল ৬.৮৪%, যা জানুয়ারির ৭.৪৫% থেকে কম।
ব্যাংকগুলো সেসব বিলে বিনিয়োগের জন্য নিলামে অংশ নেয়, যার মাধ্যমে সরকার বাজেটে ব্যয়ের জন্য ঋণ নেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, পাঁচ বছরের ট্রেজারি বন্ডের ইল্ড রেট ফেব্রুয়ারিতে ৮.২০% এ নেমে এসেছে, জানুয়ারিতেও এই হার ছিল ৮.২৯%।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জুন শেষে সরকারের ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সিকিউরিটিজ হিসেবে দায়ের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। এই ছয় মাসে সরকারের ব্যাংকগুলোর কাছে দায় কমেছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের সিকিউরিটিজ হিসেবে দায়ের পরিমাণ কমেছে, অর্থ হচ্ছে সরকার বেশি ঋণ পরিশোধ করছে। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। সরকার এই ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে আগের ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের ঘাটতি মেটাতে সরকারের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার কথা রয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো থেকে নীট ঋণ না নিয়ে উল্টো ১১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। যার অর্থ ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট থাকায় সরকার ঋণ নিচ্ছে না।
বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে স্থিতিশীল করতে এবং ব্যাংকগুলোকে তাদের আমদানি ব্যয়ে বাধ্যবাধকতা পূরণে সহায়তার জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে আর্থিক ব্যবস্থায় ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডলার বিক্রির ফলে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২.৬০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, ২০২১ সালের আগস্টেও এটি ছিল রেকর্ড ৪৮.৬ বিলিয়ন ডলার।
তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক লেনদেন এবং স্থানীয় বাজার, উভয় ক্ষেত্রে তারল্য সংকট কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে; যেহেতু বেশ কয়েক মাস পর ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে মুদ্রামান আবার নামতে শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় ক্যাশ মেইনটেনেন্সের পর জানুয়ারির শেষে ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮,৭০০ কোটি টাকায়, যা ডিসেম্বরে ছিল মাত্র ৫,৮০০ কোটি টাকা।

পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিক পুনঃঅর্থায়ন বা রিফাইন্যান্সিং স্কিম চালু করেছে যা ব্যাংকগুলোকে ঋণের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তার ভাষ্যে, বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো সুবিধার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সহায়তার গতি বাড়িয়েছে, যা তারল্য সংকট কমাতেও অবদান রেখেছে।

Facebook Comments Box
top-1

Posted ৬:০৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11556 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।