
বিশেষ প্রতিনিধি | শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 191 বার পঠিত
দীর্ঘ দিন ধরে গ্রাহকের বীমা দাবি ঝুলে আছে এবং নানাভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রমও বিঘ্নিত হচ্ছে এমন ছয়টি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
ইতিমধ্যে তিনটি কোম্পানির সঙ্গে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে আরো তিনটি কোম্পানির সঙ্গে এই বৈঠকের কথা রয়েছে। এরমধ্যে গত সপ্তাহে ১৯ মার্চ সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ২০ মার্চ গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২৩ মার্চ (রোববার) সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বৈঠকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আইডিআরএ’র মুখপাত্র মো. সোলায়মান, উপ-পরিচালক (নন লাইফ) ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে জানান, দীর্ঘ দিন ধরে যেসব কোম্পানির বকেয়া বীমা দাবি ঝুলে রয়েছে; তা নিষ্পত্তিতে কোম্পানিগুলো কী পরিকল্পনা নিয়েছে বা কী করণীয় রয়েছে সেসব বিষয় আলোচনা করতেই আইডিআরএ এই সভাগুলো ডেকেছে।
ইতিমধ্যে সভায় অংশ নেয়া গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন খান চৌধুরী জানান, কোম্পানি কীভাবে, কত সময়ের মধ্যে বকেয়া বীমা দাবি পরিশোধ করবে সে বিষয়ে একটি পরিকল্পনা চেয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, সভায় বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে ফারইস্ট লাইফের উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা সম্পর্কেই আইডিআরএ জানতে চেয়েছে। ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমানো নিয়েও কথা হয়েছে।
দেশে ব্যবসা পরিচালনা করা জীবন বীমা খাতের ৩৬টি কোম্পানির মধ্যে ৩২টির কাছে প্রায় ১১ লাখ গ্রাহকের অনিষ্পন্ন বীমা দাবি জমেছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এরমধ্যে একটি কোম্পানির অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণই দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা।
আইডিআরএ’র প্রকাশিত ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত দাবি সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানির মোট অনিষ্পন্ন বীমা দাবির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি ৩২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮২ টাকা। আলোচ্য সময়ে মোট দাবি উত্থাপন করা হয় ৫ হাজার ৪৪৮ কোটি ৮১ লাখ ২৪ হাজার ৬০৮ টাকা। এরমধ্যে কোম্পানিগুলো পরিশোধ করেছে ২ হাজার ৫৮ কোটি ৪৮ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৬ টাকা।
বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী, গ্রাহক কোম্পানিতে বীমা দাবির আবেদন করার ৯০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হয়। কিন্তু মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পার হলেও কিছু কোম্পানি দাবি পরিশোধ করছে না।
বিশাল পরিমাণের বীমা দাবি অনিষ্পন্ন থাকার বিষয়ে খাত সংশ্লিষ্টরা অপরিকল্পিত ও মন্দ বিনিয়োগকে দায়ী করছেন। তাছাড়া এজেন্টদের উচ্চহারের কমিশন দেওয়া ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ও দায়ী বলে মনে করেন তারা।
আইডিআরএ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি অনিষ্পন্ন বীমা দাবি রয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। এককভাবে এই কোম্পানির বীমা দাবি জমেছে ২ হাজার ৩১০ কোটি ৯১ লাখ ৫৮ হাজার ৪০৩ টাকা। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই কোম্পানির বীমা দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল ২ হাজার ৩৪৫ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। পরিশোধ করেছে ৩৪ কোটি ৯৪ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭ টাকা। অর্থাৎ পরিশোধ করা হয়েছে মোট দাবির মাত্র ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
অনিষ্পন্ন বীমা দাবিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ৯ মাসে এই কোম্পানির ২৩১ কোটি ৮ লাখ ৯ হাজার ১৭৩ টাকা দাবি উত্থাপন করা হয়। নিষ্পত্তি হয় এক কোটি ৮৭ লাখ ৩৯ হাজার ২৭৬ টাকা বা মাত্র ০.৮১ শতাংশ। অনিষ্পন্ন দাবি জমেছে ২২৯ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৮৯৭ টাকা।
দাবি পরিশোধে এরপরই পিছিয়ে আছে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। তিন প্রান্তিক মিলে এই কোম্পানির বীমা দাবি উত্থাপন হয় ১৭৬ কোটি ৬০ লাখ ৬৪৭ টাকা। পরিশোধ করা হয় মাত্র ৮ কোটি ৩০ লাখ ৮৬ হাজার ১৯৫ টাকা বা ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। অনিষ্পন্ন দাবি রয়েছে ১৬৮ কোটি ২০ লাখ ১৪ হাজার ৪৫২ টাকা।
অনিষ্পন্ন বীমা দাবিতে এরপরেই রয়েছে সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এই কোম্পানিতে বীমা দাবি উত্থাপন করা হয়েছিলো ১৪৫ কোটি ৮৫ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮৫ টাকা। পরিশোধ করেছে মাত্র এক কোটি ৭৩ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭১ টাকা বা ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। অনিষ্পন্ন দাবি রয়েছে ১৪৪ কোটি ১১ লাখ ৮৮ হাজার ১১৪ টাকা।
এসব কোম্পানি ছাড়াও দাবি নিষ্পত্তিতে পিছিয়ে আছে বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ও হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
Posted ৮:৫৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
bankbimaarthonity.com | rina sristy