সোমবার ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

টাকা তোলার লোক আছে বিনিয়োগের নেই

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   496 বার পঠিত

টাকা তোলার লোক আছে বিনিয়োগের নেই

পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে (আইপিও) নতুন কোম্পানিগুলো অর্থ তুলে নিচ্ছে। এগুলোর বেশিরভাগই বেশি প্রিমিয়াম নিয়ে অতি মূল্যায়িত হয়ে বাজারে আসছে। আর রেগুলেটররা হরদম এসব কোম্পানির অনুমোদন দিচ্ছে। ফলে বাজারে আসার পর প্রথম কয়েকমাস তিন থেকে চারগুণ বেশি দামে শেয়ার বিক্রি হলেও পরে তা ফেসভ্যালুতে আবার অনেকগুলো তারও নিচে নেমে আসছে। এতে করে একদিকে কোম্পানিগুলো বাজার থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছে। অন্যদিলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট বিনিয়োগকারীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ হেলাল বলেন, এ বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ তিন থেকে সাড়ে তিনগুণ বেশি। আর বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়ার লোক আছে, কিন্তু বাজারে টাকা বিনিয়োগের লোক কম। তাই আইপিও একদম বন্ধ করে দিতে হবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন কোম্পানিগুলো বাজারে আসার আগে তিন-চার বছর তেমন কোনো লভ্যাংশ না দিলেও বাজারে এসেই বোনাস শেয়ার ইস্যু করছে। আর তাদের উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা সেই বোনাস শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে শত শত কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে। কিন্তু পুনরায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে না। ফলে বাজারে শেয়ার মূল্য পতন হচ্ছে। আর এভাবে অর্থ চলে যাচ্ছে আর বাজারও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারের বড় সমস্যা হচ্ছে আস্থার সংকট, সুশাসনের অভাব ও অতিরিক্ত সরবরাহ। এগুলো সমাধানের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেই সরকারের।

এদিকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দরপতন চলছেই। প্রতিদিনই কমছে সূচক। লেনদেনেও চলছে খরা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের আশ্বাস এবং তারল্য সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ কোনো কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না। বাজারে পতন চলছেই। বৃহস্পতিবার দুই বাজারেই মূল্যসূচক কমেছে। ঢাকায় প্রধান সূচক ডিএসএক্সে কমেছে ৫২ পয়েন্ট। শতাংশ হিসেবে যা ১ দশমিক ০৭ শতাংশ। এই বাজারে অন্য দুই সূচকও ১ শতাংশ করে কমেছে। চট্টগ্রামে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৪৯ পয়েন্ট। এই সূচকও শতাংশ হিসাবে ১ শতাংশ কমেছে। গেলো সপ্তাহের পাঁচ দিনের চার দিনই দুই বাজারে সূচক পড়েছে। এই সপ্তাহে ডিএসইএক্স প্রায় ১৩০ পয়েন্ট হারিয়েছে।

বাজার বিশ্লেষক ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেছেন, মূলত তিনটি কারণে পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন হচ্ছে। কারণ তিনটি হচ্ছে, তারল্য সংকট, আর্থিক খাতের খারাপ অবস্থা এবং গ্রামীণফোনের সমস্যার সমাধান না হওয়া। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে যে তারল্য সংকট আছে সেটা রয়ে গেছে। ব্যাংকের সুদের হার এখনও বেশি। এটার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে আছে। বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরে খারাপ। পুঁজিবাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ হচ্ছে এই আর্থিক খাত। ব্যাংক-লিজিং সবগুলোর শেয়ারের দাম কমছে। ফলে সূচক কমেছে। শাকিল রিজভী মনে করেন, বাজারে এখন আস্থার সংকটই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আর এই তিন সমস্যা দূর না হলে বাজারে আস্থা ফিরবে না। বাজার স্বাভাবিক হবে না।

গত ২২ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে ব্যাংকগুলোকে আরও বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এই বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তার আগে ১৬ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ে বাজারের অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কমাল।

৩০ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উদযাপনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন বলেছিলেন, সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব শিগগিরই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। কিছু ভালো লাভজনক প্রতিষ্ঠান দু-এক মাসের মধ্যেই বাজারে আসবে। কিন্তু কোনো আশ্বাসই পুজিবাজারে ইতিবাচক ফল আনতে পারছে না।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন উচ্চ প্রিমিয়ামে যে কটি প্রতিষ্ঠানের আইপিও অনুমোদন করেছে তার মধ্যে ২৪টির শেয়ারের দাম ইসু্যমূল্যের নিচে নেমে গেছে। এমনকি লেনদেন শুরুর পর এক বছর পার হওয়ার আগেই শেয়ারের দাম ইসু্যমূল্যের নিচে নেমে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে একের পর এক দুর্বল কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে। ফলে আইপিওতে উচ্চ প্রিমিয়াম নেয়া কোম্পানির শেয়ারের দাম ইসু্যমূল্যের নিচে নেমে যাচ্ছে। এর অর্থ হলো- কোম্পানিগুলো যোগ্যতার অতিরিক্ত প্রিমিয়াম পেয়েছে। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপশি সার্বিক পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘পুঁজিবাজারে শুদ্ধি অভিযান’ এখন সময়ের দাবি বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১০ সালে পুঁজিবাজারে মহাধসের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে দেশের পুঁজিবাজার পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০১১ সালের মে মাসে এম খায়রুল হোসেনকে বিএসইসির চেয়ারম্যান করে বর্তমান কমিশন গঠন করে। এরপর টানা আট বছর খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি পরিচালিত হচ্ছে।

এ আট বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ৪৬টি কোম্পানি প্রিমিয়াম নিয়ে আইপিওতে শেয়ার ছেড়েছে। এর মধ্যে ২৪টির শেয়ারের দাম ইসু্যমূল্যের নিচে নেমে গেছে। এর মধ্যে দুটির দাম ফেস ভ্যালুর নিচে নেমেছে। এছাড়া পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারের দাম ইসু্যমূল্যের কাছাকাছি অবস্থান করছে।

প্রিমিয়াম নিয়ে আইপিওতে আসার পরও শেয়ারের দাম ফেস ভ্যালুর নিচে নেমে যাওয়া প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও অ্যাপোলো ইস্পাত। ২০১১ সালে আইপিও অনুমোদন পাওয়া জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ২৫ টাকা দামে শেয়ার ইসু্য করে পুঁজিবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এজন্য ১০ টাকা দামের একটি শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটি ১৫ টাকা প্রিমিয়াম নেয়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ছয় টাকা ৬০ পয়সায়।

প্রিমিয়াম নেয়ার পরও শেয়ারের দাম ফেস ভ্যালুর নিচে নেমে যাওয়া অপর প্রতিষ্ঠান অ্যাপোলো ইস্পাত ২০১৩ সালে আইপিওর মাধ্যমে বাজার থেকে ২২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এ টাকা উত্তোলনের জন্য কোম্পানিটি ১০ টাকা দামের একটি শেয়ারের বিপরীতে প্রিমিয়াম নেয় ১২ টাকা। অর্থাৎ আইপিওতে প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করা হয় ২২ টাকায়। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে পাঁচ টাকা ৬০ পয়সায়।

চলতি বছর তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে উচ্চ প্রিমিয়াম নিয়েছে দুটি কোম্পানি। এর মধ্যে একটির শেয়ারের দাম ইসু্যমূল্যের নিচে নেমে গেছে। শেয়ারের দাম ইসু্যমূল্যের নিচে নেমে যাওয়া এস্কয়ার নিট কম্পোজিট আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। এজন্য ১০ টাকা দামের একটি শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটি প্রিমিয়াম পেয়েছে ৩০ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিলে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হওয়া কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকা ৬০ পয়সায়। অর্থাৎ পাঁচ মাসের মধ্যে শেয়ারের দাম ইসু্যমূল্যের নিচে নেমে গেছে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:১২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।