বুধবার ৯ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডলারের একচেটিয়া আধিপত্যে ভাগ বসালো রুবল

পান্না কুমার রায় রজত   |   সোমবার, ০৬ জুন ২০২২   |   প্রিন্ট   |   618 বার পঠিত

ডলারের একচেটিয়া আধিপত্যে ভাগ বসালো রুবল

বর্তমানে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের বাজারটি মূলত ডলার-নির্ভর। অধিকাংশ দেশেই ডলার হলো রিজার্ভ কারেন্সি। অর্থাৎ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেদের সঞ্চয়ের ভাণ্ডারটি মার্কিন ডলারে সংরক্ষণ করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, লেনদেন ও বিনিয়োগও হয় ডলারের মাধ্যমেই। ডলারের মাধ্যমে হওয়া আর্থিক লেনদেন করতে হয় আমেরিকার অর্থব্যবস্থার মধ্যস্থতায়। ফলে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের ব্যবস্থার মধ্যমণি হলো আমেরিকা। সেই লেনদেন আমেরিকার আইন অনুসারেই চলে। মনে করুন, আপনি সিঙ্গাপুর বেড়াতে যাচ্ছেন। অনলাইনে আপনি হোটেল বুকিং দিতে চান, আপনাকে ডলার পেমেন্ট করতে হবে। চাইলে ডলারের বাইরে অন্য মুদ্রায়ও পেমেন্ট করা যাবে। কিন্তু ডলারে মূল্য পরিশোধ সহজ এবং সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য। একটা উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টা পরিষ্কার করা যেতে পারে। নিউইয়র্কে অবস্থিত দ্য ক্লিয়ারিং হাউজ ইন্টারব্যাংক পেমেন্টস সিস্টেম বা চিপসের মাধ্যমে প্রতিদিন আন্তঃদেশীয় এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৮ লক্ষ কোটি ডলার।

চিপসের সদস্য সংখ্যা মাত্র ৪৩। কোনো ব্যাংক চিপসের সদস্য নয়, এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেন করতে হলে এই সদস্য ব্যাংক বা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে করতে হয়। চিপসের সংশ্লিষ্ট অংশগ্রহণকারী সংস্থা বা সংস্থাগুলো তখন কাজ করে ওই প্রক্রিয়ার প্রতিনিধি বা এজেন্ট হিসেবে। এই কার্যক্রমকে বলা হয় ‘করেসপনডেন্ট ব্যাংকিং সিস্টেম’।
যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যাদের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং অনেক দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ তখন তাদের কাছেই ছিল। স্বর্ণের ওপর ভিত্তি করে ডলারের মূল্যমান নির্ধারণ হয়। সে সময় ৪৪টি দেশ ডলারকে বৈদেশিক বাণিজ্যের মুদ্রা হিসেবে ব্যবহারে সম্মত হয়। সেটাই ছিল মুদ্রাবাজারে ডলারের আধিপত্যের শুরু। এভাবেই ডলার বিশ্বে একক আধিপত্য তৈরি করে। সে কর্তৃত্ব আজো অব্যাহত। আন্তর্জাতিক লেনদেন কার্যপ্রক্রিয়ার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো দ্য সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন্স বা সুইফট। এটি একধরনের নিরাপদ বার্তা প্রেরণ পরিষেবা, যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দু’দেশের ১১ হাজারেরও বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর সদরদফতর বেলজিয়ামে। গত বছর দৈনিক গড়ে ৪ কোটি ২০ লক্ষ মেসেজ আদান-প্রদান হয়েছে সুইফটের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ৪২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। এই রিজার্ভ অর্থের পুরোটা দেশে নেই, আছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইর্য়ক শহরে। এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়। সব দেশের ক্ষেত্রেই সত্য। সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা না করে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে বেয়াড়া দেশকে শায়েস্তা করার বা তার অবাঞ্ছিত আচরণ বন্ধ করতে চাপ দেয়ার পদ্ধতিটি বহু পুরোনো। তার মানে হচ্ছে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল তা যুক্তরাষ্ট্র সুইফট সিস্টেম থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে তাদের রিজার্ভ আটকে দিয়েছে। তাই রাশিয়া এখন তাদের রিজার্ভ ডলার ব্যবহার করে কিছু কিনতে বা বিক্রি করতে পারছে না।

সুইফট বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও কোনো দেশের ওপর অবরোধ আরোপের আইনি ক্ষমতা তাদের নেই। সুইফট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য কারো ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ব্যাপারটি নির্ভর করে কোনো দেশের সরকারের ওপর। সুইফটের রাজনৈতিক ব্যবহারের কারণেই এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সে কারণে রাশিয়া পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বলছে এখন থেকে যারা তাদের কাছ থেকে তেল গ্যাস কিনবে তাদেরকে অবশ্যই রুবলে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। না হলে তারা কোনো পণ্য বিক্রি করবে না। তার মানে এখন থেকে ক্রেতা দেশগুলোকে ডলার ইউরো বাদ দিয়ে রুবল কিনতে হবে। সেটার অর্থ হচ্ছে ডলারের একচেটিয়ার আধিপত্যে রুবল ভাগ বসালো। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রুবল প্রবেশ করলো। ডলারের কর্তৃত্ব কিছুটা হলেও খর্ব হলো ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লো। প্রশ্ন হচ্ছে, রুবল কি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে? রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ ও ইউক্রেনকে সহযোগিতা করার কারণে রুশ প্রশাসন একটি অবন্ধু দেশের তালিকা প্রকাশ করে। সে সময় তারা ঘোষণা করে যে রাশিয়ার কাছ থেকে যেসব তেল-গ্যাস কিনবে তাদেরকে অবশ্যই রুবলে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তাদের এ ঘোষণা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য ছিল অকল্পনাতীত। রাশিয়া প্রতি মাসে পশ্চিমা দেশগুলোতে ৩০ বিলিয়ন ইউরোর জ¦ালানি বিক্রি করে। তাদের শর্ত অনুযায়ী, এখন থেকে ইউরোপকে এ অর্থ রুবলে পরিশোধ করতে হবে। ইতোমধ্যে জার্মানিসহ ইউরোপের ৪টি দেশ রুবলেই তাদেরকে দাম পরিশোধের ঘোষণা দিয়েছে। রুবলে অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় বুলগেরিয়া ও পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। বুলগেরিয়ার ৯০ ভাগ এবং পোল্যান্ডের ৫৩ ভাগ গ্যাস আসে রাশিয়া থেকে। এসডিটিডির তথ্য মোতাবেক, রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য দেশটির মুদ্রা রুবলে পরিশোধ করতে ইউরোপের আরো দশটি কোম্পানি রাশিয়ার রাষ্ট্রমালিকানাধীন জ¦ালানি কোম্পানি গাজপ্রমে হিসাব খুলেছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ইউরোপের অন্তত ২০টি কোম্পানি গাজপ্রমে হিসাব খুললো। অর্থাৎ পুতিনের শর্ত মেনেই রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল ইউরোপের কোম্পানিগুলো গাজপ্রমে হিসাব খুলছে।

পশ্চিমাদের এ নজিরবিহীন অর্থনৈতিক আক্রমণে টলে ওঠে মস্কোর অর্থনীতি। ডলারের বিপরীতে ধস নামে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলে। ৪০ শতাংশ মান হারিয়ে মার্চের ৭ তারিখে ডলারের বিপরীতে রুবলের মান দাঁড়ায় ১৩৯। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঠাট্টা করে রুবলকে রাবল বলে অভিহিত করেন। কিন্তু পুতিন শুধু যুদ্ধের ময়দানেই নয়, অর্থনীতির লড়াইয়ে ও পশ্চিমাদের সমান টেক্কা দিতে পারেন তিনি। রুশ মুদ্রা দ্রুত ফিরে আসে যুদ্ধ পূর্বের অবস্থানে। যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল। এ ছাড়া ইউরোর বিপরীতে সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ শক্তিশালী অবস্থানে রুবল। রাশিয়ার মুদ্রা তহবিল নিয়ন্ত্রণ রুবলে বিদেশি কোম্পানিগুলোর গ্যাসের মূল্য পরিশোধ এবং বকেয়া করপোরেট ট্যাক্স পরিশোধের চাপ বৃদ্ধির কারণে রুশ মুদ্রা বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। মস্কো এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুসারে, গত ২১ মে ২০২২ সকালে প্রতি ডলারের বিপরীতে ৫৭ দশমিক ৬৭ রুবলে বিক্রি হয়েছে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসের পরে এই প্রথম ডলার ও ইউরোর বিপরীতে রাশিয়ার মুদ্রা এতো বেশি শক্তিশালী হলো। এছাড়া ইউরোর বিপরীতে শতকরা ৫ ভাগ শক্তি অর্জন করেছে রুবল। মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা দেয়া সত্ত্বেও ডলার ও ইউরো মুদ্রার বিপরীতে রুবল শক্তিশালী হয়েছে, যা সত্যিই উদ্বেগজনক। দ্য ইকোনমিস্ট প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, রুশ অর্থনীতি ধসের পূর্বাভাসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে দেশটি। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুঁজিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ও উচ্চ সুদহার কার্যকর করে সমর্থন দেয়ায় দেশটির মুদ্রা রুবলের পতন ঠেকানো গেছে।

রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনে সামরিক হামলার কারণে আমেরিকার নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়ার ওপর একগুচ্ছ আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু এই বিশ্বায়িত অর্থব্যবস্থায় রাশিয়া বিচ্ছিন্ন কোনো অস্তিত্ব নয়, জ¦ালানি ও পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে সে দেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী। তাই এই আর্থিক নিষেধাজ্ঞার আঁচ লাগছে তার সঙ্গে বাণিজ্য সূত্রে যুক্ত দেশগুলোর গায়েও। সেসব দেশ ক্ষতির মাত্রা বিচার করে বিকল্প ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে। তাহলে রাশিয়ার ওপর এমন হাজার হাজার নিষেধাজ্ঞা যে হতে পারে তা কি পুতিন আঁচ করতে পারেনি আগে? আমরা একটু পেছনে থাকিয়ে দেখি। এর আগে ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের একটি অংশ ক্রাইমিরা দখল করার জন্য সেখানে সৈন্য পাঠানোর পর তাদের ওপর প্রথম দফায় আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং ওই ঘটনা থেকে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা গ্রহণ করেছে। এরপর থেকেই রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলার জন্য কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এমন এক রুশ অর্থনীতি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে যার ওপর নিষেধাজ্ঞার তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। আন্তর্জাতিক রিজার্ভে এ বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যে রুশ সরকারের আন্তর্জাতিক রিজার্ভের পরিমাণ রেকর্ড পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। বৈদেশিক মুদ্রা এবং স্বর্ণেও এই রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলার। বিশ্বের সব দেশের তুলনায় রাশিয়ার এই রিজার্ভ চতুর্থ বৃহত্তম যা রুশ মুদ্রা রুবলের পতন ঠেকিয়ে একে চাঙ্গা রাখতে একটা উল্লেখ্যযোগ্য সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা হতে পারে। বিবিসি তথ্য মোতাবেক, বর্তমানে রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার মাত্র ১৬ শতাংশ ডলারে রাখা। পাঁচ বছর আগেও এর পরিমাণ ছিল ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে রাশিয়ার বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ১৩ শতাংশ রাখা চীনা মুদ্রা রেনবিনমিতে। এসবই পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে এবং এটা করা হয়েছে আমেরিকার নেতৃত্বে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য। এছাড়া রাশিয়ার অর্থনৈতিক কাঠামোতেও বড় ধরনের কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে দেশটি বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগের ওপর তাদের নির্ভরতা কমিয়েছে। একইসাথে তারা পশ্চিম বাজারের বাইরে নতুন নতুন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যেও সুযোগ সম্ভাবনা যাচাই করে দেখছে। তাদের এই নতুন কৌশলের একটি বড় অংশ চীন। আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ লেনদেনের ব্যাপারেও রাশিয়া তাদের নিজস্ব একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া রাশিয়া তার বাজেট ও কাটছাঁট করে এনেছে। প্রবৃদ্ধির বদলে এখন তারা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি গত এক দশকে প্রতি বছর গড়ে এক শতাংশেরও কম হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় দেশটি আগের চেয়ে আরো বেশি শক্ত নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। রাশিয়া যা করছে এর মধ্য দিয়ে কার্যত তারা বিকল্প এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলছে যাতে তারা পশ্চিমা বিশ্বের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার আঘাত সামাল দিতে পারে।

চীনের উত্থানে যুক্তরাষ্ট্র শঙ্কিত। রাশিয়াও নিজেদের অবস্থান সংহত করেছে। তবে চীন রাশিয়া নিজেদের অবস্থান বৈরিতা ভুলে একযোগে কাজ করে সেটা হবে বিশ্বরাজনীতি ও পরাশক্তি ক্ষমতাতন্ত্রের এক নতুন সমীকরণ। আমেরিকাকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা চীন ও রাশিয়ার আছে। চীন রাশিয়া কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি বৈশ্বিক মুদ্রা ও সুইফট ব্যবস্থা চালুর কথা বলছে। চীন সৌদি আরব ইউয়ান ব্যবহার নিয়ে অনেকদিন ধরে আলাপ চালিয়ে আসছে। সেটা না হলেও বিশ্ব অর্থনীতিতে রুবল ইউয়ান প্রবেশ করছে। কেননা আইএমএফ ইতিমধ্যে ইউয়ানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এগুলো অবশ্যই ডলারের জন্য সুখবর নয়। সুইফটের বিকল্প সমতাভিত্তিক বৈশ্বিক মুদ্রাব্যবস্থা যেদিন চালু হবে, সেদিন থেকে বিশ্বে আমেরিকার একক আধিপত্যের যবনিকাপাত হবে।

করোনা মহামারীর সময়ে উন্নয়নশীল অনেক দেশের ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে অনেক কিস্তি জমে গেছে। এখন খাদ্য ও জ¦ালানি পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বিদেশি মুদ্রার সংকটে পড়ে কিস্তি পরিশোধে সমস্যায় পড়ছে অনেক দেশ। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের জেরে বেড়ে চলা খাদ্য সংকট বিশ্বকে একটি মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিবে যদি এই যুদ্ধ চলতে থাকে, তবে খাদ্যপণ্যের রেকর্ড দাম বৃদ্ধি লাখ লাখ মানুষকে অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে যা একটি মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। রাশিয়া ও ইউক্রেন এই দুটি দেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্য গমের রফতানিকারক। রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় গম রফতানি কারক দেশ, কিন্তু যুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে এই সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু গম নয় বাংলাদেশ এই দুটি দেশ হতে ডাল, ইস্পাত, সার, বীজও আমদানি করে থাকে। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বব্যাপী রফতানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে তার প্রভাব পোশাক রফতানি খাতে, কাঁচামাল সরবরাহে, রফতানি ও আমদানি বাণিজ্যে পড়বে। আমরা এমন পরিস্থিতি দেখতে চাই না।

ডলারের আধিপত্য না থাকায় আরেক পরোক্ষ মানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্তৃত্বও কিছুটা খর্ব হওয়া আইএমএফকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে যেভাবে তার পছন্দের অর্থনৈতিক মডেল গ্রহণে বাধ্য করছে সেটা আগামী দিনে আর সহজ নাও হতে পারে। এই যুদ্ধ সহজেই শেষ হচ্ছে না বলেই ইতোমধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ন্যাটো মহাসচিবসহ অনেকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য এ যুদ্ধ আরো কয়েক বছর দীর্ঘ হতে পারে। সেটা হলে বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতিতে বেশকিছু পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠবে। তার মধ্যে একটি ডলারের বিকল্প মুদ্রার প্রচলন। কারণ রাশিয়া তার বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তার নিজস্ব মুদ্রা নিয়ে অগ্রসর হবে এবং রুবল সহসাই ডলারের বিকল্প না হয়ে উঠতে পারলেও বিশ্ববাণিজ্যে স্থান করতে পারলে তাতেই বা কম কি?

 

 

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:১৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৬ জুন ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।