বিবিএনিউজ.নেট | মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০১৯ | প্রিন্ট | 630 বার পঠিত
নানা অনিয়ম ও কারচুপির মধ্যদিয়ে সোমবার অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নূর ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানী। সহকারী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন।
সোমবার রাত সাড়ে ৩টায় ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। এর আগে ১৮টি আবাসিক হলের ফল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১২ হলে ছাত্রলীগ ও ৬টি হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
এর আগে ঢাবির বিভিন্ন হল ঘুরে ডাকসু নির্বাচনের বেশকিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। বিশেষ করে রোকেয়া হলে প্রার্থীদের সামনে ব্যালট বাক্স খুলে তা সিলগালা না করা, কুয়েত মৈত্রী হলে বস্তা ভর্তি সিল দেয়া ব্যালট উদ্ধার এবং মুহসীন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটার লাইনে দাঁড়াতে ছাত্রলীগের বাধা দেয়ার ঘটনা অনেকটা প্রকাশ্যেই দেখা গেছে।
জানা গেছে, বিধি অনুসারে ভোট শুরুর আগে প্রার্থীদের সামনে সব ব্যালট বাক্স খুলে তা সিলগালা করার কথা থাকলেও রোকেয়া হলে এ নিয়ম মানা হয়নি। হলের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ, ছয়টি ব্যালট বাক্স তাদের সামনে সিলগালা করা হলেও তিনটি ব্যালট বাক্স তাদের না দেখিয়েই সিলগালা করা হয়েছে। যাতে আগেই ছাত্রলীগের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিয়ে ব্যালট ঢোকানো আছে। তবে হল প্রভোস্ট জিনাত হুদা বিষয়টি এ সময় অস্বীকার করেন। পরে দুপুর ১টার দিকে ওই তিনটি ব্যালট বাক্সে ব্যালট পেপার ভর্তি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সে খবর পেয়ে বাম ও কোটা আন্দোলনের নেতারা সেখানে ছুটে গেলে কোটার ভিপি প্রার্থীকে ছাত্রলীগের নারী কর্মীরা মারধর করেন।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা জানান, ভেতরে ভোট দিতে দেরি হচ্ছে বলে ভোটার লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। তবে প্রার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রদল কিংবা অন্য জোটের ভোটাররা যাতে ভোট দিতে না পারে এজন্য ভোট গ্রহণে অযথা বিলম্ব করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হলে গিয়ে দেখা যায়, দুই তালার ভোট কেন্দ্র থেকে মূল সড়কের মুহসীন হলের মাঠ পর্যন্ত লাইন লম্বা হয়ে গেছে। সাংবাদিক দেখেই ভোটার এসে জানাতে শুরু করেন সকাল ৭টা থেকে তারা দাঁড়িয়ে থাকলেও ভেতরে লাইন অগ্রসর হচ্ছে না। পরে দুই তলার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে হলটির প্রভোস্ট সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথমে চরম দুর্ব্যবহার করেন।
কিন্তু পরে আবার বলেন, নিচে গিয়ে তিনি কথা বলবেন। তার সঙ্গে হলটির সামনে এসে ভোট কেন্দ্র না আগানোর বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার হলে এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। খুব শিগগিরই লাইন এগিয়ে যাবে।’
প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলার সময় সেখানে ছাত্রদলের হলের জিএস প্রার্থী আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি তিনবার ভোট কেন্দ্রে গিয়েছি। প্রতিবারই ছাত্রলীগ আমাকে এবং আমার অন্য লোকদের মেরে বের করে দিয়েছে। আমি প্রভোস্টকে জানালেও তিনি মুখে বলেন দেখছি। কিন্তু আমাকে যারা মেরেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। প্রভোস্টের কাছে বিচার দিয়ে আমি ন্যায় বিচার পাইনি। এখন আপনাদের সাংবাদিকদের কাছে বললাম। এখন প্রভোস্ট কী বলবে আমি জানি না।’
তখন প্রভোস্ট বলেন, ‘আমাকে ভেতরে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এখন দেখব।’
হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে হলটির ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী লাইন নিয়ন্ত্রণ করছেন। উপস্থিত বিরোধী প্রার্থীরা এ সময় এসে জানান, তাদের কাউকে কেন্দ্রে যেতে দিচ্ছেন না সানি। তিনি একাই কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং তার পছন্দমতো লোকদের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে সময়ক্ষেপণ করছেন এবং যারা ভোট দিয়ে এসেছেন তাদেরই আবারও লাইনে এনে দাঁড় করাচ্ছেন। বিরোধী সব প্রার্থীই দাবি করেন, সানির ছাত্রত্ব নেই; কিন্তু ভুয়া আইডি বানিয়ে তিনি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করছেন।
বিষয়টি নিয়ে মেহেদী হাসান সানীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, ‘আমি ভোট দেয়ার জন্য দাঁড়িয়েছি। কোনো কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার কেন্দ্র থেকে এক ব্যক্তিকে প্রভোস্ট নিজে বের করে দিচ্ছেন। পরে ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তিনি হলটির ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী মো. এরশাদ মাহমুদ। তিনি দাবি করেন, ‘কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়া হচ্ছে এমন তথ্য পেয়ে আমি সেখানে গেলে প্রভোস্ট মকসুদ কামাল আমাকে বের করে দেন।
বিজয় একাত্তর হলে গিয়ে দেখা যায়, ভোট কেন্দ্রের সামনে হলটির প্রভোস্ট সফিউল আলম ভূঁইয়া বসে আছেন। তার অনুমতি নিয়ে ভেতরে গেলে, সেখানকার বিরোধী প্রার্থীরা বলেন, আরিফ শেখ নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী ব্যালট ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে এ ঘটনা প্রভোস্টের কানে আসলে তিনি গেটে এসে বসেন। তারপর ছাত্রলীগের সবাই সরে গেছেন। প্রভোস্ট নিজেও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘অনিয়মের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি। আমি নিজে এখানে এসে বসেছি। অনিয়ম করার চেষ্টা করলে আমার হাত থেকে কেউ ছাড় পাবে না।’
জিয়া হলে দেখা যায়, সেখানকার গেট বন্ধ। বাইরে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরা জানান, তারা সকাল সাড়ে ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। কথা বলতে বলতে দেখা যায় দুই শিক্ষার্থীকে গেট থেকে বের করে দিচ্ছেন হলটির প্রভোস্ট জিয়া রহমান। তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করায় তাদের বের করে দেয়া হয়েছে।
পরে ওই দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা চার ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও প্রবেশের অনুমতি পাননি। ভেতরে থাকা কৃত্রিম লাইনে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ভেতরে ঢুকতে চাইলে প্রভোস্ট তাদের বের করে দেন।
সুফিয়া কামাল হলে দেখা যায়, সেখানকার হলের ভেতরে কোনো পুরুষ প্রার্থীকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া না হলেও ছাত্রলীগের এজিএস প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন সেখানে অবস্থান করছেন। তার সামনে এসেই এক মেয়ে এসে জানতে চান তিনি কেনো এসেছেন। তখন সাদ্দাম হোসেন বলেন, এখানে আসতে আমার কোনো আইনগত বাধা নেই।
Posted ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed