| মঙ্গলবার, ০১ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 939 বার পঠিত
বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে কমে গেছে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা। এ মাসে নতুন বিও হিসাব খোলা হয়েছে মাত্র আট হাজার। আগের মাসে (নভেম্বর) বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয় ৩২ হাজার। আর গত ছয় মাসে পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৫৬ হাজার।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বছরের শেষ দিকে এসে সেকেন্ডারি মার্কেটের অনেক শেয়ারের দর অস্বাভাবিকহারে কমে যায়। অভিহিত দরের নিচে নেমে যায় ৬২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। ২০ টাকার কম দরে পাওয়া যায় ৭৫ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। এর মধ্যে অনেক ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। কম টাকায় কেনা যাচ্ছে এসব শেয়ার।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, মূলত এ কারণেই প্রাইমারি মার্কেট ছেড়ে সেকেন্ডারি মার্কেটে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে নতুন বিও হিসাব খোলার হার কমে গেছে। কারণ যাদের একটি হিসাবে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ রয়েছে তাদের অনেকেই নতুন কোম্পানি এলে অন্যের নামে বিও খুলে এসব কোম্পানির শেয়ার পেতে আবেদন করেন। বর্তমানে তুলনামূলক সেকেন্ডারি মার্কেটের শেয়ার সস্তা হওয়ায় অনেকেই প্রাইমারিতে আবেদন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। যার জের ধরে বিও খোলার সংখ্যা কমে গেছে।
মূলত ২০১০ সালের পর থেকে বিও অ্যাকাউন্ট উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকে। বর্তমানে মোট বিও অ্যাকাউন্টের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে শেয়ারশূন্য। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে মোট বিওর মধ্যে শেয়ারশূন্য এবং ব্যবহার করা হচ্ছে না—এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৭৭ হাজার ৯ হাজার ৭৯৫টি। এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীর বিও রয়েছে ২০ লাখ ২৭ হাজার পাঁচটি। একইভাবে নারীদের বিও রয়েছে সাত লাখ ৩৯ হাজার ২১২টি। আর কোম্পানির বিও রয়েছে ১২ হাজার ৫৬৯টি।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছে না। সে কারণে সক্রিয় বিওর সংখ্যা বাড়ছে না। অন্যদিকে প্রাইমারি মার্কেটে বিনিয়োগ করার জন্য যারা অ্যাকাউন্ট খোলেন তারা লটারিতে বিজয়ী হতে না পারলে অনেকে আর অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করেন না। সে কারণে সচল বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা কমেছে।
এ প্রসঙ্গে ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, এখন পুঁজিবাজারে কিছু শেয়ারদর এমন পর্যায়ে রয়েছে যে, এখানে বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে কারণে অনেকে প্রাইমারি মার্কেট ছেড়ে এই মার্কেটে আসছেন। বিও অ্যাকাউন্ট কমার এটি একটি কারণ হতে পারে।
এর আগে সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করায় বাতিল হয়ে গেছে প্রায় আড়াই লাখ অ্যাকাউন্ট। সেকেন্ডারি মার্কেটের মন্দা পরিস্থিতি, সেইসঙ্গে আইপিও বাজারের নাজুক পরিস্থিতির জন্য এসব অ্যাকাউন্ট ঝরে গেছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, বর্তমানে বাজারচিত্র পরিবর্তিত হয়েছে। তাছাড়া প্রায় প্রতি মাসেই রয়েছে আইপিও, যে কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরে আসছেন।
নিয়মানুযায়ী, জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেইসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এই ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।
Posted ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed