বিবিএনিউজ.নেট | মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০১৯ | প্রিন্ট | 708 বার পঠিত
সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আফগানিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। এরই সঙ্গে বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় জয়ের পাশাপাশি সেমিফাইনালে খেলার আশাও টিকিয়ে রাখল টাইগাররা। এ দিন অনেক কীর্তি গড়ার ম্যাচে হাফসেঞ্চুরির সঙ্গে পাঁচ উইকেট তুলে নেন সাকিব। সোমবার টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগানিস্তান অধিনায়ক গুলবাদিন নাঈব। বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায় রোজ বোলে শুরু হয় ম্যাচটি। যেখানে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬২ রান তোলে। জবাবে ৪৭ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার আগে ২০০ রান করতে পারে আফগানিস্তান। ২৬৩ রানের টার্গেটে নেমে ভালো ব্যাট করতে থাকা আফগানদের দলীয় ১১তম ওভারে ছন্দপতন হয়। যেখানে নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে রহমত শাহকে তামিম ইকবালের ক্যাচে ফেরান সাকিব আল হাসান। ৩৫ বলে তিনটি চারে ২৪ রান করেন রহমত। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৩০ রান করে বাংলাদেশ বোলারদের হতাশা বাড়াচ্ছিলেন গুলবাদিন নাইব ও হাশমতউলস্নাহ শহিদী। কিন্তু ২১তম ওভারের পঞ্চম বলে ও দলীয় ৭৯ রানে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন শহিদী। মুশফিকুর রহিমের দুর্দন্ত স্টাম্পিংয়ে আউট হওয়ার আগে ৩১ বলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়া ১১ রান করেন তিনি। নিজের পঞ্চম ও দলীয় ২৯তম ওভারে এসে জোড়া উইকেট তুলে নিলেন সাকিব।
প্রথম বলে গুলবাদিন নাইবকে ও তৃতীয় বলে নতুন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবিকে (০) সরাসরি বোল্ড করেন সাকিব। নাইব ৭৫ বলে তিনটি চারে ৪৭ করেছেন। এরই সঙ্গে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে এক হাজার রান ও ৩০ উইকেট নেয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়েন সাকিব। এর ম্যাচেই সাকিব ফিফটি করার পর এক হাজার রান পূর্ণ করেন। আর ২৮ উইকেট নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন। পরে আসগর আফগানকেও ব্যক্তিগত ২০ রানে বিদায় করে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন এই তারকা। দৌড়ে রান নিতে যাওয়া ইকরাম আলী খিল লিটন দাশের থ্রোতে রান আউট হন। ষষ্ঠ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। নাজিবুলস্নাহ জাদরানকে (২৩) মুশফিকের স্টাম্পিংয়ে ফিরিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পাঁচ উইকেট দখল করার কীর্তি গড়েন সাকিব। আর পরের ওভারে নতুন ব্যাটসম্যান রশিদ খানকে ব্যক্তিগত দুই রানে ফিরিয়ে নিজের প্রথম উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজুর রহমান। আর আফগানদের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুজিব উর রহমানকে শূন্য রানে বোল্ড করে ম্যাচে একমাত্র উইকেটটি তুলে নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
১০ ওভারে এক মেডেনসহ মাত্র ২৯ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন সাকিব। এছাড়া মুস্তাফিজ দুটি উইকেট দখল করেন। আর মোসাদ্দেক ও সাইফউদ্দিন একটি করে উইকেট ভাগাভাগি করে নেন। এর আগে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬২ রান তোলে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমের ৮৩ রানের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস, সাকিবের ফিফটি ও শেষদিকে মোসাদ্দেক হোসেনের ঝড়ো ৩৫ রানের ইনিংসে ভর করে মাঝারি এই সংগ্রহ পায় টাইগাররা। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হলেও দলীয় ২৩ রানে এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে আউট হতে হয় টাইগার ওপেনার লিটন দাসকে। টিভি রিপেস্নতে দেখা যায় বলটি কিছুটা ঘাসে ছুঁয়ে ফিল্ডারের হাতে উঠেছে। কিন্তু তবু অনেকক্ষণ দেখার পর থার্ড আম্পায়ার হিসেবে থাকা আলিম দার লিটনকে আউট ঘোষণা করেন। দলীয় ২৩ ও ব্যক্তিগত ১৩ রানে মুজিব উর রহমানের বলে হাশমতুলস্নাহ শহীদির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। শুরুতে লিটন দাসের বিদায়ের পর সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে তামিম ইনিংস জোড়া দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ভালোই। দুজনে মিলে যোগ করেন ৫৯ রান। কিন্তু দলীয় ৮২ রানে আফগান স্পিনার মোহাম্মদ নবির বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন এই টাইগার ওপেনার। বিদায়ের আগে ৫৩ বল খেলে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৬ রান। চলতি বিশ্বকাপে বাকি ম্যাচগুলোর মতো এই ম্যাচেও হেসেছে সাকিবের ব্যাট। চলতি বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় ও সবমিলিয়ে ৪৫তম ওয়ানডে ফিফটির দেখা পেয়েছেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এটি চলতি বিশ্বকাপে তার ৫০-এর অধিক রানের স্কোর। ৬৫ বলে মাত্র ১ বাউন্ডারিতে এসেছে এই ফিফটি। কিন্তু ফিফটির দেখা পাওয়ার পর আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়লে শেষ হয় তার ৫১ রানের ইনিংস। মুজিবের তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরেছেন সৌম্য সরকার। ওপেনিং থেকে পাঁচে নামিয়ে আনা এই বাঁহাতি মুজিবের বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে ফিরেছেন। যদিও রিভিও নিয়েছিলেন সৌম্য, রিপেস্ন দেখে অবশ্য আউটের ঘোষণাই আসে। তবে মাঠের আম্পায়ার আউট না দিলেও পারতেন। উইকেট পতনের ধাক্কা সামলে আফগান পেসার দৌলাত জাদরানের করা ইনিংসের ৩৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লং অনে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন মুশফিক এটি চলতি বিশ্বকাপে তার দ্বিতীয় ও সবমিলিয়ে ৩৫তম ওয়ানডে ফিফটি।
জাদরানের করা ইনিংসের ৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলে তুলে মারতে গিয়ে নবির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিক। অল্পের জন্য টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি মিস করা মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ৮৭ বলে ৮৩ রান। ১ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারিতে সাজানো এই ইনিংস। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানের ইনিংস এসেছিল তার ব্যাট থেকে। আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেছিলেন সেঞ্চুরি। মুশফিক বিদায় নিলেও ইনিংসের একদম শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস উপহার দেন মোসাদ্দেক। ৪টি বাউন্ডারিতে সাজানো এই ইনিংস। বল হাতে আফগান স্পিনার মুজিব ৩টি, নাইব ২টি এবং জাদরান ও নবি ১টি করে উইকেট পেয়েছেন। এই ম্যাচে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে ১ হাজার রানের মাইলফলক গড়েছেন সাকিব। ২০১৯ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নারকে (৪৭৬ রান) পেছেনে ফেলে শীর্ষ রান সংগ্রাহকের তালিকায় এক নম্বরে উঠে এসেছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। সোমবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ার্নারকে টপকাতে সাকিবের প্রয়োজন ছিল ২২ রান। ৪২৫ রান নিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে প্রয়োজনীয় ২২ রান তুলে আবার রান সংগ্রহের শীর্ষ স্থান পুনরুদ্ধার করেন সাকিব। অন্যদিকে ব্যক্তিগত ৩৪ রান করে সাকিব প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে ১০০০ রানের মালিক হয়েছেন।
Posted ২:৫৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed