
এস জেড ইসলাম | বৃহস্পতিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট | 352 বার পঠিত
পুঁজিবাজারভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি জনতা ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ না করার অভিযোগ উঠেছে ।
গত ১৪ আগস্ট বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে এ অভিযোগ জানায় পারটেক্স সুগার মিল্স এবং আম্বার রোটর মিল্স লি: নামে দুই গ্রাহক প্রতিষ্ঠান।
দাবি প্রদান না করার বিষয়ে জনতা ইন্স্যুরেন্সের সিইও বশির আহম্মেদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন- ‘ইন্স্যুরেন্সে ফল্স (মিথ্যা) ক্লেইম থাকবেই। আপনাদের সম্পাদক আমার পরিচিত। আপনারা আপনাদের মতো করে লিখেন। এ বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।’
সূত্র জানায় ২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল বঙ্গোপসাগরের স্বন্দীপ চ্যানেলের উকরির চরে প্রতিকূল আবহাওয়ায় ডুবে যায় এমভি সি মুন নামে একটি জাহাজ। এসময় জাহাজটিতে প্রায় ১২’শ মেট্রিক টন চিনি ছিল, যা পুরোটাই সমুদ্রগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এতে গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয় প্রায় ৬.২৩ কোটি টাকা। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি সমুদ্র পরিবহন বিভাগের আওতাধীন শিপিং অফিসের কাছে জাহাজডুবির প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি জানতে চাওয়া হয়।
তাদের দাখিলকৃত প্রতিবেদন থেকে পণ্য বাবদ ৫.৫০ কোটি টাকা এবং জাহাজ মেরামত বাবদ ২.২০ কোটি টাকার ক্ষতি উল্লেখ করা হয়। অবশ্য দূর্ঘটনার মাত্র একমাস পূর্বে জনতা ইন্স্যুরেন্স থেকে নৌ-বীমা পলিসি গ্রহণ করে পারটেক্স সুগার মিল্স লিমিটেড। এই পলিসির বীমা মূল্য ১৬২.৪৯ কোটি টাকার বিপরীতে ধার্য্যকৃত ৫৩.৮১ লাখ টাকা প্রিমিয়ামও সংগ্রহ করে জনতা ইন্স্যুরেন্স। কিন্তু প্রায় এক যুগ ধরে বীমা দাবি পরিশোধ করছে না কোম্পানিটি।
এ বিষয়ে চিঠিতে গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটি জানায়, দূর্ঘটনার পর বীমা দাবি আদায় করতে বীমা প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র দেয়া হয় এবং বেশ কয়েকবার চিঠি চালাচালি হয়। শেষ পর্যন্ত অভিযোগ দাখিল করার সময় ও তার আগে চলতি বছরের ২০ জুন আবারো চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৭ সালের ৩ মে এবং ৬ জুলাই পর্যন্ত দুই দফায় মাত্র ২০ লাখ টাকা প্রদান করার পর এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আর কোন যোগাযোগ করেনি। ফলে উপায়ন্তু না পেয়ে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অভিযোগ দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি।
অপরদিকে আম্বার (পূর্বের পারটেক্স) রোটর মিল্স লিমিটেডের বিষয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর গাজিপুরস্থ কোম্পানির কারখানায় এক ভয়াবহ অগ্নি দূর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জানায় তারা। ওই দিনই এ বিষয়ে জয়দেবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং- ১৭৮৬) করা হয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে বিষয়টি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বিভাগের উপ-পরিচালককে অবহিত করে ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রতিবেদন চাওয়া হয়। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ক্ষয়ক্ষতি ১৮.৭৪ কোটি টাকা এবং উদ্ধারকৃত মালামালের আর্থিক পরিমাণ ২.২৯ কোটি টাকা হয়েছে বলে একটি প্রতিবেদন দেয় অগ্নি নির্বাপক বাহিনী। অবশ্য আগের প্রতিষ্ঠানের মতো এখানেও দূর্ঘটনার ১০ মাস ও ৬ মাস আগে দুটি অগ্নি বীমা পলিসি জনতা ইন্স্যুরেন্স থেকে গ্রহণ করে আম্বার রোটর মিল্স লিমিটেড। এবং পলিসির বীমা মূল্য ৪৩.৩০ কোটি টাকার বিপরীতে ধার্য্যকৃত ২১.৩৮ লাখ টাকা প্রিমিয়ামও সংগ্রহ করে বীমা কোম্পানিটি। কিন্তু দূর্ঘটনার সাড়ে পাঁচ বছর পরও গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করেনি জনতা ইন্স্যুরেন্স।
এই প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও, প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র দেয়া হয় এবং বেশ কয়েকবার চিঠি চালাচালি হয়। এর প্রেক্ষিতে বীমা কোম্পানির পক্ষ থেকে ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়। কিন্তু সেগুলো প্রদান করার পর কোম্পানি থেকে আর কোন প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ জুন আবারো দাবী প্রদানে কোম্পানিকে চিঠি দিলেও তাতে সাড়া দেয়নি বীমা প্রতিষ্ঠানটি। ফলে উপায়ন্তু না পেয়ে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অভিযোগ দাখিল করে আম্বার রোটর মিল্স।
Posted ১১:১২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy