সোমবার ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x

নতুন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ তোরসার অজানা কথা

বিবিএনিউজ.নেট   |   শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   481 বার পঠিত

নতুন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ তোরসার অজানা কথা

মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ৩৭ হাজারেরও বেশি প্রতিযোগী নিবন্ধন করেছিলেন । সেখান থেকে সেরা ১২ জন বাছাই করা হয়। তাদের নিয়েই শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠিত হলো ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৯’- এর গ্রান্ড ফিনালে। সৌন্দর্য, শিক্ষা, স্মার্টনিটি, উপস্থাপনা, পারফর্মে এই ১২ জনই ছিলেন অনন্যা। তবুও বিচারকের রায় বেছে নিয়েছে সেরাদের সেরাকে।

যখন সেরা ১২ থেকে টপ সিক্স বাছাই করতে নাম ঘোষণা করছিলেন উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস ও শ্রাবণ্য তৌহিদা তখন থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে সুনসান নিরবতা। কে বাদ পড়বেন সেই দুশ্চিন্তা ছেয়ে গেল সবাইকে। একে একে সেরা ছয় ও সেরা তিন বাছাই হলো। সেখানে টিকে রইলেন জান্নাতুল ফেরদৌস মেঘলা, ফাতিহা মিয়ামি ও রাফাহ নানজিবা তোরসা।

প্রথম রানার আপ হিসেবে দেবাশীষ বিশ্বাস ঘোষণা করলেন ফাতিহা মিয়ামির নাম। এরপর চাপা উত্তেজনা বিরাজ করা মঞ্চে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয় রাফাহ নানজিবা তোরসার নাম। চারদিকে তখন করতালি আর অভিনন্দনের উষ্ণ চিৎকার। কেমন ছিলো সেই মুহূর্তটি যখন নিজের নামটি শোনা হলো চ্যাম্পিয়ন হিসেবে?

চোখে মুখে রাজ্য জয়ের হাসি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে তোরসা বলেন, সত্যি কথা বলতে অনুভূতি প্রকাশের ভাষা নেই। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু একটা ভয়ও ছিলো। কারণ যারা সেরা ১২ তে এসেছে সবাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যতা রাখে। আমরা একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছি। জানি কে কেমন। সেখানে সবাইকে রেখে নিজের নামটি বিজয়ী হিসেবে শুনতে পারাটা অনেক বড় আনন্দের ও প্রাপ্তির।

‘আমার মনে হয় প্রেজেন্টেশন, সামাজিক কার্যক্রম, নিজেকে প্রকাশের দক্ষতা আমাকে এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অন্যরাও ছিলো অসাধারণ। বিশেষ করে সেরা ছয়ে যারা ছিলো তারা প্রত্যেকেই এই মুকুট জয়ের যোগ্যতা রাখে। কিন্তু সেটা আমি মাথায় দিতে পেরে গর্বিত’- যোগ করেন তোরসা।

কখনো মনে হচ্ছিলো না যে বাদ পড়তে পারেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তোরসার ভাষ্য, ‘বারবার মনে হচ্ছিলো। কারণ ওই যে বললাম যারা সেরা ১২ তে ছিলো সবাই দারুণ। সেরা ছয় বাছাইয়ে যখন এক এক করে অনেকেই বাদ পড়ছিলো মনে হচ্ছিলো এই বুঝি আমিও বাদ পড়ে গেলাম।’

মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন তোরসা। প্রত্যাশা এখন আকাশ ছোঁয়ার। নিজেকে তৈরি করেছেন তিনি। নানা রকম গ্রুমিংয়ে সৌন্দর্য ও বুদ্ধিকে কীভাবে স্মার্টলি উপস্থাপন করতে হয় শিখেছেন। তোরসা বলেন, ‘ফেরদৌস স্যার, মৌসুমী ও ফারনাজ আলম ম্যামসহ বেশ চমৎকার কয়েকজন গুণী মানুষদের সান্নিধ্যে সমৃ্দ্ধ হয়েছি। এগুলো মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে কাজে লাগবে। সামনে আরও কিছু সময় হাতে পাওয়া যাবে যেসব গ্যাপ আছে তা পূরণ করার। আগে যারা বিশ্বসুন্দরীর মঞ্চে গিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে তাদের অভিজ্ঞতাও জানার সুযোগ হবে। আশা করছি দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবো।’

পজিটিভ মাইন্ডের মেয়ে তোরসা সবসময়ই অনেক আত্মবিশ্বাসী। ছোটবেলা থেকেই আমি নানা রকম প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য পেয়েছেন। জাতীয় পর্যায়েও কিছু অর্জন আছে। যদিও বিশ্বসুন্দরীর মঞ্চটা এসব থেকে আলাদা। তবুও তার বিশ্বাস চেষ্টা করলে অনেকদূর যেতে পারবো। সবার দোয়া ও সমর্থন চান তিনি।


ছোটবেলা থেকেই গান, নৃত্য, আবৃত্তি, অংকন, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় পারদর্শী তিনি। থিয়েটার, মডেলিং, মূকাভিনয়েও শিক্ষা রয়েছে তার। আবৃত্তি সংগঠন ‘নরেন’ এবং থিয়েটার সংগঠন ‘ফেইম’ এর সাথে যুক্ত আছি। সামাজিক সংগঠন লিও ক্লাব এবং রেডক্রিসেন্টেরও সদস্য তোরসা।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্বর্ণপদকসহ অসংখ্য পুরষ্কার পেয়েছেন। ২০০৮ সালে ‘লিটল মিস চিটাগাং’ প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে লোকনৃত্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিশু–কিশোর প্রতিযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছিলেন। ২০১০ সালে জাতীয় শিশু–কিশোর প্রতিযোগিতায় ভরতনাট্যম নৃত্যে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন তোরসা। সেই বছর এনটিভি মার্কস অলরাউন্ডারে প্রতিযোগিতার হয়েছিলেন প্রথম রানার আপও।

এর বাইরে নানা সময় আবৃত্তি, ছবি আঁকা ও নাচে দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন পুরষ্কার জিতেছেন তোরসা। তৌকির আহমেদের ‘হালদা’ সিনেমায় একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন তিনি।

সবকিছুতেই তার প্রেরণা হিসেবে কাজ করেন মা। এই প্রতিযোগিতার বেলাতেও তিনি ছিলেন আড়ালের শক্তি হয়ে। তবে তোরসা কৃতজ্ঞ তার শিক্ষালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। সেখানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়ছেন তিনি দ্বিতীয় বর্ষে।

তোরসা জানান, ‘আমার ক্যাম্পাসও জয়ের জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। যখন সবাই জানতে পারলো যে আমি মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে সেরা ১২ জনের একজন হয়েছি সেখানে হৈ চৈ পড়ে গেল। আমার ক্যাম্পাসের বন্ধুরা, বড় ও ছোট ভাইবোনেরা আমার জন্য ভোট চেয়েছেন। এটা আমাকে দারুণভাবে প্রেরণা দিয়েছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে। সবার কাছে কৃতজ্ঞ আমি।’

মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মঞ্চে জার্নিটা ছিলো অসাধারণ। সবসময় মিস করবেন বলে দাবি করে তোরসা বলেন, ‘আমরা পরিবার হয়ে উঠেছিলাম। বিশেষ করে সেরা ৩৫ জন মিলে অনেক সময় কাটিয়েছি। এরপরই তো সংখ্যাটা কমতে থাকলো। অনেক মজার মজার স্মৃতি জমে আছে। এগুলো চিরদিন মনে থাকবে। মিস করবো সবাইকে। আশা করছি যোগাযোগটা থাকবে। আর যারা এখানে অংশ নিয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন জানাতে চাই আমি। কারণ সবাই অনেক গর্জিয়াস আর স্মার্ট লেডি।’

একটা বেশ মজবুত প্লাটফর্ম ধরা দিয়েছে তোরসার কাছে। এটাকে কীভাবে কাজে লাগাতে চান? তোরসার বলেন, ‘এখনো তেমন করে কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। আপাতত মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চের জন্য তৈরি হবো। সেখান থেকে ফিরে বাকিসব ভাবনা। তবে শোবিজে কাজ করার ইচ্ছে আমার ছিলো। চেষ্টা করবো সেই ইচ্ছেটাকে পূরণ করতে। সেইসঙ্গে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও কিছু কাজ করতে চাই। বিশেষ করে দেশের মেয়েদের স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে আমার।’

তোরসা চট্টগ্রামের মেয়ে হলেও তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়াতে। তোরসার বাবার নাম শেখ মোর্শেদ। তিনি ছিলেন পেশায় চট্টগ্রাম কোর্টের আইনজীবী। তোরসার বাবা মারা গেছেন ২০১৪ সালে। আজ জীবনের দারুণ সাফল্যের এই দিনে বাবাকে মিস করছেন তিনি।

তবে মা শারমিন মোর্শেদ এবং একমাত্র ছোট ভাই তুরাজের সঙ্গে আনন্দটা ভাগ করে নিতে ভুল করছেন না। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই আত্মীয় স্বজনরা সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এই ভালোবাসাকেই নিজের পথ চলার প্রেরণা করে নিতে চান রাফাহ নানজিবা তোরসা। যার হাতে এখন বাংলাদেশের অনেক স্বপ্ন।

Facebook Comments Box

Posted ৩:৩৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।