সোমবার ১০ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x

নন-লাইফে কমিশন বন্ধে বিআইএ’র সভাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   69 বার পঠিত

নন-লাইফে কমিশন বন্ধে বিআইএ’র সভাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক

নন লাইফ বীমা খাতে এজেন্ট কমিশন শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অংশগ্রহণকারীরা।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নন লাইফ বীমা খাতে এজেন্ট কমিশন বাতিলসহ সাত দফা প্রস্তাব দিয়ে এ বিষয়ে সম্মতি থাকলে সিইওদের একশ টাকার একটি স্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করার আহ্বান জানান বিআইএ প্রেসিডেন্ট। তবে কমিশন বাতিলে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার এই প্রস্তাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখান মুখ্য নির্বাহীদের অনেকে। এটিকে বিব্রতকর এবং বিআইএ’র সঙ্গে বেমানান বলেও মন্তব্য করেন তারা। সভায় আইডিআরএ নির্ধারিত কমিশন বাতিল এবং বহাল রাখার প্রস্তাবের পক্ষে বিপক্ষে মতামত দেন মুখ্য নির্বাহীরা। অনেকেই আইডিআরএ নির্ধারিত কমিশন বহাল রাখার পক্ষে যেমন মতামত দিয়েছেন, তেমনি অনেকে মত দিয়েছেন এই কমিশন পুরোপুরি বাতিলের পক্ষে।

একশ টাকার স্ট্যাম্পে সাত দফা সম্বলিত অঙ্গীকারনামা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে বিআইএ নেতৃবৃন্দ অফিসিয়ালি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইএ’র একাধিক নেতা ব্যাংক বীমা অর্থনীতির সঙ্গে আলাপে বলেছেন, এ উদ্যোগ নন লাইফ বীমা খাতের ভালোর জন্যই। অঙ্গীকারের কিছু শর্ত নিয়ে সভায় আপত্তি এসেছে সেগুলো সংশোধন করে পরবর্তীতে উপস্থাপন করা হবে।

বৈঠকে উপস্থিত অনেকে বলেছেন, এ ধরনের অঙ্গীকার নেয়া ও অঙ্গীকার ভঙ্গে শাস্তিমূলক পদক্ষেপে সম্মতি নেয়ার এখতিয়ার বীমা মালিকদের সংগঠন বিআইএ’র আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এটি বিআইএ’র কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।

খাত সংম্লিষ্টরা বলছেন, কোনো আইন মানতে অংশীজনদের সদিচ্ছা থাকতে হবে, সচেতনতা থাকতে হবে। কোনো অঙ্গীকারে স্বাক্ষর নিয়ে এটি মানানো যায় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত অংশীজনদের কয়েকজন বলেন, কমিশন বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, আলোচনা হতে পারে। কিন্তু বিআইএ যে স্ট্রাটেজি নিয়েছে সেটি যথাযথ হয়নি। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া, অনুমতি ব্যতীত কোনো সিইও পাবলিক ডিক্লারেশনে সই করতে পারেন না।
নন লাইফ বীমা খাতে কমিশন বন্ধে বাংলাদেশে নন-ট্যারিফ মার্কেট, সলভেন্সি মার্জিন চালু, পুনঃবীমা মুক্তকরণের মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অংশীজনদের কয়েকজন।

অপরদিকে নন লাইফে এজেন্ট কমিশন শূন্য করতে হলে বীমা আইন ও এজেন্ট নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স সংক্রান্ত প্রবিধানমালা সংশোধন করতে হবে বলে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল)।

নন লাইফ বীমা খাতে এজেন্ট কমিশন শূন্যতে নামিয়ে আনা নিয়ে চলমান আলোচনার প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বুধবার তিনি এ মত দেন।
নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল) বলেন, “২০২১ সালের মার্চে আইডিআরএ নন লাইফে এজেন্ট কমিশন শূন্য করে দেয়। তবে একই বছরের নভেম্বর মাসে ‘বীমা এজেন্ট (নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা, ২০২১’ জারি হওয়ার পর আবারও কমিশন ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। মূলত কমিশন শূন্যের সিদ্ধান্তটি বীমা আইন ২০১০-এর ৫৮(১) ধারা এবং প্রবিধানমালার ৬, ৭ ও ৮ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”

তিনি বলেন, “বিদ্যমান আইনে এজেন্ট, এজেন্ট নিয়োগকারী বা ব্রোকার ছাড়া অন্য কাউকে প্রিমিয়াম সংগ্রহের জন্য পারিশ্রমিক দেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে নন লাইফ কোম্পানিগুলোর উন্নয়ন কর্মকর্তারা প্রিমিয়াম আয়ের ভিত্তিতে যে আর্থিক সুবিধা পান, তা আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। সম্প্রতি আইনের সংশোধনী প্রস্তাবেও ৫৮(১) ধারা পরিবর্তনের উদ্যোগ দেখা যায়নি, যা পরিবর্তন করা জরুরি।”

বিআইএ’র সাবেক প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “এজেন্ট প্রবিধানমালা অনুযায়ী নন লাইফের এজেন্টদের ৭২ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ শেষে তিন বছরের জন্য আইডিআরএ লাইসেন্স নিতে হয় এবং নবায়ন ফি দিয়েও তা হালনাগাদ করতে হয়। এই এজেন্টদের আয়ের ওপর সরকার রাজস্বও পায়। এমতাবস্থায় লাইসেন্স বাতিল না করে কমিশন শূন্য করলে তা আইনি প্রশ্ন তৈরি করতে পারে। তাই বীমা আইন ও প্রবিধানমালা—দুটিই সংশোধন করা দরকার।”

তিনি আরও যোগ করেন, “যেহেতু ব্যক্তি এজেন্টই নন লাইফ খাতে একমাত্র মার্কেটিং ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল, তাই সঠিক প্রক্রিয়া ছাড়া ২০২১ সালের মতো তড়িঘড়ি করে কমিশন শূন্য করা হলে কিছু কোম্পানির প্রিমিয়াম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে।”

বিআইএ’র বৈঠকে নন-লাইফের ব্যবসা পরিচালনার বিষয়ে মুখ্য নির্বাহীদের কাছ থেকে ৭টি বিষয়ে অঙ্গীকার নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়।
‘বাংলাদেশের নন-লাইফ বীমা খাতের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা আনায়নের লক্ষ্যে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা/ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের-অঙ্গীকারনামা’ শিরোনামে অঙ্গীকারনামায় বলা হয়-
“বাংলাদেশের নন-লাইফ বীমা খাতের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায্য প্রতিযোগিতা ও শূন্য কমিশন প্রথা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নন-লাইফ বীমা কোম্পানীসমূহের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দের একটি যৌথ অঙ্গীকারনামা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজন সেহেতু, আমরা নন-লাইফ বীমা কোম্পানীসমূহের নিম্নোক্ত ক্রমিক নম্বর ১ হইতে ৪৫ পর্যন্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ এই যৌথ অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষরদানসহ নিম্নবর্ণিত বিষয়ে ঐক্যমত হইয়া স্বাধীন প্রবৃত্তিমূলে এই মর্মে অঙ্গীকার ব্যক্ত করিতেছি যে, অনুচ্ছেদ-১ : আমরা নন-লাইফ বীমাখাতে বিরাজমান লাগামহীন ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অতিরিক্ত কমিশন প্রদান, অনৈতিক প্রলোভন এবং আইন ও বিধিমালার পরিপন্থী উপায়ে ব্যবসা অর্জনের মানসিকতা পরিহার করিয়া বীমা খাতে নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন কর্তৃক কার্যকর উদ্যোগ ও গৃহীত পদক্ষেপকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন দান করিব; অনুচ্ছেদ-২ : আমরা বীমা আইন, ২০১০, সংশ্লিষ্ট প্রবিধান, বিধিমালা ও প্রজ্ঞাপনসমূহ যথাযথভাবে অনুসরণপূর্বক আমাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করিব এবং অধীনস্থ কর্মকর্তা, শাখা ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীদের দ্বারাও উক্ত বিধিবিধান কঠোরভাবে পরিপালন নিশ্চিত করিব; অনুচ্ছেদ-৩ : আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করিব যেনো কোনো প্রলোভন, অনৈতিক প্রভাব কিংবা অবৈধ উপায়ে অন্য কোনো বীমা কোম্পানীর চলমান/নবায়নযোগ্য ব্যবসা আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর না হয় এবং আমাদের অধীনস্থ কর্মকর্তা, উন্নয়ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এই ধরনের কার্যক্রম হইতে সম্পূর্ণভাবে বিরত রাখিব; অনুচ্ছেদ-৪ : বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শূন্য (০%) এজেন্ট কমিশন হার সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন, সার্কুলার বা নিদের্শনা জারী হইলে আমরা এবং আমাদের অধীনস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ তাহা যথাযথভাবে, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করিব; অনুচ্ছেদ-৫ : উপরোল্লিখিত শর্তাবলীর কোনোটি কাহারো দ্বারা লঙ্ঘিত হইলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত যে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা আমরা বিনা আপত্তিতে গ্রহণ করিব এবং উক্ত সিদ্ধান্ত মানিয়া চলিতে বাধ্য থাকিব এবং যে কোনো বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে পারস্পারিক আলোচনা, মধ্যস্থতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধানের প্রচেষ্টা গ্রহণ করিব; অনুচ্ছেদ-৬ : এই অঙ্গীকারনামায় উল্লেখিত সকল তথ্য ও কার্যক্রম সম্পূর্ণ গোপন এবং অনধিকৃত প্রকাশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ রাখার ব্যাপারে আমরা একমত পোষণ করিলাম এবং অনুচ্ছেদ-৭: আমরা আমাদের স্ব-স্ব কোম্পানীর পরিচালনা ও কার্যক্রমে এই অঙ্গীকারনামার বিষয়গুলো কঠোরভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকিব ।

 

 

Facebook Comments Box
বিষয় :

Posted ৯:৪৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Page 1

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।