
নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট ২০২১ | প্রিন্ট | 673 বার পঠিত
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর একটি সার্কুলার জারি করে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। যেখানে সড়ক আইন ২০১৮ এর আলোকে মোটরযানের ‘তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বীমা’ বাতিল করে এবং নতুন করে কোনো বীমা কোম্পানিকে এই বীমা পলিসি ইস্যু না করতে বলা হয়। কিন্তু বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ নির্দেশ অমান্য করে গত ৭ মাস যাবৎ এই পলিসি ইস্যু করেছে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স। বিষয়টি নজরে আসার পরই কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এমনটা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জানা গেছে, নতুন সড়ক আইন হওয়ায় এবং বীমা কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) অনুরোধের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বীমা বাতিল করে একটি সার্কুলার জারি করে আইডিআরএ। সার্কুলারে তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বীমা-সংক্রান্ত পলিসিটি বাতিল করা হয়। তবে যারা ইতোমধ্যে পলিসিটি ইস্যু করেছেন তারা পলিসির মেয়াদ পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখবেন বলেও জানায় আইডিআরএ। পলিসি বাতিল করায় নতুন করে এই পলিসির আওতায় বীমা করার সুযোগ নেই। তবে আইডিআরএ’র এ নির্দেশনা মানেনি দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, যা বীমা আইন লঙ্ঘনের শামিল। কেননা আইনে বীমাখাতের উন্নয়নের সকল প্রকার আদেশ ও নির্দেশনার ক্ষমতা আইডিআরএকে দেয়া হয়েছে।
এই আইন ও নির্দেশনা লঙ্ঘনের দায়ে প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য জানতে চেয়ে গত ২৮ জুলাই দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সকে শোকজ নোটিশ দেয় কর্র্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ১২ আগস্ট শোকজের জবাব দেয় প্রতিষ্ঠানটি। দেশ জেনারেলের পক্ষ থেকে জবাবে বলা হয়, ২২ ডিসেম্বর ২০২০ থেকে ১০ জুলাই ২০২১ পর্যন্ত প্রায় ৭ মাসে ১৩২৫টি তৃতীয়পক্ষের বীমা পলিসি ইস্যু করে। এর মধ্যে ১১২৭টি পলিসির প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ১৯৮টি পলিসিতে শুধু যাত্রী ও চালকদের জন্য প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা হয়েছে। এমনটা স্বীকার করে এর সম্পূর্ণ দায় শাখা ব্যবস্থাপকদের ওপর চাপিয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে সিইও’র চলতি দায়িত্বরত মো. আবুল কাসেম। লিখিত জবাবে তিনি জানান, কিছু শাখা অফিস কোম্পানির নির্দেশনা অমান্য করে পলিসি ইস্যু করায় তাদের পুনরায় নিষেধ করে সতর্ক করা হয়।
এ বিষয়ে কোম্পানির সিইও আবুল কাসেমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সফটওয়্যার অটোমেশন হওয়ায় আসলে এটা হয়ে গেছে। এটা মূলত অ্যাক্সিডেন্টলি। আমরা এ জন্য আইডিআরএ’র কাছে জবাব দিয়েছি।’ তবে পলিসি ইস্যুর এই ঘটনায় তিনি আইডিআরএ’রও কিছুটা দোষ দেন। তিনি বলেন, ‘আইডিআরএ তাৎক্ষণিকভাবে পলিসিটি বাতিল করায় এমনটা হয়েছে। যদি দুই মাস ট্রেনিং দেয়া হয়, আশা করি দুই মাস পর এটা থাকবে না।’
তবে কোম্পানির এমন গতানুগতিক ও দায়সারা গোছের জবাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বীমাসংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অজান্তে পলিসি ইস্যুর ঘটনা ঘটতে পারে না। কারণ প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো থেকে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে প্রিমিয়াম জমা দেয়া হয় এবং কোন পলিসির বিপরীতে কত টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়। সেক্ষেত্রে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আইডিআরএ’র শোকজ নোটিশ পাওয়ার পর বিষয়টি জেনেছেন তা সত্য নয় বলেই মনে হয়। তবে যদি সিইও’র বক্তব্য সত্য হয়, তাহলেও সিইও’র ব্যর্থতা প্রকাশ হয় বলে মনে করছেন তারা। তারা বলেন, যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অধস্তন শাখা ও কর্মকর্তা না মানে, তাহলে প্রমাণিত হয় যে, অধস্তনদের ওপর ঊর্ধ্বতনদের কোনো প্রভাব নেই এবং তারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেক্ষেত্রে সিইও অযোগ্য বলেই বিবেচিত। এমন সিইও বীমাখাতের উন্নয়নে আইডিআরএ’র গৃহীত পদক্ষেপের অন্তরায় হবে বলেও মনে করছেন তারা।
Posted ৭:০১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy