| সোমবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 862 বার পঠিত
ভর্তুকিনির্ভর বিদ্যুৎ নয়, ন্যায্য দামে মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বিদ্যুৎ নিয়ে এক আলোচনা সভায় তৈরি পোশাক, রি-রোলিং, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা এ দাবি জানান।
‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য: গতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিদ্যুতের সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। সংগঠনটির সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হচ্ছে না। ফলে সরকারকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। দুর্বল সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার কারণে অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা, প্লাস্টিক শিল্প ও রি-রোলিং মিল এ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারছে না। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিয়ে সরকারি ব্যয় বাড়লেও শিল্প খাত তার সুবিধা পাচ্ছে না। তাই প্রয়োজনে ন্যায্য দাম নির্ধারণ করে হলেও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
বিদ্যুৎ খাতে গত দশ বছরের অর্জনকে অবিশ্বাস্য মন্তব্য করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, এ সাফল্য ধরে রাখতে হলে আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। কোনো গ্রাহক যখন কোনো সমস্যা নিয়ে আসে, তাকে এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে ঘুরিয়ে হয়রানি না করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবৃদ্ধির হার দুই অংকে উন্নীত করার যে লক্ষ্য সরকার নিয়েছে, তা সম্মিলিত ও সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
আলোচনা সভায় শিল্প-কারখানায় চাহিদামতো গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়া এবং সংযোগ পেতে হয়রানি ও অতিরিক্ত বিলিংয়ের অভিযোগ করেন বিভিন্ন শিল্প খাতের নেতারা।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের একটি অদম্য শক্তি রয়েছে। বিনিয়োগ কিন্তু তার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় যেতে পারছে না। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানের নিচে, যেটা খুবই লজ্জার। প্রাইভেট সেক্টর খুব সংগ্রাম করে তাদের ব্যবসা করছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, তা অর্জন করতে হলে বিনিয়োগের পথ আরো সহজ করতে হবে।
তিনি মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়ে বলেন, ঢাকার বাইরে এখনো নোটিস ছাড়া এক-দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। তৈরি পোশাক খাতের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সমস্যা খুবই বিপজ্জনক। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ভর্তুকি দেবে কিন্তু ভোক্তারা কাঙ্ক্ষিত মানের বিদ্যুৎ পাবে না, আমরা সেটা চাই না। আমরা চাই একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ, যৌক্তিক মূল্যহার এবং কোয়ালিটি বিদ্যুৎ।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় আমাদের কিছু সমস্যা রয়েছে, তা সত্য। সেই সঙ্গে এটাও ঠিক যে আমাদের দেশের শিল্প-কারখানাগুলো সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে ওঠেনি। আশুলিয়া ও গাজীপুরের মতো জায়গা যেখানে আগে চাষের ও পতিত জমি ছিল, সেখানে এখন ভারী শিল্পনগর গড়ে উঠেছে। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তবে এসব এলাকা ঘিরে কিছু প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন হলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদ্যুৎ সেবা দেয়া যাবে। এ সময় শিল্প-কারখানাগুলোকে ক্যাপটিভ পাওয়ারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য আহ্বান জানান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বিদ্যুৎ খাতে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে একটি পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপন করেন। এতে তিনি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় বেসরকারি খাতের অবদান তুলে ধরে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য শিল্প-কারখানার মালিকদের আহ্বান জানান
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন (অব.) এবং টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মো. হেলাল উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
Posted ১০:২০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed