রাঙামাটি সংবাদদাতা | ০২ ডিসেম্বর ২০২১ | ২:০৯ অপরাহ্ণ
ভার্মি কম্পোস্ট অর্থাৎ কেঁচো-সার উৎপাদন করে সেগুলো বাজারজাত করে পাহাড়ি নারী মারজান এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। হ্যাঁ, রাঙামাটি শহরের বাসিন্দা মারজাহান বেগমের কথা বলছিলাম। তিনি কেঁচো সার উৎপাদন করে সুখের মুখ দেখেছেন। এখন তার চোখ-মুখ নানান স্বপ্ন আর উচ্ছ্বাসে ভরপুর। আগে শুধু স্বামীর আয়ে সংসারে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু এখন তার কোনো সমস্যা নেই। নিজের আয় করা টাকাতেই সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চলে যায়।
সম্প্রতি নারী উদ্যোক্তা মারজানের সঙ্গে আলাপকালে অত্যন্ত আবেগের সঙ্গে নিজের উদ্যোক্তা হওয়ার কথা জানালেন তিনি।
তিনি জানান, তার স্বামী একজন সরকারি চাকরিজীবী। দুই ছেলে নিয়ে তাদের সংসার। বসবাস করেন জেলা শহরের সিএ অফিস পাড়া এলাকায়। ছেলেরা ঢাকায় থেকে একটি সরকারি কলেজে পড়াশোনা করছে। এই কেঁচো-সার বিক্রি করেই বর্তমানে তাদের লেখাপড়ার খরচের চাহিদা মেটাচ্ছেন তিনি।
মারজাহান বেগম বলেন, কেঁচো-সার বা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের বিষয়টি প্রথমে তিনি টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তারপর স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় কেঁচো-সার তৈরির প্রশিক্ষণ নেন।
এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বলেন, প্রথমে একটি ব্যাংক থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করি, কেঁচো সার উৎপাদনের কাজ। প্রথমে বাড়ির পাশেই একটি জায়গায় শুরু করি। এখন পাশেই আরেকটি জায়গা নিয়ে বড় আকারে স্থান নির্বাচন করে কাজ করছি।
তিনি বলেন, যদিও বর্তমানে কেঁচো-সার ও কেঁচো বিক্রি করে তার প্রতিমাসে আয় ২০ হাজার টাকা তবে, তা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
এই সার উৎপাদনের প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে মারজাহান বেগম বলেন, কেঁচো-সার উৎপাদন করতে প্রথমে কাঁচা গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, বিষমুক্ত সবুজ লতা-পাতা, তরকারির খোসা, ফলের খোসা এবং কলাগাছের কুচি দরকার হয়। আর ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির মূল উপাদান অস্ট্রেলিয়ান অ্যাজোজিক কেঁচো সংগ্রহ করতে হয়। তিনি জানান, এ কেঁচোগুলো সংগ্রহ করেন স্থানীয় একটি এনজিও থেকে। এ কাজে স্বামীও তাকে অনেক সহযোগিতা করছেন।
মারজাহান বলেন, অল্প পরিমাণ জায়গায় হওয়াতে বর্তমানে প্রতিমাসে যে টাকা আয় হচ্ছে ভবিষ্যতে তিনি তা আরো বাড়াবেন। বর্তমানে কেঁচো-সার বিক্রি করে টানাপোড়েনের সংসারের অভাব অনেকটাই ঘুচেছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে দিন কাটছে। কেঁচো সারের পাশাপাশি ভবিষ্যতে তার একটি নার্সারি ও হাঁসের খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন তিনি।
কেঁচো-সার বিক্রির ব্যাপারে এই উদ্যোক্তা বলেন, স্থানীয় চাষিরা খুচরা ও পাইকারি দামে বাড়ি থেকে সার কিনে নিয়ে যান। তাছাড়া বড়-বড় সারের দোকানগুলো পাইকারি দামে বাড়িতে এসে সার সংগ্রহ করে।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তার পরামর্শ, পরিশ্রম ছাড়া কোনো পেশায় সফল হওয়া যায় না। তাই, মনোযোগ ও কঠোর পরিশ্রম করা দরকার। তাহলে পরিশ্রমের ফল হিসেবে সফলতা ধরা দেবে। এক্ষেত্রে বেকার তরুণ-তরুণীরা এগিয়ে আসতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, যেকোনো বেকার যুবক অল্প জায়গায় স্বল্প পুঁজি দিয়ে কেঁচো-সার উৎপাদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে গৃহিণী মারজাহান বেগম তাদের উদহারণ।
‘অধিক ফসল উৎপাদনে এ সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কেউ কেঁচো-সার উৎপাদন করতে চাইলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে সব রকমের সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলেও জানান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ।
/এস
বাংলাদেশ সময়: ২:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১
bankbimaarthonity.com | Masudul Haque