বিবিএনিউজ.নেট | ৩১ আগস্ট ২০১৯ | ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ
কখনও কখনও জীবন বীমা কোম্পানিগুলোকে বীমা তহবিলের অর্থ অলাভজনক খাতে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আবার কখনও কখনও ওই অর্থে জমি-ভবনসহ স্থায়ী সম্পদ কেনা নিয়ে আপত্তি তুলছে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অন্যদিকে তারল্য সংকট কাটাতে জীবন বীমা তহবিলের বিনিয়োগযোগ্য অর্থ পুঁজিবাজারে আনার তাগিদও দেওয়া হচ্ছে। জটিলতা এড়াতে ২০১২ সালে সময়োপযোগী প্রবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কিন্তু সাত বছরেও তা না হওয়ায় জীবন বীমা তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের জটিলতা কাটেনি।
তথ্যমতে, জীবন বীমা লাইফ ফান্ডের অর্থ পুঁজিবাজারসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের জন্য ২০১২ সালের মার্চে সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। বীমা খাতের কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ-সংক্রান্ত প্রবিধানের খসড়াও প্রণয়ন করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ওই প্রবিধানের খসড়ায় জীবন বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ডের বিনিয়োগযোগ্য একটি অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছিল।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘বীমা খাতের বিনিয়োগযোগ্য অর্থ পুঁজিবাজারে আনতে হলে অবশ্যই সময়োপযোগী দিকনির্দেশনা ও আইনি বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। তা না হলে কেউ ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করতে চাইবে না। এজন্য ২০১৩ সালে সবার চেষ্টায় বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। স্বল্প সময়ে গেজেট প্রকাশ হলে বিনিয়োগ নিয়ে চলমান জটিলতা কাটবে।’
খসড়া প্রবিধানে, বাংলাদেশে ব্যবসারত জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগযোগ্য অর্থের বড় একটি অংশ দেশেই বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছিল। বিনিয়োগযোগ্য অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ইস্যু করা বন্ড, ঋণপত্র অথবা অন্য সিকিউরিটিজে, অগ্রাধিকার ভিত্তিক বা সাধারণ শেয়ার, মিউচুয়াল ও ইউনিট ফান্ড, স্থাবর সম্পত্তি, সাবসিডিয়ারি কোম্পানি, তফসিলি ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) আমানত হিসেবে রাখাসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছিল।
সে সঙ্গে প্রেফারেন্স বা সাধারণ শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও ঋণপত্র এ তিন খাতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে বীমা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগযোগ্য অর্থের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ সাধারণ বা প্রেফারেন্স শেয়ারে, ২০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডে ও ঋণপত্র কিংবা অন্য সিকিউরিটিজে ১০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগের কথাও বলা হয়েছে। যে কোনো বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির অগ্রাধিকার শেয়ার অথবা সাধারণ শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবে বলেও ওই খসড়ায় উল্লেখ ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জীবন বীমা কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মতে, লাইফ ফান্ডের অর্থ গ্রাহকের আমানত। সেই আমানত নিরাপদ রাখার দায়িত্ব কোম্পানির। যে কারণে ওই অর্থ কোম্পানি সব সময়ই তুলনামূলক নিরাপদ খাতে বিনিয়োগের পক্ষে।
পুঁজিবাজারের ক্রান্তিকালে সেখানে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছিল; কিন্তু পুঁজির নিরাপত্তার প্রশ্নে অনেকে বিনিয়োগ করেনি। এ বিষয়ে সময়োপযোগী নীতিমালা থাকলে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা নির্দেশনা দিলে পুঁজিবাজারে জীবন বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ বাড়বে।
আলাপকালে প্রবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জামাল এমএ নাসের বলেন, ‘আমার জানামতে ওই নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে পর্যালোচনার পর চূড়ান্ত হয়েছে। বর্তমানে গেজেট আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। নীতিমালা হলে একটি অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যাবে।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে বড় ধসের পর জীবন বীমা তহবিলের অর্থ পুঁজিবাজারে আনার দাবি উঠেছিল। এর জেরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে পুঁজির নিরাপত্তার গ্যারান্টি চেয়েছিল বীমা কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।
এর জবাবে ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে অর্থের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সে কারণে পরে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় আইডিআরএ। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ভেটিংয়ের জন্য ওই প্রবিধানের (লাইফ ইন্স্যুরেন্সকারীর সম্পদ বিনিয়োগ প্রবিধানমালা) খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। প্রায় সাত বছর ধরে পর্যালোচনা-ভেটিংয়ের পর চূড়ান্ত হলেও এখনও গেজেট আকারে প্রকাশ হয়নি। আর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশে ব্যবসারত সরকারি-বেসরকারি-বিদেশি মিলিয়ে ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ডের বিনিয়োগযোগ্য অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ৩১ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |