| শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 1293 বার পঠিত
এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি নিয়ে চলমান জটিলতার অবসান হচ্ছে। কয়েক দফায় চেষ্টার পর এখন প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে কোম্পানিটি। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স। অনুমোদন পেলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পাশাপাশি বিমা আইন পরিপালনে ব্যর্থতার দায় থেকেও অব্যাহতি পাবে কোম্পানিটি।
তথ্যমতে, আইনি বাধ্যবাধকতা পালনের জন্য সাত বছর আগে পুঁজিবাজারে আসার প্রস্তুতি নেয় বেসরকারি খাতের সাধারণ বিমা কোম্পানি এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স। বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) অনুমতি নিয়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে বিএসইসির কাছে ২০১২ সালে আবেদনও করেছিল কোম্পানিটি। কিন্তু প্রিমিয়াম নিয়ে জটিলতার কারণে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পায়নি। জরিমানা ও আইন লঙ্ঘনের দায় এড়াতে বাধ্য হয়ে ফিক্সড প্রাইসেই পুঁজিবাজারে আসার অনুমতি চায় কোম্পানিটি।
এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কেএম সাইদুর রহমান বলেন, ‘বিমা আইন পরিপালনের জন্য আমরা কয়েক বছর ধরেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রথমে কোম্পানির ব্যবসায়িক সাফল্য-সুনাম, সম্পদ ও সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা হারে প্রিমিয়াম চাওয়া হয়েছিল। বাজার পরিস্থিতির কারণে বিএসইসি প্রিমিয়ামসহ আইপিও অনুমোদন দেয়নি। নতুন আইপিও নীতিমালার পর প্রিমিয়াম ছাড়াই ফিক্সড প্রাইসেই আবেদন করেছিল। এরপর বিএসইসি আইপিও অনুমোদন-পূর্ববর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। যে কোনো সময় তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেতে পারি। এর মধ্য দিয়ে তালিকাভুক্তি ইস্যুতে কয়েক বছর ধরে চলা টানাপড়েনের অবসান হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স। ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে প্রাথমিক আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ার ছাড়ার অনুমতি চেয়ে ওই বছরই বিএসইসির কাছে আবেদন করে কোম্পানিটি। আইপিওতে ফেসভ্যালুর সঙ্গে ১০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২০ টাকা ইস্যুমূল্যে শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ৪৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা তোলার কথা ছিল। কিন্তু বাজার পরিস্থিতির কারণে প্রিমিয়ামসহ আইপিও অনুমোদন দেয়নি বিএসইসি। তিন বছরেও এই প্রিমিয়াম জটিলতার অবসান হয়নি। যে কারণে আইপিও প্রক্রিয়া আটকে গেছে।
এদিকে ২০১৭ সালে ‘প্রিমিয়াম চাইলে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির মাধ্যমে আইপিওতে আসতে হবে’Ñএমন নিয়ম রেখে আইপিও নীতিমালা সংশোধন করে বিএসইসি। নতুন নীতিমালার পর প্রিমিয়াম জটিলতা তৈরি হয়। এরপর নতুন নীতিমালা মেনে কোম্পানিটিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির নিয়ম মেনে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সকে নতুন করে আবেদনের পরামর্শ দেয় বিএসইসি। কিন্তু নতুন করে আইপিও প্রক্রিয়া শুরুর জন্য সময় ও অর্থ ব্যয় এবং দৈনিক জরিমানা নিয়ে উভয় সংকটে পড়ে প্রিমিয়াম ছাড়াই তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসতে ২০১৭ সালে আবারও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করেছে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স। এরই মধ্যে কোম্পানির তথ্য যাচাই-বাছাই ও পরিদর্শন শেষ করেছে বিএসইসি। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরই তালিকাভুক্তি নিয়ে চলা সংকট কাটিয়ে উঠতে চায় কোম্পানিটি। ‘ট্রিপল এ’ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছে।
আইডিআরএ’র মুখপাত্র ও সদস্য গোকুল চাঁদ দাস বলেন, ‘বিমা আইন মেনেই পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণ করতে না পারায় আইপিও আবেদন করতে পারছে না। কিছু কোম্পানি এরই মধ্যে ছাড়পত্র নিয়ে আবেদন করেছে। আইন না মেনে জরিমানার মুখে থাকা অন্য বিমা কোম্পানিগুলোরও বিএসইসির শর্ত পূরণ করে পুঁজিবাজারে আসা উচিত।’
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের বিমা আইন অনুযায়ী ব্যবসা শুরুর সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই সাধারণ ও জীবন বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে সেই কোম্পানিকে বিভিন্ন ধরনের জরিমানা করে আইডিআরএ। ২০০০ সালে ব্যবসা শুরু করায় ২০০৪ সালের আগেই এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের পুঁজিবাজারে আসার কথা। কিন্তু তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় পুঁজিবাজারে আসতে পারেনি। যে কারণে ২০১১ সালে জরিমানার মুখে পড়েছে কোম্পানিটি। সে বছর এককালীন ৫০ হাজার টাকা এবং এরপর থেকে দৈনিক হারে জরিমানা দিচ্ছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগ পর্যন্ত এ জরিমানা অব্যাহত থাকবে।
Posted ৩:৫৮ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed