• পুঁজিবাজার ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন করা হলে ৫০ লাখ বিনিয়োগকারী আনা সম্ভব

    নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৬ জুলাই ২০২০ | ৩:০০ পূর্বাহ্ণ

    পুঁজিবাজার ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন করা হলে ৫০ লাখ বিনিয়োগকারী আনা সম্ভব
    apps

    পুঁজিবাজার ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন করা গেলে নতুন করে  আরও ৫০ লাখ বিনিয়োগকারী আনা সম্ভব। সম্প্রতি মার্চেন্ট ব্যাংক এশিয়ান টাইগার (এটি) ক্যাপিটালের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।

    যদিও গত দুই দশকেরও বেশি আগে দেশের পুঁজিবাজারে ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে লেনদেন চালু হলেও এতদিনে একটি পূর্ণাঙ্গ অটোমেটেড সিস্টেম গড়ে ওঠেনি। ফলে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ৬৫ দিন বন্ধ ছিল দেশের পুঁজিবাজার। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দেশের পুঁজিবাজারকে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকেও পুঁজিবাজারের অটোমেশনের বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে।

    Progoti-Insurance-AAA.jpg

    প্রতিবেদনে নতুন প্রজন্মের বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে অনলাইন ট্রেডিংকে মূল চাবিকাঠি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের বিনিয়োগকারীরা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো ডিজিটাল প্লাটফর্মে অভ্যস্ত। তাদের ব্রোকারেজ হাউজে এসে কিংবা ফোনে অর্ডার করার মতো সময় নেই। তারা ডিজিটাল মাধ্যমে এক ক্লিকে মিউচুয়াল ফান্ড কিংবা ফিক্সড ইনকাম ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। প্রধান শহরগুলোর বাইরে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ রয়েছে, যেখানে ব্রোকারেজ হাউজগুলো পৌঁছতে পারে না। ট্রাফিক জ্যামের কারণে ফরম পূরণ করা কিংবা লেনদেন করার জন্য ব্রোকারেজ হাউজে আসাটা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওয়ালেট, পেমেন্ট ও ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ডিজিটাল হওয়ার কারণে ব্রোকারেজ অ্যাকাউন্টগুলোও ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের মধ্যে আসাটা যৌক্তিক হয়ে পড়েছে।

    প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের ক্ষেত্রে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) সব ব্রোকারের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে, যাতে ব্রোকারেজ হাউজগুলো তাদের নিজস্ব ট্রেডিং সিস্টেম চালু করে এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে। সার্ভার ও ক্লাউডভিত্তিক কাস্টমাইজড অনলাইন ট্রেডিং সিস্টেম চালু করতে হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের বিষয়ে সব স্টেকহোল্ডারকে অবহিত করা; বর্ধিত হারে অনলাইন ট্রেডিং পরিচালনার জন্য এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং প্লাটফর্ম ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিসিবিএল) আপগ্রেড করা; প্রত্যেক ব্রোকারকে একটি দক্ষ অনলাইন ট্রেডিং প্লাটফর্ম চালু করা; মোবাইল অ্যাপ চালু করা; ব্লুমবার্গ, চ্যাটবট এবং অন্যান্য মূল্য সংযোজনকে একীভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে। সবশেষে নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট করতে বিপণন কার্যক্রম শুরু করারও কথা বলা হয়েছে। এ রোডম্যাপ অনুসরণ করলে পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারে নতুন করে আরো ৫০ লাখ বিনিয়োগকারীকে সম্পৃক্ত করা ও ব্লকচেইনের মতো প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আরো বেশি মূল্য সংযোজন করা সম্ভব হবে বলে প্রতিবেদনে আরো মন্তব্য করা হয়।


    ২০০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ হাতে নেয়ার পর এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেলেও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে পুঁজিবাজার অনেক পিছিয়ে রয়েছে। পুঁজিবাজারে ২০ লাখের বেশি বিও হিসাবের মধ্যে ডিএসই মোবাইল অ্যাপ ও এর ডেস্কটপ ভার্সনে মাত্র ৫৩ হাজার ব্যবহারকারী রেজিস্টার্ড রয়েছে। অথচ জনসংখ্যার অনুপাতে চীনের মতো একই হারে যদি বাংলাদেশে অনলাইন ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা হিসাব করা হয় তাহলে এটি ২ কোটিতে দাঁড়াবে। অবশ্য বেশকিছু কারণে দেশের পুঁজিবাজারেও ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন ঘটবে বলে প্রতিবেদনটিতে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের নিয়োগ পাওয়া। তিনি প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন। ডিএসইর পর্ষদ অনলাইন ট্রেডিং ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য করণীয় নির্ধারণে একটি ওয়ার্কিং কমিটি করেছে। ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ বিশ্বের প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত এক্সচেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাদের অভিজ্ঞতা ও সহায়তা দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব। আর সর্বোপরি দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধির স্বার্থে সব স্টেকহোল্ডারের মধ্যেই পুঁজিবাজারে পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। সম্মিলিতভাবে এসব কারণেই পুঁজিবাজারে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন হবে বলে প্রতিবেদনে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

    ডিএসইতে ১৯৯৮ সালে ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে লেনদেন চালু হওয়ার পর দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো একটি পূর্ণাঙ্গ অটোমেটেড স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে গড়ে ওঠেনি। অথচ পুঁজিবাজারের মোট লেনদেনের ৯০ শতাংশের বেশি হয়ে থাকে ডিএসইর মাধ্যমে। ফলে এক্সচেঞ্জটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ এবং বিনিয়োগকারীরাও এখনো অনেকাংশে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে লেনদেনে অভ্যস্ত।

    ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনূসুর রহমান বলেন, নতুন প্রজন্মকে পুঁজিবাজারমুখী করতে হলে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পরই সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টিতে জোর দিয়েছি সেটি হচ্ছে অটোমেশন। আমাদের কৌশলগত বিনিয়োগকারী শেনঝেন-সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জও এক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা করতে আগ্রহী। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তা সত্ত্বেও কীভাবে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়িয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ অটোমেটেড স্টক এক্সচেঞ্জ গড়ে তোলা যায়, সে লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

    দেশের পুঁজিবাজারের বেশকিছু প্রাতিষ্ঠানিক ব্রোকারেজ হাউজ নিজেদের আগ্রহে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়িয়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম অটোমেটেড না হওয়ার কারণে তারা এসব সুবিধা অনেকাংশে কাজে লাগাতে পারছে না। ফলে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাদের গ্রাহকরা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

    বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, পাঁচ বছরে নতুন ৫০ লাখ বিনিয়োগকারীকে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা খুবই সম্ভব। কিন্তু এজন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। সবার আগে স্টক এক্সচেঞ্জকে আপগ্রেড করতে হবে। তারপর ব্রোকারদের জন্য এপিআই উন্মুক্ত করতে হবে। আর সব ব্রোকারই যাতে ট্রান্সফর্মেশনের সুবিধা পায়, সেজন্য সহায়তা করতে হবে। তাহলে পুঁজিবাজারে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে এবং নতুন প্রজন্মের বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের প্রতি আকৃষ্ট হবে।

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ৩:০০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০২০

    bankbimaarthonity.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    Archive Calendar

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫১৬
    ১৭১৮১৯২০২১২২২৩
    ২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
  • ফেসবুকে ব্যাংক বীমা অর্থনীতি