
| মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫ | প্রিন্ট | 75 বার পঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারে ফের ধস নেমেছে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে এর বিপরীত। মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) — উভয় বাজারেই সূচক বড় পতনের মধ্য দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ করে।
বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোববার সরকারি ছুটির দিনে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক।
বৈঠককে কেন্দ্র করে বাজারে একটি ইতিবাচক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, বাজারে তারল্য বাড়ানো এবং বিনিয়োগ আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ আসবে। এরই প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে সূচক বেড়েছিল প্রায় ১০০ পয়েন্ট।
কিন্তু বৈঠকে কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত বা বাস্তবভিত্তিক প্রণোদনা না আসায় বিনিয়োগকারীদের সেই প্রত্যাশা দ্রুতই হতাশায় রূপ নেয়। বক্তৃতা ও তাত্ত্বিক পরামর্শ ছাড়া কোনো দৃশ্যমান দিকনির্দেশনা না থাকায় বাজারে আস্থার সংকট আরও ঘনীভূত হয়। ফলে সপ্তাহের শুরু থেকেই নেতিবাচক ধারায় ফিরেছে সূচক, যার চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটে মঙ্গলবারের বড় পতনে।
মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ৪৬.৯৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪,৮৭৪.৫৮ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে ১২.১৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ১৬.৭৬ পয়েন্ট।
এই দিন ডিএসইতে মোট লেনদেন হয় ৩৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার, যা আগের দিনের তুলনায় কম। মোট ৩৯৮টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৫৪টির, কমেছে ৩০৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৫টির শেয়ার দর।
একই চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও। সিএসইতে এদিন লেনদেন হয় ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার, আগের দিনের তুলনায় সামান্য বেশি হলেও সার্বিক সূচক কমেছে ৩৬.৯৩ পয়েন্ট। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০১ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৫৫টির, কমেছে ১১৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির।
মতিঝিলের বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীরা চরম হতাশা ও ক্ষোভে ফুঁসছেন। এক বিনিয়োগকারী বলেন, “বৈঠক হলো, বক্তৃতা হলো, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হলো না। আমাদের পুঁজি তো দিন দিন গলে যাচ্ছে।”
একজন মধ্যবয়সী বিনিয়োগকারী বলেন, “বাজার নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলাম, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সেটা ছিল মরীচিকা। আশা ভেঙে গেছে।”
আবদুর রহমান নামের এক তরুণ বিনিয়োগকারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাশেদ মাকসুদ পুরো শেয়ারবাজারটা শেষ করে দিয়েছেন। অর্থ উপদেষ্টা কেন তাঁকে রেখেছেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। যদি তিনি এতই গুরুত্বপূর্ণ হন, তাহলে অন্য কোথাও দায়িত্ব দিন, বাজারটা অন্তত বাঁচুক।”
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজার এখন একপ্রকার দিকহীন অবস্থায় রয়েছে। উচ্চপর্যায়ের বৈঠক থেকে কোনো দৃশ্যমান নীতিগত সিদ্ধান্ত না আসায় বিনিয়োগকারীরা চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। নতুন করে কেউ বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না, আবার যাঁরা আগে থেকে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরাও শেয়ার ধরে রেখে বিপাকে পড়ছেন।
বিশ্লেষকদের ভাষায়, বর্তমান কমিশনের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। বাজার পুনরুদ্ধারে শক্ত অবস্থান ও কার্যকর নীতিগত সিদ্ধান্ত ছাড়া আস্থা ফিরবে না, এমনটাই মনে করছেন সবাই।
Posted ৫:০৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
bankbimaarthonity.com | saed khan