নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫ | প্রিন্ট | 217 বার পঠিত
সাবেক দুই কর্মকর্তাকে আটকে রেখে লোহার রড দিয়ে মারধর, হত্যা চেষ্টা ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম, কোম্পানিটির নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও আমানত শাহ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. হেলাল মিয়া, স্বতন্ত্র পরিচালক মোবারক হোসেন, সাবেক পরিচালক মোশাররফ হোসেন পুস্তিসহ কোম্পানিটির সাবেক-বর্তমান কয়েক পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
নির্যাতিত সাবেক কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন আকন্দ বাদী হয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করেন। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩৪২, ৩৪৭, ৩৪৮, ৩২৩, ৩২৫, ৩৭৯ ও ৫০৬ ধারায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বাদী শাহাদাৎ হোসেন আকন্দ প্রায় ১৩ বছর ফারইস্ট ইসলামী লাইফে চাকরি করার পর এক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে বর্তমানে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কর্মরত। গত ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফারইস্ট টাওয়ারের হিসাব বিভাগ থেকে বকেয়া বেতন ও ছুটির নগদায়ন বিষয়ে কথা বলার জন্য তাকে ডেকে পাঠানো হয়।
তিনি সহকর্মী নজরুল ইসলামকে নিয়ে সেখানে গেলে কোম্পানির কয়েকজন কর্মকর্তা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের নির্দেশে কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদেরকে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করেন। পরে দুজনকে জোর করে ভবনের ১৮ তলায় একটি কক্ষে নিয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা আটক রেখে লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
বাদীর দাবি, তার কাছ থেকে একটি স্যামসাং মোবাইল ফোন, নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি স্বর্ণের আংটি ও অফিসের কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া, পিস্তল ঠেকিয়ে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা ও ১০ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
ঘটনার সময় শাহাদাৎ হোসেন তার চাচা রুহুল আমিন আকন্দকে ফোনে বিষয়টি জানান। পরে শাহবাগ থানার এসআই ফয়সালের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনকে উদ্ধার করে ও তাদের মোবাইল ফোন ফেরত দেয়। আহত অবস্থায় শাহাদাৎ হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের জমি কেনাবেচার অর্থ থেকে ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দুদকের করা মামলারও আসামি মো. হেলাল মিয়া। হেলাল মিয়ার আত্মীয় ও স্বার্থসংম্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোঃ মোবারক হোসেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের জারি করা কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড লঙ্ঘন করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের স্বতন্ত্র পরিচালক পদে রয়েছেন। অথচ দকর্পোরেট গভর্নেন্স কোড’ ২০১৮ তে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোম্পানির উদ্যোক্তা অথবা পরিচালক অথবা মনোনীত পরিচালকদের সম্পর্কযুক্ত কোনো ব্যক্তি কিংবা তাদের পরিবারের সাথে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তি অথবা তাদের স্বার্থসংম্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। কিন্তু এসব আইন ও বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করেই ফারইস্ট ইসলামী লাইফের উদ্যোক্তা আমানত শাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান হেলাল মিয়ার আত্মীয় (সম্পর্কে ভাই) মোবারক হোসেনকে স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয়েছে। এই মোবারক হোসেন একদিকে যেমন আমানত শাহ গ্রুপের কর্মকর্তা তেমনি হেলাল মিয়ার স্বার্থ সংম্লিষ্ট আরেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের কোম্পানি সচিব। এটি কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড ২০১৮ এর ধারা (২)(বি) (২) এর সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
তাছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালকের যোগ্যতাসংক্রান্ত ধারা ৩ (বি) এ বলা হয়েছে, স্বাধীন পরিচালকের নিম্নোক্ত যোগ্যতাসমূহ থাকতে হবে:
(র) ব্যবসায়ী নেতা – যিনি একজন প্রবর্তক (চৎড়সড়ঃবৎ) বা পরিচালক ছিলেন/আছেন, এমন একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি বা অতালিকাভুক্ত কোম্পানির যার পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা; অথবা তিনি কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য;
(রর) কর্পোরেট নেতা – যিনি একজন শীর্ষ নির্বাহী ছিলেন/আছেন, যার পদবী নিম্নে উল্লেখিত পদের চেয়ে নিচে নয়:
চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার , ম্যানেজিং ডিরেক্টর , ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর , চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার , হেড অব ফাইন্যান্স বা একাউন্টস, কোম্পানি সেক্রেটারি , হেড অব ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স, হেড অব লিগ্যাল সার্ভিস, অথবা সমমানের পদে যিনি তালিকাভুক্ত বা অতালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন, যার পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা।
(সি) স্বাধীন পরিচালকের উল্লিখিত (বি) উপধারাগুলোর যেকোনো একটি ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১০ (দশ) বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
কিন্তু মোবারক হোসেনকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের স্বতন্ত্র পরিচালক করার ক্ষেত্রে এসব বিধিবিধান বা শর্তের কোনোটাই পূরণ করা হয়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ কোনভাবেই এই আইন লঙ্ঘনের দায় এড়াতে পারেন না।
Posted ৯:০৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
bankbimaarthonity.com | rina sristy