| শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 57 বার পঠিত
কখনো ইফাত জাহান, আবার কখনো ইফাত ওবায়েদ। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে তিনি ইফাত জাহান নামে রয়েছেন অপরদিকে প্রাইম ইন্স্যুরেন্সে ইফাত ওবায়েদ।
প্রথমে ইফাত ওবায়েদকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পক্ষ থেকে ফারইস্টেরই সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক মনোনীত করা হয়। পরে একইসাথে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ও প্রাইম ইন্স্যুরেন্সে ভাইস-চেয়ারম্যান ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের পাশাপাশি স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইনের লঙ্ঘন। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই পঁুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।
তিনি কী স্বতন্ত্র নাকি শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, এমনটা জানতে চাইলে ইফাত ওবায়েদ ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে বলেন, “ আমি প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের ভাইস-চেয়ারম্যান ও পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছি। প্রয়োজনীয় ২ শতাংশ শেয়ার আমার রয়েছে।”
ইফাত একদিকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে অডিট কমিটি ও এনআরসি কমিটির সদস্য, অপরদিকে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে আর্থিক সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দলিলে স্বাক্ষর করেছেন। ফলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ থেকে মনোনীত প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক ড. ইফাত ওবায়েদের পদ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ভাইস চেয়ারম্যান ড. ইফাত ওবায়েদ প্রাইম ইন্স্যুরেন্সেরও ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রাইম ইন্স্যুরেন্সে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মনোনীত প্রতিনিধি। অর্থাৎ শেয়ারধারণকারী ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়াগকারী। প্রাইম ইন্স্যুরেন্সে এমন তিনজন পরিচালক রয়েছে যারা ফারইস্ট ইসলামী লাইফ থেকে মনোনীত। কিন্তু গোলমাল বাঁধে তখনই, যখন মনোনীত প্রতিনিধি স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবেও কার্যক্রম চালিয়ে যান।
এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালের ৮ জুন ৩৩০তম বোর্ডসভায় তাকে এক্সিকিউটিভ কমিটি, অডিট কমিটি এবং এনআরসি কমিটির মেম্বার হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। অথচ ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ৩৩৬তম বোর্ডসভায় তাকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য চলতি বছরের ২৮ মার্চ প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের ২৫তম বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়া হয়। তবে স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিয়োগ পাওয়ার পরও শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসেবে ১০ ফেব্রুয়ারি মূল্যবান আর্থিক প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন তিনি। এতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
বীমা বিশ্লেষকদের মতে, যেহেতু ইফাত ওবায়েদ ফারইস্ট থেকে মনোনীত এবং প্রাইম ইন্স্যুরেন্সে ফারইস্টের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় দেখাশোনা করেন তাই বিএসইসির করপোরেট গর্ভন্যান্স কোড (সিজিসি) অনুযায়ী কোনো অবস্থাতেই তিনি প্রাইম ইন্স্যুরেন্সে স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারেন না।
আবার কোম্পানির সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, তাকে পুনরায় ভাইস-চেয়ারম্যান ও পরিচালক হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে তিন বছর মেয়াদপূর্তির আগেই তিনি আবার ভাইস-চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদে কার্যক্রম চালানোর অনুমোদন পেতে পারেন না। এতে প্রতীয়মাণ হয় তাকে যখন যেভাবে প্রয়োজন হয়েছে, তখন সেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আর একজন শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিক হিসেবে তিনি যে আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে ওয়াকিবহাল নয়, তা মনে করার কোনো কারণ নেই বলে জানান তারা।
বার্ষিক প্রতিবেদনের ১০৮ পৃষ্ঠায় ড. ইফাত ওবায়েদকে ভাইস-চেয়ারম্যান ও পরিচালক হিসেবে দেখানোর পাশাপাশি স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবেও দেখানো হয়েছে, যা সাংঘর্ষিক। প্রতিবেদনের ৫৫ পৃষ্ঠায়ও তাকে স্বতন্ত্র পরিচালকের পরিবর্তে ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে অথচ ১৩০ পৃষ্ঠায় তার শেয়ারসংখ্যা শূন্য দেখানো হয়। সে মোতাবেক ড. ইফাত ওবায়েদের ভাইস-চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদে থাকার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা সিজিসি অনুযায়ী, ২ শতাংশ শেয়ারধারণ করা বাধ্যতামূলক। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মনোনীত পরিচালক হলে তখন এই বাধ্যবাধকতা থাকে না। সেক্ষেত্রে মনোনীত ব্যক্তির স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়া প্রশ্নবিদ্ধ এবং আইনের লঙ্ঘন। তাছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালকের যোগ্যতার শর্তানুযায়ী, তিনি পদে থাকতে পারেন না। কেননা সিজিসি অনুসারে কোন শিক্ষাবিদকে স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনীত করতে হলে সেই ব্যক্তিকে অবশ্যই অর্থনীতি বা বাণিজ্য বা ব্যবসা শিক্ষা বা আইন বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। কিন্তু ড. ইফাত ওবায়েদের ক্ষেত্রে উল্লেখিত বিষয়ের উপর কোন ডিগ্রি নেই। তাই তিনি স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না বলেই মনে করছেন আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা।
Posted ২:৪৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy