৭ম রমজান

ইফতারের সময় বাকি আছে

00 ঘন্টা
00 মিনিট
00 সেকেন্ড

ইফতারের সময় হয়েছে।
ইফতার করুন।

শুধুমাত্র ঢাকা জেলার জন্য প্রযোজ্য

সেহরির সময় বাকি আছে

00 ঘন্টা
00 মিনিট
00 সেকেন্ড

শুধুমাত্র ঢাকা জেলার জন্য প্রযোজ্য

Advertisement
  • উপেক্ষিত প্রশাসক নিয়োগ

    বহাল তবিয়তে উত্তরা ফিন্যান্সের পরিচালকবৃন্দ

    আদম মালেক | ১৪ জানুয়ারি ২০২১ | ১:২৬ অপরাহ্ণ

    বহাল তবিয়তে উত্তরা ফিন্যান্সের পরিচালকবৃন্দ
    apps

    অনিয়ম দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। কোম্পানিটিতে চলছে হরিলুট। অনিয়মের কবলে পড়েছে ৩৪৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫০০ কোটি টাকারও বেশি এমডি চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা হাতিয়ে নিয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এমতাবস্থায় পর্ষদ ভেঙ্গে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে জড়িত চেয়ারম্যান পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের শাস্তি জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ দুর্নীতিগ্রস্থরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরবতায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

     

    বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী বা কর্মকর্তারা স্টাফ লোন নিতে পারে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা সামান্য ঋণও নিতে পারে না। যদি তারা কোনো ঋণ নেয় তাহলে তা অনিয়ম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাদের কাছে আর্থিক খাত নিরাপদ নয়। এ পরিস্থিতিতে জালিয়াতিতে জড়িতদের পর্ষদ থেকে সরিয়ে দিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

    Progoti-Insurance-AAA.jpg

    সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উত্তরা ফিন্যান্সে এ দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসে। তাই প্রতিষ্ঠানটিতে পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার দাবি উঠে। পিপল্স লিজিংয়ে ১১৩১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি হয়। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েও এখন পুনর্গঠনের পথে এগুচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার প্রিমিয়ার লিজিংয়ে ১ বছরে সম্পদ কমেছে ৮৫ কোটি টাকা। ৩ বছরে আমানত কমেছে ১৫৩ কোটি টাকা। চার বছরে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ বিতরণ কমেছে ১৬৫ কোটি টাকা। পরিচালনায় অদক্ষতার কারণেই বিভিন্ন সূচকে পতনমুখী কোম্পানিটি। তাই প্রতিষ্ঠানটি বাঁচাতে গেল বছরের ২৯ নভেম্বর প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ উত্তরা ফিন্যান্সে পুকুর চুরি হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে পরিচালক ও এমডি। তাদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়নি।


    এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ এফসিএ বলেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীরা স্টাফ লোন নিতে পারে। কিন্তু চেয়ারম্যান ও পরিচালকের ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়ার কোনো বিধান নেই। যদি নেয় তা অপরাধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু পরিচালকরা উত্তরা ফিন্যান্স থেকে শুধু ঋণই নেননি অনেক অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এমতাবস্থায় সেখানে পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে। জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আবু আহমেদও উত্তরা ফিন্যান্সে দুনীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি করেছেন। এক্ষেতেও বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর হওয়া দরকার বলে মত প্রকাশ করেন এ অর্থনীতিবিদ।

    বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়,পরিচালক ও এমডি মিলে যে অর্থ নিয়েছেন, সেগুলোর বিষয়ে পর্ষদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেয়া হয়নি। এমনকি এসব অর্থের বিষয়ে অনেক নথিপত্রও মিলছে না। ইলেকট্রনিক নথিও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে এসব লেনদেনের। এতে প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ঝুঁকির মুখে পড়েছে আমানতকারীদের অর্থ।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরা ফিন্যান্সের বার্ষিক হিসাব বিবরণীতে এক হাজার ৮০৩ কোটি টাকা লিজ অর্থায়ন বা ঋণের তথ্য দেওয়া হয়েছে। অথচ ব্যাংকটির লেজার ব্যালেন্স পর্যালোচনায় তিন হাজার ৮০২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া গেছে। আবার এক হাজার ৮৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকার মেয়াদি আমানত দেখানো হয়েছে আর্থিক বিবরণীতে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক দুই হাজার ৬০৩ কোটি ২০ লাখ টাকার মেয়াদি আমানতের তথ্য পেয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ও ঋণের প্রকৃত তথ্য আড়াল করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে গোপনে টাকা দেওয়া হয়েছে।

    পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে মার্জিন ঋণ ও মার্চেন্ট ব্যাংকিং ইউনিটকে দেওয়া ঋণ হিসেবে ৫৯৭ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যার গ্রাহকভিত্তিক বিস্তারিত কোনো তথ্য শ্রেণিকৃত ঋণের বিবরণীতে নেই। অনুমোদন ছাড়াই সাবসিডিয়ারি কোম্পানি উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টকে মার্জিন ঋণ বাবদ ২৪৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ অর্থ কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার কেনায় ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, তা দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। বাকি ৩৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ছাড় করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৭৩ কোটি পাঁচ লাখ টাকাসহ ৫২১ কোটি টাকা কোনো আবেদন, প্রস্তাব বা অনুমোদন ছাড়াই পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সরাসরি ছাড় করা হয়। এভাবে আমানতকারীসহ সংশ্নিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের স্বার্থ ক্ষুন্ন করা হয়েছে।

    পরিদর্শনে উত্তরা ফিন্যান্সের ব্যাংক হিসাব থেকে ১১৮টি অনুমোদনহীন উত্তোলনের মাধ্যমে উত্তরা মোটরস ও উত্তরা গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে ৩৩৬ কোটি বের করে নেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির কোনো বিবরণীতে এ ঋণের তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। ২০২০ সালেও এ ধরনের ভুয়া ঋণের নামে টাকা ওঠানো হয়েছে। ভুয়া শিরোনামে এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিবরণীতে অপ্রদর্শিত আমানতই এর মূল উৎস। হদিসবিহীন ৮৯০ কোটি টাকা।

    কোম্পানির স্থিতিপত্রে অগ্রিম ও প্রিপেমেন্ট খাতে ৯০ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং শেয়ারে বিনিয়োগ খাতে ২২১ কোটি আট লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। অথচ বিস্তারিত হিসাব যাচাই করে পরিদর্শকরা উদঘাটন করেছেন, এ দুই খাতে সরবরাহ করা হয়েছে এক হাজার ২০১ কোটি ২০ লাখ টাকা। যার সবই গেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন হিসাবে।

    প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানও বিপুল অংকের টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে নগদ লেনদেনের সুযোগ না থাকলেও সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় সাধারণ খতিয়ানের ‘অ্যাডভান্স অ্যান্ড পেমেন্ট’ শিরোনামে কোম্পানির ব্যয় খাতে বিপুল পরিমাণ নগদ লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে। এ খাত থেকে বিভিন্ন তারিখে উত্তরা ফিন্যান্সের চেয়ারম্যান রশিদুল হাসানকে তার প্রাপ্যতাবহির্ভূত বিভিন্ন খাতে বড় অঙ্কের নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। অগ্রিম ও পরিশোধ খাতে পরিদর্শন তারিখে অর্থের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৯৯ কোটি টাকা।

    তবে বিপুল অঙ্কের এ অস্বাভাবিক লেনদেনের কোনো প্রতিফলন বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো এবং সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশিত নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে নেই। চেয়াম্যানের পাশাপাশি এমডিও দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই। কোম্পানিটির এমডি শামছুল আরেফিন ব্যবস্থাপনা ব্যয় নামে ২৪ কোটি ২২ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। এ তথ্যও ব্যাংকের আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখ নেই। আবার তার নামে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো ঋণও নেই। বিভিন্ন উপায়ে নেওয়া অর্থ এমডির গাড়ি, বাড়ি কেনা, বিদেশ ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে ব্যয় করার তথ্য পাওয়া গেছে।

    পরিচালকের প্রতিষ্ঠানের নামে ২৩৬ কোটি টাকার ভুয়া আমানতপত্র তৈরী করা হয়েছে।এক টাকাও আমানত রাখেননি, অথচ ২৩৬ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত রিসিপ্ট বা টিডিআর ইস্যু করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মুজিবুর রহমানের মালিকানাধীন ব্লু চিপস সিকিউরিটিজের নামে গত ৩১ আগস্ট এ ভুয়া টিডিআর ইস্যু করা হয়।

    পরিদর্শক দল মন্তব্য করেছে, ভুয়া টিডিআরের বিপরীতে পরিচালকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিলে তার দায়ভার উত্তরা মোটরসের ওপর এসে পড়বে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
    তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উত্তরা ফিন্যান্সের চেয়ারম্যান রশিদুল হাসান। তিনি বলেন, উত্তরা ফিন্যান্স একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন।

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ১:২৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

    bankbimaarthonity.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    রডের দাম বাড়ছে

    ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

    Archive Calendar

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০
    ১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
    ১৮১৯২০২১২২২৩২৪
    ২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
  • ফেসবুকে ব্যাংক বীমা অর্থনীতি