
বিবিএনিউজ.নেট | বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট | 627 বার পঠিত
দক্ষিণ এশিয়া থেকে জনশক্তি রফতানির অন্যতম গন্তব্য উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (জিসিসি) ছয় দেশ। তবে এসব দেশের জাতীয়করণ নীতি বিদেশীদের জন্য কাজের সুযোগ সীমিত করে আনছে। ব্যয় কমাতেও এসব দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করছে। সর্বোপরি রাজনৈতিক অস্থিরতা উপসাগরীয় দেশগুলোয় বিদেশীদের কাজের সুযোগ সংকুচিত করছে। এর মধ্যেও বেশি কমছে বাংলাদেশীদের।
অভিবাসন ও রেমিট্যান্স নিয়ে সর্বশেষ প্রতিবেদন গত সোমবার প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, ২০১৮ সালে বিদেশে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রফতানি কমেছে ৩৭ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ হার সর্বোচ্চ। গত এক বছরে ভারত থেকে শ্রমিক অভিবাসন কমেছে ১৫ ও পাকিস্তান থেকে ৩০ শতাংশ।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে কর্মসংস্থানের বিষয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি সরকার। এর আওতায় গত বছর ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে ‘নিতাকাত’ আইন। নিতাকাত শব্দের অর্থ ‘সৌদীকরণ’। এ আইন অনুসারে সৌদি আরবের বিভিন্ন বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলোয় বিদেশী শ্রমিকদের পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে সৌদি নাগরিকদেরও কাজের সুযোগ দিতে হবে। অন্যদিকে সৌদি আরবের অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যয় সাশ্রয়ে কর্মী ছাঁটাই করছে। নতুন নিয়মে দেশটি বিদেশীদের জন্য কাজের ক্ষেত্রও সীমিত করেছে। ফলে নতুন শ্রমিক নিয়োগ কমার পাশাপাশি চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন অনেক প্রবাসী।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতে, গত বছর শুধু সৌদি আরবেই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক অভিবাসন কমেছে ৫৩ শতাংশ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ ৫১ হাজার শ্রমিক কাজ নিয়ে সৌদি আরবে গেলেও গত বছর তা নেমে এসেছে ২ লাখ ৫৭ হাজারে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজারও চালু করা সম্ভব হয়নি। দেশটিতে ২০১২ সালে শ্রমিক রফতানি হয়েছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৫২ জন। এক বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালে এ সংখ্যা নেমে আসে মাত্র ১৪ হাজার ২৪১-এ। আর গত বছর দেশটিতে গেছেন মাত্র ৩ হাজার ২৩৫ জন বাংলাদেশী শ্রমিক।
জিসিসিভুক্ত আরেক দেশ কুয়েতে বর্তমানে প্রচুর নির্মাণ ও উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। তার পরও সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। বন্ধ রয়েছে বাহরাইনের শ্রমবাজারও। আর এসবই উপসাগরীয় অঞ্চলের শ্রমবাজারে জনশক্তি রফতানিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৭ সালেও কাজ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন ১০ লাখের বেশি শ্রমিক। ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩৪ হাজারে।
অদক্ষ শ্রমনির্ভর অভিবাসনের চিন্তাধারা উপসাগরীয় দেশগুলোয় বাংলাদেশীদের কাজের সুযোগ কমিয়ে দেয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) পরিচালক ড. সিআর আবরার। তিনি বলেন, বিদেশে জনশক্তি রফতানিতে এখনো অদক্ষ শ্রমিক পাঠিয়ে নিচু স্তরের চাকরিতে প্রবেশ করানোর মতো সনাতনী পদ্ধতি পালন করছে বাংলাদেশ। এ ধরনের কাজের চাহিদা দিন দিন কমছে। এ ধারা থেকে বেরিয়ে স্বল্প দক্ষ ও দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর দিকে নজর দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের হোটেল, পর্যটন, কেয়ার গিভারের মতো ক্ষেত্রে প্রচুর স্বল্প দক্ষ লোকের চাহিদা রয়েছে। এজন্য হসপিটালিটি খাতের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার প্রশিক্ষণ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে গেলে ভালো বেতনে চাকরি পাওয়া যায়। এতে রেমিট্যান্সও যেমন বাড়বে, একইভাবে চাকরির নিশ্চয়তাও তৈরি হবে। এজন্য সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে প্রচলিত ধারার বাইরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩১৭ জন বাংলাদেশী শ্রমিক, যা আগের বছর ছিল ৫ লাখ ৫১ হাজার ৩১৮ জন। একইভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন গত বছর ৩ হাজার ২৩৫ জন, যা তার আগের বছর ছিল ৪ হাজার ১৩৫ জন। ২০১৭ সালে কুয়েতে ৪৯ হাজার ৬০৪ জন শ্রমিক রফতানি হলেও গত বছর হয়েছে ২৭ হাজার ৬৩৭ জন। জনশক্তি রফতানি কমেছে ওমানেও। দেশটিতে গত বছর ৭২ হাজার ৫০৪ জন পাড়ি দিয়েছেন, যা তার আগের বছর ছিল ৮৯ হাজার ৭৪ জন। এছাড়া কাতারে গত বছর গেছেন ৭৬ হাজার ৫০৬ জন, যা তার আগের বছর ছিল ৮২ হাজার ১২ জন। বাহরাইনে গত বছর মাত্র ৮১১ জন শ্রমিক রফতানি হলেও ২০১৭ সালে গিয়েছিলেন ১৯ হাজার ৩১৮ জন।
এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, জিসিসিভুক্ত শ্রমবাজারগুলোর মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও তেমন সুফল আসেনি। আর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, যেমন লিবিয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় সেখানেও শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় বিদ্যমান শ্রমবাজারগুলো ধরে রেখে নতুন বাজার সৃষ্টির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ১৯ খাতে কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর পাশাপাশি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য পেশাজীবী খাতে কর্মী নিয়োগে আগ্রহী দেশটি। সুষ্ঠু ও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা হলে পরবর্তী সময়ে দেশটির বড় প্রতিষ্ঠানগুলোয়ও বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ শুরু হবে। তবে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ পেশাজীবীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।
Posted ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed