নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫ | প্রিন্ট | 54 বার পঠিত
ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে গার্মেন্টস শিল্প কাজ করছে। যা দেশের ফরেন এক্সচেঞ্জ আর্নিং, কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য সহায়ক শিল্পগুলোর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দেশের আর্থিক খাতও উল্লেখযোগ্যভাবে গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ওপর নির্ভরশীল।
গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম-এর নেতৃত্বে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল, বিজিএমইএ-এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান-এর সাথে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান(অব), রিচার্ড ডি রোজারিও, মিনহাজ মান্নান ইমন, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, এফসিএস, বিজিএমইএ এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইনামুল হক খান, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফাইন্যান্স) মিজানুর রহমানসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টেড কোম্পানিগুলোর মধ্যে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইলস খাতে ৫৮টি প্রতিষ্ঠান আছে। ২০২৩ সালে বিজিএমইএ-এর সঙ্গে ডিএসই’র একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়, যাতে দুটি প্রতিষ্ঠান একসাথে কাজ করে দেশের পুঁজিবাজারের উন্নতি নিশ্চিত করতে পারে।
বর্তমান বোর্ড গত বছরের অক্টোবর মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমরা চেষ্টা করছি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে একটি গতিশীল, স্বচ্ছ ও প্রাণবন্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে। আমরা চাই দেশের পুঁজিবাজার শক্তিশালী হয়ে দীর্ঘমেয়াদি মূলধনের উৎস হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্যে অবদান রাখতে পারে। আমরা অভ্যন্তরীণভাবে কর্পোরেট গভর্নেন্স ও ম্যানেজমেন্ট স্ট্রাকচার শক্তিশালী করার দিকে কাজ করছি। পাশাপাশি, রেগুলেটর, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা, লিস্টেড ও সম্ভাব্য লিস্টিং-যোগ্য কোম্পানি এবং বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও সহযোগিতা করছি। লিস্টিং প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ডিএসইকে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কাস্টমার সেন্ট্রিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। আমরা আমাদের কাজের মূল্যায়ন করি, কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করি এবং তা বাস্তবায়ন করছি। যদিও আমরা এখনো কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারিনি, আপনারা আমাদের সাহায্য, পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করলে তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা ইতিমধ্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)-এর সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং শীঘ্রই বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাথেও বৈঠক করছি। একইভাবে, আমরা আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে দেখতে চাই এবং আপনার প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট থাকব।
বিজিএমইএ-এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ব্যবসা মূলত ক্রেতার সঙ্গে সম্পর্ক মার্কেটিং ভিত্তিক। বিজিএমই-এর পক্ষ থেকে আমরা সদস্যদের জন্য যে সাপোর্ট দিই, তার মধ্যে অন্যতম হলো—ভালো ক্রেতা এবং ব্যবসায়িক অংশীদার চিহ্নিত করা, যাতে আমরা জানি কার সঙ্গে কাজ করা উচিত এবং কার সঙ্গে নয়। এভাবে, এখন আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কেউ সহজে আমাদেরকে এক্সপ্লয়েট করতে পারে না। আমাদের মূল নীতি হলো—যে কোম্পানি ভার্টিকাল বা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করে, তাদেরকে উৎসাহিত করা হবে পাবলিক লিস্টেড হতে।
বিজিএমইএ সভাপতি ডিএসই প্রতিনিধিদলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কোনো কোম্পানি ডিএসইতে তালিকাভুক্তির পূর্বে বিজিএমইএ সেই কোম্পানির জন্য একটি প্রাথমিক সার্টিফিকেট বা এনওসি প্রদান করতে পারে। এই এনওসি কোম্পানিটির যথাযথ যাচাই-বাছাই এবং এর মৌলিক ভিত্তি নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রটি আরও বড় হোক। যারা আগ্রহ প্রকাশ করবে, তাদের নিয়ে আমরা সেমিনার করার ব্যবস্থা করব। এই সেমিনার ক্যাপিটাল মার্কেট সম্পর্কে সচেতন হওয়ার এবং দীর্ঘমেয়াদি ইনভেস্টমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয়। আমাদের লক্ষ্য হলো—সদস্য ও অংশীদারদের জন্য স্বচ্ছ, কার্যকর এবং বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
ডিএসই’র পরিচালক জনাব মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, পুঁজিবাজার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। ব্যাংকিং সেক্টরের বাইরে ব্যবসার জন্য বিকল্প তহবিলের উৎস হিসেবে স্টক এক্সচেঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশে এখনো আন্তর্জাতিক মানের ভ্যালুয়েশন ও ইনভেস্টমেন্ট কাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরের রপ্তানি সম্ভাবনা ও পুঁজিবাজারের মধ্যে সুষ্ঠু সংযোগ স্থাপন করা গেলে আমরা বৈশ্বিক পর্যায়ে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব।
অতীতে অনৈতিকতা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক উদ্যোক্তা পুঁজিবাজারে অংশ নিতে পারেননি। তবে বর্তমান সরকার ও ডিএসইর নতুন বোর্ডের উদ্যোগে স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। আইপিও লিস্টিং, ক্লিয়ারিং কোম্পানি এবং অটোমেশনসহ বিভিন্ন সংস্কারের ফলে আগামী এক বছরের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে বলে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি স্বচ্ছ, শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য ক্যাপিটাল মার্কেট গড়ে তোলা, যেখানে ভালো উদ্যোক্তারা সহজে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে। আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হবে—এর জন্য সবার সহযোগিতা ও নৈতিক প্রতিশ্রুতি এখন অত্যন্ত প্রয়োজন।
ডিএসই’র পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) কামরুজ্জামান বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরে বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মরত-যারা দেশের সাধারণ জনগণেরই অংশ। যদি এই সাধারণ জনগণকেই আমরা বিনিয়োগকারীর ভূমিকায় যুক্ত করতে পারি, তাহলে এটি হবে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। এতে শুধু গার্মেন্টস শিল্প নয়, পুরো দেশের অর্থনীতিই আরও শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো গার্মেন্টস খাতে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে একা চলার নীতি আমাদের জন্য কার্যকর হবে না। সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতার মাধ্যমেই আমরা টেকসই অগ্রগতি অর্জন করতে পারব।
পরিশেষে ডিএসই’র প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, এফসিএস ডিএসই ও বিজিএমইএর মধ্যে ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে পুঁজিবাজারে গার্মেন্টস শিল্পের কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়া ও এর সুবিধা নিয়ে এসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট সেক্টরের কর্ণধারদের অংশগ্রহণে একটি সেমিনার আয়োজনের আগ্রহ প্রকাশ করেন, যেখানে মূল বাজার, এসএমই বোর্ড এবং অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) লিস্টিংয়ের সুযোগসমূহ তুলে ধরা হবে।
Posted ৮:১৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
bankbimaarthonity.com | rina sristy