
হেলাল সাজওয়াল | মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট | 140 বার পঠিত
নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মূলধন ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০২৪ এর আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে ব্যাংকটি ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে পর্যাপ্ত মূলধন রিজার্ভ বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের ঝুকিপূর্ণ দশ ব্যাংকের একটি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। তালিকায় থাকা অনেক ব্যাংকই তাদের অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এবার আরও তলানিতে নেমে এসেছে স্বৈরাচার সরকারের দোসর এস আলমের কব্জায় থাকা এই ব্যাংকটি।
পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত ব্যাংকটির ৩০ জুন সমাপ্ত অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে মোট লোকসান ১ হাজার ২শ ৭৭ কোটি টাকা। এদিকে ব্যাংকটির মোট দায় রয়েছে ৬ হাজার ৭শ ১৮ কোটি টাকা। বিপরীতে মোট সম্পদ রয়েছে ৫ হাজার ৭শ ৬৫ কোটি টাকা। ৩০ জুন তারিখে ব্যাংকটির বিনিয়োগ ২ হাজার ৪শ ৩৮ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে যা ছিল ২ হাজার ৩শ ৯৭ কোটি টাকা। এখানে বিনিয়োগ কিছুটা বাড়লেও বিপুল ব্যবধানে কমেছে বিনিয়োগ থেকে আয়। ৩০ জুন আয় হয়েছে ১শ ৮৩ কোটি টাকা সেখানে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত সময়ে এই আয় ছিল ২ হাজার ৩শ ৫৭ কোটি টাকা। দৃশ্যত বিনিয়োগ বাড়লেও ঋণের প্রায় পুরোটাই যে খেলাপি হয়ে গেছে তা অনুমান করা যায় সহজেই। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির ক্লাসিফাইড লোন ছিল ১ হাজার ২শ ৩৮ কোটি টাকা এর মধ্যে সাব স্ট্যান্ডার্ড ১১ কোটি আর ডাউটফুল ১১ কোটি টাকা, বাকি ১ হাজার ২শ ৩৮ কোটি টাকা ব্যাড লস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংটির বর্তমান অবস্থা উদ্বেগজনক। আগামিতে ব্যাংকটি টিকে থাকতে পারবে কিনা সেটি এখন সন্দেহের বিষয়।
পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকেই ব্যাংকটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সমাপ্ত বছরে এই ব্যাংকের নিট পরিচালন ক্ষতির পরিমাণ ২শ ৪৯ কোটি টাকা এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সমাপ্ত বছরের জন্য এই ক্ষতির পরিমান ছিল ১শ ৯১ কোটি টাকা।
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সমাপ্ত বছরে পুঞ্জীভূত নিট ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১শ ৪৬ কোটি টাকা। আর ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সমাপ্ত বছরে ব্যাংকের নিট লোকসানের পরিমাণ হল ২শ ৫২ কোটি টাকা এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সমাপ্ত বছরে ছিল ২শ কোটি টাকা।
এদিকে ব্যাংকটি ২০১৯ সাল থেকে শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি ঋণাত্নক হতে শুরু করেছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সমাপ্ত বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি দাঁড়িয়েছে মাইনাস (-) ৮শ ৩২ কোটি টাকা এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২২এ শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি ছিল মাইনাস (-) ৫শ ৭৯ কোটি টাকা। বর্তমানে ৩০ জুনের হিসেব অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডার ইকুইটি দাঁড়িয়েছে ৯শ ৫২ কোটি টাকা।
যদিও রাইট শেয়ার ইস্যু করে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে টিয়ার-১ মূলধন বৃদ্ধি করে ব্যাংকটিকে দাঁড় করাতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত ব্যাংকটি উচ্চহারে খেলাপি হওয়ায় নেট প্রফিট কমে যায় ব্যাংকটির ফলশ্রুতিতে কয়েক বছর যাবত লভ্যাংশ দিতে পারছেনা ব্যাংকটি। এক্ষেত্রেও ব্যাংকটির দায় রয়েছে প্রায় ৯২ কোটি টাকা।
এসকল ঘাটতি মোকাবিলায় নগদ অর্থের সংকটে থাকা ব্যাংকটিকে ঋণ পুনরুদ্ধার এবং মূলধন ইনজেকশনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা ২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির জন্য গড় খেলাপি ঋণ (এনপিএল) অনুপাত ১০% এর নিচে এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির জন্য ৫% এর নিচে নামিয়ে আনবে।
উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করে, কারণ আন্তর্জাতিক মান সাধারণত সর্বোচ্চ ৩% খেলাপি ঋণ গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে। সেখানে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের এই হার ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ছিল ৫১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
Posted ২:২২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫
bankbimaarthonity.com | rina sristy