বিবিএনিউজ.নেট | শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট | 406 বার পঠিত
দক্ষিণ এশিয়ার গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের উর্বর অববাহিকায় অসংখ্য নদী-খালবেষ্টিত এই প্রাচীন বদ্বীপ ভূখণ্ড আমাদের বাংলাদেশ। শত শত বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের এই জনপদ বিশ্ব মানচিত্রে বাঙালি জনগোষ্ঠীর একমাত্র স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। বিভিন্ন বিদেশি শত্রুর সঙ্গে লড়াই করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা এই অঞ্চলের মানুষ সর্বশেষ ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে পাকিস্তানি শাসকদের কাছ থেকে। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাংশে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক ভূখেণ্ডর জন্ম ঠিক কবে ও কীভাবে হয়েছে, তা নিয়ে গবেষক মহলে ধোঁয়াশা ছিল। অবশেষে সেই প্রশ্নের উত্তর মেলাতে চেষ্টা করেছেন ভারতের ইউনিভার্সিটি অব হায়দরাবাদসহ (ইউওএইচ) আরও বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা।
তারা দাবি করেছেন, প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে বড় আকারে হিমালয় পর্বতের মাটি বা পাথর ক্ষয়ে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রে বয়ে আসা পলি জমেই সৃষ্টি হয়েছে আজকের বাংলাদেশ ভূখণ্ড। বিশেষ এই গবেষণা প্রতিবেদনটি গত ২৫ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় বিজ্ঞান সাময়িকী ‘কারেন্ট সায়েন্স’-এর সর্বশেষ সংস্করণে প্রকাশ হয়েছে।
দ্য হিন্দু ও মুম্বাই মিরর জানায়, বিশেষ ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ২০ কোটি বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে পৃথিবীর প্রাচীন অতিমহাদেশ গন্ডোয়ানাল্যান্ড ভেঙে যখন বর্তমান মহাদেশগুলোর জন্ম হয়, তখন বর্তমান বাংলাদেশসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ অংশই ছিল বঙ্গোপসাগরের নিচে। ২ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে হিমালয় থেকে গঙ্গা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদে ভেসে আসা বিপুল পলিমাটি বর্তমানের কলকাতা শহর থেকে দূরে বিস্তৃত বঙ্গোপসাগরে জমতে শুরু করে। এই পলি জমতে জমতে সৃষ্টি হয় বিশাল এক ভূভাগ। ফলে আজকের কলকাতা এলাকা সমুদ্রের নিচ থেকে উঠে আসতে শুরু করে উপকূলে। পরে এই ভূভাগ বাড়তে বাড়তে একটি নতুন এলাকার সৃষ্টি হয়। আর এই বিশাল ভূভাগটির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে আজকের বাংলাদেশ।
গবেষণা বলছে, ওই সময় তীব্র খরস্রোতা দুই নদী গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছিল। এ কারণেও আরও পলিমাটি বঙ্গোপসাগরের তলদেশে জমা হয়ে নতুন ভূখণ্ডের জন্ম হয়। তখন কলকাতার পূর্ব দিকে একটি নতুন এলাকা গড়ে উঠতে থাকে। ফলে একটি প্রাচীন সামুদ্রিক ভিত্তি সৃষ্টি হতে শুরু করে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে, যার অর্থ হলো সাগরের তলদেশে সৃষ্টি হওয়া ওই সামুদ্রিক ভিত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে ভৌগোলিক ও জীববিজ্ঞানবিষয়ক অনেক সূত্র জড়িয়ে আছে।
বিশেষ এই গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউওএইচের সেন্টার ফর আর্থ, ওশেন অ্যান্ড অ্যাটমসফেয়ারিক সায়েন্সের প্রধান অধ্যাপক কেএস কৃষ্ণা। সঙ্গে ছিলেন ডিএসটি-ইন্সপায়ার ফ্যাকাল্টির ড. মোহাম্মদ ইসমাইল এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির (এনআইও) গবেষকরা। অধ্যাপক কৃষ্ণা বলেন, ওএনজিসি, দেহরাদুন, হিউজটনের রিচ ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় হায়দরাবাদে তারা এই গবেষণা করেছেন। এতে বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশ ভূখণ্ডের প্রাথমিক বিবর্তন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রাচীনকালে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে গড়ে ওঠা ওই সামুদ্রিক ভিত্তি ছড়িয়ে আছে কলকাতা থেকে উত্তর দিকে রাজমহল-সিলেট লাইনে, শিলং প্লেট পর্যন্ত। এই স্তরেই বঙ্গোপসাগরের তলদেশে সৃষ্টি হয়েছে প্রাথমিক সামুদ্রিক পাথরগুলো। পরে সেগুলো হিমালয় থেকে নেমে আসা গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মতো নদনদীর বহন করে আনা বিপুল পলিমাটির নিচে ঢাকা পড়েছে।
Posted ১২:৪৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed