| বুধবার, ২৩ মার্চ ২০২২ | প্রিন্ট | 263 বার পঠিত
মধুমতি নদীর তীর ঘেঁষে সবুজ শ্যামল গ্রাম গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ এই গ্রামেই জন্মেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রামটির শ্যামল-ছায়ায় দুরন্তপনায় কেটেছে বঙ্গবন্ধুর শৈশবকাল। মধুমতি নদীতে গাঁয়ের ছেলেদের সঙ্গে সাঁতার কাটা, দৌড়-ঝাঁপ, হা-ডু-ডু, ফুটবল খেলায় তিনি ছিলেন বালকদের নেতা। সেই নেতা থেকে শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বঙ্গবন্ধু থেকে বাঙালি জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস নিয়ে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন এফসিএ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ছেলেবেলাতেই শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সাক্ষাৎ বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনেরই একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তার পুরো রাজনৈতিক জীবনে এটা খুব বড় একটা টার্নিং পয়েন্ট। ১৯৩৮ সালের ঘটনা। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক তখন বাংলার প্রধানমন্ত্রী। আর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শ্রমমন্ত্রী। তারা গোপালগঞ্জে আসবেন। বিরাট সভার আয়োজন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তখন মিশন স্কুলে পড়েন। দেখতে একটু বড় হওয়ার কারণে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের দায়িত্ব পড়ল তার ওপর। সভা শেষে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেব গেলেন পাবলিক হল দেখতে আর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব গেলেন মিশন স্কুল দেখতে। বঙ্গবন্ধু দলবল নিয়ে তাকে সংবর্ধনা দিলেন এবং জানালেন, স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ার কথা। তাই তাকে ওয়াদা করে যেতে হবে যেন ছাদ শিগগিরই ঠিক করে দেওয়া হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এই তরুণ তুর্কির কথায় চমৎকৃত হলেন। এই ছেলে যে একদিন এদেশের কান্ডারী হবেন তা তিনি বুঝতে পারেন।
বীমা খাতে বঙ্গবন্ধুর সম্পৃক্ততা প্রশ্নের জবাবে ড. এম. মোশাররফ হোসেন, এফসিএ বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের বীমাখাতে সম্পৃক্ত ছিলেন, এটা যে উনি রুটি-রোজগারের জন্য তা নয়, বরং তার ইচ্ছাশক্তি ও ইন্স্যুরেন্সের পরিধিকে কাজে লাগিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেন নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারেন এবং দেশের জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পারেন, সেজন্যই তিনি এ পেশায় এসেছিলেন। কেননা তখন তার পেছনে গোয়েন্দা নজরদারি ছিল। সেজন্যই তিনি ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেছেন। এটা তার একটি সামগ্রিক চিন্তাধারা। বঙ্গবন্ধু ইন্স্যুরেন্সকে শুধু একটা কর্মক্ষেত্র হিসেবে দেখেননি, বরং দেশকে স্বাধীন করার যে চিন্তা-চেতনা তার ছিল, সে পথে এগোতে তিনি যাতে নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মিশতে পারেন, সে কারণেই ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেছিলেন। সে সুবাদে অবশ্যই আমরা এটা দাবি করতে পারি যে, দেশমাতৃকার স্বাধীনতার পেছনে বীমাশিল্পের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে।
ইন্স্যুরেন্সের আড়ালে তিনি রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে দেশের মানুষকে একতাবদ্ধ রেখেছিলেন। ফলে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়নি। কারণ তখন বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তার উপর গোয়েন্দা নজরদারি ছিল। এছাড়া ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবির খসড়া ইন্স্যুরেন্সের অফিসে বসেই তৈরি হয়েছিল তার প্রমাণ তো রয়েছেই। যে ছয় দফার জন্য তাকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে এবং কারাগারেও যেতে হয়েছে। জাতির পিতা যে কারণে বীমাকে বেছে নিয়েছিলেন বলে আমার মনে হয় তা হলো, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সচল রেখে দেশের মানুষকে মুক্তির স্বাদ অনুভব করানোর জন্য। কেননা তিনি ইচ্ছে করলে শিক্ষকতার মাধ্যমে বা কনসালটেন্সির মতো কাজ করতে পারতেন। কোনো গ্রুপ অব কোম্পানিতে যোগদান করে নিজের উন্নতি করতে পারতেন। তিনি চাইলে অন্য কোনো প্রফেশনে ভালো করতে পারতেন। কিন্তু তিনি বীমাকে পছন্দ করেছেন এ কারণে যে, সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ এবং তাদের দুঃখ-কষ্ট সরাসরি অনুধাবন করার জন্য। পাশাপাশি রাজনৈতিক সহচরদের সাথে যখন-তখন মিলিত হওয়ার সুযোগ তৈরির জন্য। কেননা আগেই বলেছি তখন বঙ্গবন্ধুকে নজরদারিতে রাখা হতো, তার পেছনে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা লেগে থাকতো এবং রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল ও কারফিউ ছিল। এর ভেতরে ইন্স্যুরেন্সকে নিয়ে জাতির পিতার যে চিন্তা তা এরকমই দাঁড়ায় যে, দেশের সব অঞ্চলের লোকদের সাথে সহজেই দেখা করতে পারেন, সেজন্যই বঙ্গবন্ধু ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেছেন। সে সময়ের বিভিন্ন রিপোর্টেও বিষয়টি উঠে আসায় আমার কাছে এমনটাই মনে হয়। কারণ সে সময় গোয়েন্দারা রিপোর্ট করতো-ইন্স্যুরেন্সের কাজে শেখ মুজিবুর রহমান এখানে-ওখানে গিয়েছেন। এতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দেশব্যাপী সকলের কাছে যেন তিনি নির্বিঘ্নে যেতে পারেন সেজন্যই ইন্স্যুরেন্সকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর বীমা পেশায় যোগদানের দিনটিকে জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক প্রধান হিসেবে যোগদান করেছিলেন। দিনটি স্মরণে ১ মার্চ তারিখে জাতীয় বীমা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত মন্ত্রী পরিষদে গৃহীত হয় যা বীমাখাতের জন্য একটি মাইলফলক। ২০২০ সালের ১ মার্চ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রথম জাতীয় বীমা দিবসের উদ্বোধন করেন। এ কারণে ২০২০ সালের পরবর্তী বছরেও জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণার পর থেকে দেশব্যাপী অর্থাৎ বিভাগীয় শহরসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আড়ম্বরপূর্ণভাবে জাতীয় বীমা দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বীমা দিবসের উদ্বোধন করেন। তিনি বীমা পরিবারের সাথে থেকে বীমা শিল্পের বিকাশে যে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন তাতে বীমাখাতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। জাতির পিতা এ সেক্টরে কাজ করেছে বিধায় আমরা জাতীয় বীমা দিবস পেয়েছি।
বঙ্গবন্ধুকে স্মরণীয় করে রাখতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ড. এম. মোশাররফ হোসেন, এফসিএ বলেন, বাঙালি ও বাংলাদেশী জনসাধারণের হৃদস্পন্দন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁকে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁর নামে আমরা যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে সেগুলো মধ্যে রয়েছে-
ক) বঙ্গবন্ধু আশার আলো বীমা দাবি পরিশোধের প্রয়াস (মৃত্যুদাবির চেক বিতরণী অনুষ্ঠান)-সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীমা পরিবারেরই একজন সম্মানিত সদস্য। এ মহামানবের হাত ধরেই স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত বীমাখাতের উত্থান এবং প্রসার ঘটেছিল। বীমা শিল্পে জাতির পিতার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ‘বঙ্গবন্ধু আশার আলো-বীমা দাবী নিষ্পত্তির প্রয়াস’ নামে একটি অনলাইন অনুষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিটি জীবন বীমাকারীর প্রদেয় মৃত্যু দাবির চেক হস্তান্তর করা হয়। ‘বঙ্গবন্ধু আশার আলো বীমা দাবি পরিশোধের প্রয়াস’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অদ্যাবধি সর্বোমোট প্রায় ৫শ কোটি টাকার মৃত্যুদাবীর চেক বীমা গ্রাহকদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
খ) বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ০১ মার্চ ২০২১ তারিখে জাতীয় বীমা দিবসে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ এর শুভ উদ্বোধন করেন। মাতা/পিতা/আইনগত অভিভাবকের মৃত্যু বা দুর্ঘটনাজনিত সম্পূর্ণ এবং স্থায়ী অক্ষমতা/পঙ্গুত্বের ক্ষেত্রে সন্তানের লেখাপড়া যেন বন্ধ না হয় সে বিষয়ে বিবেচনায় রেখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক শিক্ষার্থীদের বীমার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ এর আওতায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি ও মাদ্রাসা (মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত) শিক্ষার্থীরা অন্তর্ভুক্ত।
গ) কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন-মুজিব বর্ষে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে সংশ্লিষ্ট বইসমূহ নিয়ে লাইব্রেরিসহ দৃষ্টিনন্দন ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ স্থাপন করা হয়েছে।
ঘ) বঙ্গবন্ধু বীমা ভবন-কর্তৃপক্ষের স্থায়ী কার্যালয়ের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু বীমা ভবন’ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গ) বিভিন্ন বীমা পরিকল্প বাস্তবায়ন-‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ ছাড়াও ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু স্পোর্টস ম্যানস কম্প্রিহেনসিভ ইন্সুরেন্স’ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আবার ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ এর বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষসহ সকল বীমা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু বীমা পুরস্কার,’ ‘বঙ্গবন্ধু বীমা বৃত্তি’ এবং ব্যাংকাসুরেন্স চালুর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে গৃহিত পদক্ষেপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ড. এম মোশাররফ হোসেন এফসিএ বলেন-বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বীমা খাতে অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ভার্চুয়ালি ও সরাসরি বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করে থাকি। এছাড়া বীমাখাতে বঙ্গবন্ধু জীবনী শিশুদের জানানো জন্য বিশেষ আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করাসহ শিশুদের রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ পতাকা উত্তোলন ও দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বীমা খাতের সকল কোম্পানির অফিস গুলোতে আলোকসজ্জ্বা করা হয়।
Posted ১:৪৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৩ মার্চ ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy