বিবিএ নিউজ.নেট | ১৬ নভেম্বর ২০২১ | ৭:১৩ অপরাহ্ণ
বীমা খাতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশনার অপেক্ষায় না থেকে সতর্কভাবে দায়িত্বশীলতার সাথে ক্যামেলকোদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের (বিআইএফ) প্রেসিডেন্ট বিএম ইউসুফ আলী।
সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত বীমা খাতের ক্যামেলকোদের দুইদিন ব্যাপী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন আব্দুল্ল্যাহ হারুন পাশা, অতিরিক্ত সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; মো. মাসুদ বিশ্বাস, বিএফআইইউ চীফ (চলতি দায়িত্ব); মঈনুল ইসলাম, সদস্য (প্রশাসন) আইডিআরএ; এবং মো. মামুনুর রশীদ, জেলা প্রশাসক (কক্সবাজার)। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইডিআরএ, ব্যাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ এবং বীমা কোম্পানিগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
ক্যামেলকোদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানিলন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়ে বিএম ইউসুফ আলী বলেন, বিআইএফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে সকল মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সিএফও এবং ক্যামেলকোদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা সতর্ক হবেন। আমরা নিজেরাই যেন সতর্ক হতে পারি; বিএফআইইউ’র থেকে যেন বলতে না হয় আপনারা এটা করেন, ওটা করেন। আমরা নিজেরাই সতর্ক হবো।
তিনি বলেন, বীমা সেক্টরে সাম্প্রতিক মানিলন্ডারিংয়ের ঘটনা আমাদের খুবই হতাশ করেছে। একটা সময় আমরা খুব বড় মুখ করে বলতাম, বীমা খাতে মানিলন্ডারিংয়ের কোন সুযোগই নেই। কিন্তু এখন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক প্রচার মাধ্যমে জানতে পারছি এখানেও মানিলন্ডারিং হচ্ছে। অতএব, বিষয়টি নিয়ে আমাদের যথেষ্ট শক্ত ও কঠোর হতে হবে। আমাদের যারা সিইও, সিএফও এবং ক্যামেলকো আছেন তারা আমাদের বোর্ডের সাথে আলোচনা করে শক্ত ব্যবস্থা নিবেন।
দাবী পরিশোধেও মানিলন্ডারিং’র সুযোগ থাকে জানিয়ে পপুলার লাইফের এই সিইও বলেন, মৃত্যু দাবী, মেয়াদোত্তীর্ণ দাবীর ক্ষেত্রেও কিন্তু মানিলন্ডারিং হতে পারে। এগুলো আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। তাই আমার কোম্পানির ক্ষেত্রে আমি এ বিষয়ে কঠোর হয়েছি এবং আপনাদেরকেও সতর্ক করার অনুরোধ করছি।
বীমা খাতের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে ভয়াবহ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, সর্বশেষ কয়েকটি ঘটনার পরে আমার মধ্যেও এখন ভয় কাজ করে। এই যে এতো কাজ করছি, কোনটা ভুল হয়ে যায়, কোনটার কারনে আটকে যাই বলা যায় না। সুতরাং আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো, আরো সতর্ক হয়ে কাজ করার জন্য।
মাদক ব্যবসা মানিলন্ডারিংয়ের অন্যতম প্রধান কারণ উল্লেক করে তিনি বলেন, আজ যেখানে প্রোগ্রাম হচ্ছে এই কক্সবাজার টেকনাফ হচ্ছে মাদকের প্রধান রুট। এই বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যারা বীমা করছেন, দেখা যায় হঠাৎ এক কোটি টাকার একটা পলিসি করছেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই তার কেওয়াইসি তথ্য আমাদের নিতে হবে, সার্বিক খোঁজ খবর জানতে হবে। এক কোটি টাকা সে কেন বিনিয়োগ করবে বীমায়? এক কোটি টাকা অন্য কোথাও বিনিয়োগ করলে তো সে আরো লাভবান হবে। বীমাতো বাংলাদেশে এখনও এতোটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এখানে কোন কিছু ঘটছে কিনা? যদি আমরা খেয়াল করতে পারি, তাহলে বুঝতে পারবো, ধরতে পারবো। কারণ আর যদি দুই একটা ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে কিন্তু আমাদের বীমা সেক্টরে বড় ধরনের সমস্যা হবে। তখন সেক্টর সামাল দেয়া মুশকিল হয়ে যাবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া তুলতে সবাইকে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে হবে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে কোন অবস্থা থেকে কোথায় নিয়ে গেছেন তা আমরা সকলেই দেখতে পাচ্ছি। বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে হয়তো আমাদের এখানেও দাম বেড়েছে, কিন্তু কেউ কি না খেয়ে আছে? আজ পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হলে আমরা কিন্তু ইউরোপ আমেরিকা থেকে বেশি পিছিয়ে থাকবো না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এই সেক্টরের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সেক্টরকে নিজের পরিবার মনে করেন। তাই বীমার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি।
আইডিআরএ’র নেতৃত্বে এবং আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আসুন বীমা সেক্টরকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাই। দেশের অর্থনীতিতে বীমা খাত যেন আরো অবদান রাখতে পারে, সকলের প্রতি সেই আহবান রাখছি।
বাংলাদেশ সময়: ৭:১৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy