• বিটিআরসি-গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্ব পুঁজিবাজারের বিরূপ প্রভাব

    বিবিএনিউজ.নেট | ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

    বিটিআরসি-গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্ব পুঁজিবাজারের বিরূপ প্রভাব
    apps

    বকেয়া ইস্যুতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্ব পুঁজিবাজারের স্ট্রাকচার (কাঠামো) ধ্বংস করেছে। এমনটাই মন্তব্য করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন।

    বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) অফিস এবং ওয়েবসাইট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

    Progoti-Insurance-AAA.jpg

    বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘যখন রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বললেন, বিনিয়োগ করতে হলে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন-টিন) লাগবে, তখন থেকে পুঁজিবাজারে পতনটা শুরু হয়েছে। আমরা যখন তার ভুল ভাঙালাম, তারপর এটি সংশোধন হলো। তার দু-তিনদিন না যেতেই গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিটিআরসির সমস্যা শুরু হলো। এটা শুধু বিটিআরসি বা গ্রামীণফোনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, আমার মার্কেটের স্ট্রাকচারকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।’

    এ দ্বন্দ্ব কীভাবে মার্কেটের স্ট্রাকচার ধ্বংস করেছে তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা যখন আসে ওরা ফান্ডামেন্টাল শেয়ার দেখে আসে। গ্রামীণফোনের পাশাপাশি ওরা অলিম্পিক, ইউনাইটেড পাওয়ার ও স্কয়ার ফার্মা কিনেছে। তারা সব বিক্রি করে যাচ্ছে। গ্রামীণফোনের সঙ্গে ওরা স্কয়ার ফার্মা, ইউনাইটেড পাওয়ার, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ার বিক্রি করেছে।’


    পাঁচ কোম্পানি তথা- স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ইউনাইটেড পাওয়ার এবং অলিম্পিক পুঁজিবাজার পতনের ৮০ শতাংশ কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বিগত দুই মাসে সূচক ৩৬৪-৩৬৫ পয়েন্ট পড়েছে। এর মধ্যে ২৮০ পয়েন্টই পড়েছে স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোন ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর কারণে।’

    খায়রুল হোসেন বলেন, ‘বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে গেলে যে প্রেশার থাকে, তা বাজার নিতে পারে না। বিদেশিরা কোন হাউজ থেকে বিক্রি করে? সূচকের ওপর বড় বড় প্রভাব আছে এমন শেয়ার বিক্রি করে। সেখানে (ব্রোকারেজ হাউজ) যত বিনিয়োগকারী আছে তারা ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। অর্থাৎ একটাকে দেখে আরেকটা প্রভাবিত হয়। এটি একটি সাইকেলের মতো কাজ করে।’

    বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘একটি রিউমার বাজারে আছে, টাকার ডিভেল্যুয়েশন হবে বাংলাদেশে। অর্থমন্ত্রী পরিষ্কার করে দিয়েছেন, টাকা ডিভেল্যুয়েশন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, উনি বলেছেন টাকার ডিভেল্যুয়েশন হবে না। কারণ ডিভেল্যুয়েশন করলে রফতানিকারকরা উপকৃত হবেন, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে।’

    তিনি বলেন, ‘টাকার ডিভেল্যুয়েশন হবে না, এ বিশ্বাস যদি আমাদের মাঝে ফিরে আসে তাহলে বাজার ভালো হবে। কারণ বাংলাদেশের মার্কেটের মতো এত রিটার্ন কোথাও নেই। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ফিরে আসতে চান।’

    খায়রুল হোসেন বলেন, ‘এখন একটা কথা প্রায় বলা হয়, মানি নাই, তাই বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে। বিগত ৯ মাস কোনো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) নেই, তাহলে বাজার কেন পড়ে যাচ্ছে? পৃথিবীর কোনো দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ গ্যারান্টি দেবে না। সারা বছর একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম ফেস ভেল্যুর ওপর থাকবে। একমাত্র দেশ বাংলাদেশ, যেখানে আইপিওতে আসা প্রত্যেকটি কোম্পানির শেয়ার দাম লেনদেনের শুরুতে ফেস ভেল্যুর ওপরে থেকেছে।’

    এ সময় পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়েও সমালোচনা করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমরা বলি নাই, আপনারা (ব্যাংক) এক্সপোজার লিমিটেডের ওপর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু এক্সপোজার লিমিট যেটুকু আছে, সেটুকু করেন। মার্কেটের পাশে তো দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আইন করেছে, ব্যাংককে তিন বছরের মধ্যে আইপিওতে আসতে হবে। এখন ঘোষণা দেয়া হয়েছে ২৭টি বীমা কোম্পানিকেও বাজারে আসতে হবে।’

    ‘ওরা আসলে আমাদের কী লাভ? ওরা এসে টাকা উঠিয়ে যদি এফডিআর করে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে, তাহলে পুঁজিবাজারের স্বার্থে আমরা কেন এগুলো দেব? অথচ সরকারের কোম্পানি আমরা আনতে পারছি না। আমরা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আনতে পারছি না’ বলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।

    তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোথায় ২ শতাংশ (কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালককে কমপক্ষে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করা), ৩০ শতাংশ (কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করা) আইন নেই। আমরা এটা কেন করলাম? আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর দেখলাম, ৯০ শতাংশ মালিক চলে গেছেন। বিভিন্ন কলাকৌশল করে শেয়ারের দাম ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তারা চলে গেছে। অন্তত তারা যেন শেয়ার বাই-ব্যাক করে, এ চিন্তা করে পৃথিবীর কোনো দেশে না থাকার পরও একটি আন-পপুলার সিদ্ধান্ত আমরা নিই।’

    সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে খায়রুল হোসেন বলেন, ‘সাংবাদিকরা একদিকে যেমন সমাজের দর্পণ, অন্যদিকে তাদের লেখুনি (লেখা) যেকোনো তলোয়ারের থেকেও শক্তিশালী। কাজেই তাদের যেকোনো লেখুনি বস্তুনিষ্ঠ হবে। এতে সমাজ ও দেশ উপকৃত হবে।’

    সিএমজেএফ’র সভাপতি হাসান ইমান রুবেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, স্বপন কুমার বালা, কামারুজ্জামান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান, মিনহাজ মান্নান ইমন, ডিবিএ সভাপতি শাকিল রিজভী, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান প্রমুখ।

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ১০:২২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯

    bankbimaarthonity.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    Archive Calendar

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫১৬
    ১৭১৮১৯২০২১২২২৩
    ২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
  • ফেসবুকে ব্যাংক বীমা অর্থনীতি